পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নামে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবি
Published: 24th, September 2025 GMT
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) নেতা ও সদস্য পরিচয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবি করেছে একটি চক্র। এ সময় পরিবারের ক্ষতিসহ তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।
চাঁদার দাবিতে হুমকি পাওয়া শিক্ষকরা সবাই সনাতন ধর্মালম্বী। এদের মধ্যে দুজন বিকাশের মাধ্যমে চাঁদার টাকাও পরিশোধ করেছেন। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি গোপন রেখেছেন তারা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, অপরিচিত কিছু ব্যক্তি নিজেদের উক্ত সংগঠনের সদস্য পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশ ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অনেক সময় সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের যেকোনো প্রকার চাঁদার দাবিকে অগ্রাহ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানার তারা।
মিরপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়শ্রী পাল বলেন, “শনিবার সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আবীর হোসেন পরিচয় দেন। আমার এবং আমার পরিবার সম্পর্কে তিনি সবকিছু জানেন বলে জানান। এরপর তার নেতা আট জেলার প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই ব্যক্তি চাঁদা দাবি করেন এবং না দিলে পরিবারের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন।”
একই নম্বর থেকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফোন আসে স্থানীয় মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিভাস কুমার পালের কাছে। তার কাছেও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয়ে চাঁদা দাবি করা হয়।
বিভাস কুমার পাল বলেন, “পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান পরিচয় দিয়ে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হয়। ভয়ে পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠাই। টাকা পাঠানোর পরও বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে আরো টাকা দাবি করে হুমকি অব্যাহত রেখেছে।”
বিভাস কুমার পাল আরো বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাতিয়ান আব্দুর রাফেত বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গোপাল দেবনাথের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। ঠিক তখন তার কাছেও ফোন আসে। নম্বরটি একই হওয়ায় তিনি আর ফোন ধরেননি। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক উত্তম দেবনাথের কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়। তিনিও নিরাপত্তার কথা ভেবে রাত ৮টার দিকে তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন। মনে হচ্ছে আমরা কোন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছি। থানায় এ ব্যাপারে এখনও কোন অভিযোগ দেইনি। তবে সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।”
কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশেপাশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয় ব্যবহার করে এই চাঁদাবাজি করছে।”
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। চাঁদার দাবি অগ্রাহ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।”
র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুদীপ্ত সরকার বলেন, “ব্যাপারটি মৌখিকভাবে জেনেছি। যে সকল নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে তার লোকেশন মাদারীপুর জেলা দেখাচ্ছে। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাই ভুক্তভোগীদের আরো সচেতন হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে র্যাব কাজ করছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকাত-মহাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
সুন্দরবনে দস্যুতা ফিরে আসা শুধু জীবিকার জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জন্য হুমকি নয়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া মহাপ্রাণ বনটির প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের জন্যও অশনিসংকেত। ডাঙার মহাজন কোম্পানি ও বনের ডাকাতদের যৌথ চক্র এক বছরের মধ্যে যেভাবে বন ও বনজীবীদের অশেষ দুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছে, তা আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা ও ভঙ্গুরতার মূর্ত প্রতীক।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার সুযোগে সুন্দরবনে দস্যুতার প্রত্যাবর্তন হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩২টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন ডাকাতমুক্ত হয়েছিল। ফলে অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, মাছ লুট, জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করার মতো অপরাধের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা। বর্তমানে ছোট–বড় অন্তত ১৪টি বাহিনী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের নদীতে তাদের ভাসমান আস্তানা গড়ে উঠেছে। জেলে, মৌয়াল, কাঁকড়া সংগ্রহকারীসহ বনজীবীরা তাদের হাতে অসহায়ভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চাঁদা আর মুক্তিপণ দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার।
সুন্দরবনে কার্যত এখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ শূন্যের কোঠায়। কেননা বনদস্যুদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা বনরক্ষীদের নেই। কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর টহল ও নজরদারিও অপ্রতুল। ফলে সুন্দরবনে এখন বনদস্যুদের সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর লোকালয় থেকে এ কাজে তাদের সহায়তা করছেন ‘মহাজন কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত মহাজনেরা। তাঁরাই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডাকাতদের সঙ্গে বনজীবীদের বন্দোবস্ত করে দেন। আবার তাঁরাই দর-কষাকষি করে জিম্মি বনজীবীদের মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এই ‘উপকারে’ বনজীবীরা ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে একধরনের আধুনিক দাসতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করি।
দস্যু ও ‘মহাজন কোম্পানির’ যে সমান্তরাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাতে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এবার অবৈধ জাল ব্যবহার করে ও নির্বিচার বিষ ছিটিয়ে মাছ শিকার কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া আগের মতো মিলছে না। জলজ প্রাণী দেদার মারা পড়ায় সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানে স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। আবার বিষে মারা যাওয়া মাছ, কাঁকড়া খেয়ে নাগরিকেরাও স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বনদস্যুরা অবাধ হরিণ নিধন করেও সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বনদস্যুমুক্ত সুন্দরবন আবারও ডাকাতদের অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়া যারপরনাই উদ্বেগজনক। আত্মসমর্পণকারী ডাকাতদের একটা অংশ আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায়নি। তারা যেন দস্যুবৃত্তিতে ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য যে প্রশাসনিক ও সমাজভিত্তিক নজরদারি দরকার ছিল, সেটাও যে নেই, তারও প্রমাণ এ ঘটনা। ফলে শুধু ঘটা করে আত্মসমর্পণ করানোই যে যথেষ্ট নয়, এই শিক্ষাটাও নেওয়া প্রয়োজন।
সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এবং বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত করতে বনদস্যু মুক্ত করার বিকল্প নেই। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বনরক্ষীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডাকাতদের হাতে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।