পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কথা নাকচ করে দিলেন খামেনি
Published: 24th, September 2025 GMT
তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা করবে না। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনাকে ‘সম্পূর্ণ নিষ্ফল চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে এ মন্তব্য করেন।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কূটনৈতিক আলোচনা চলার মধ্যে এ মন্তব্য করলেন খামেনি।
আরও পড়ুনইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল মঙ্গলবার খামেনির এ বক্তব্যের আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দেশ তিনটিকে একত্রে ‘ই থ্রি’ বলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাসের সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি। ইরানের ওপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা) কখন ও কীভাবে আবার কার্যকর হবে, সেটি ছিল এ আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। কয়েক দিনের মধ্যে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা।
ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেওয়া হবে না। দেশটি বিশ্বের ‘এক নম্বর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক’।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টইরান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করা কূটনীতিকদের জন্য বড় সমস্যা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেওয়া হবে না। তিনি তেহরানকে ‘বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত ইরান, পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হবে না: পেজেশকিয়ান২৩ জুলাই ২০২৫আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আলোচনার ফলাফল ঘোষণা করেছে। ফলাফল হবে, তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা। এটি কোনো আলোচনা নয়। এটি একটি নির্দেশ, একটি আরোপ করা বিষয়।
ইরানকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির এক প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করার কয়েক দিন পর খামেনি এ মন্তব্য করলেন।
ইরানকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির এক প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করার কয়েক দিন পর খামেনি এ মন্তব্য করলেন।ই থ্রি তেহরানকে তার পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির তুলনায় ৪০ গুণের বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করা। ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে সই করা ‘দ্য জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)’ চুক্তির মাধ্যমে দেশটির পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষা সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আলোচনার ফলাফল ঘোষণা করেছে। ফলাফল হবে, তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা। এটি কোনো আলোচনা নয়। এটি একটি নির্দেশ, একটি আরোপ করা বিষয়।আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে তাঁর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি অনুযায়ী ইরানের বিরুদ্ধে ওই নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করলেও সেটি অব্যাহত রেখেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলো জানিয়েছে, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় ফেরে, জাতিসংঘের নিরীক্ষকেরা তার পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারেন এবং তেহরান ৪০০ কেজির (৮৮০ পাউন্ড) বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেয়, তবে শাস্তি থেকে অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব।
আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প২৫ জুন ২০২৫গতকাল সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল বলেন, এটি বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি।
ইউরোপীয় দেশগুলো জানিয়েছে, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় ফেরে, জাতিসংঘের নিরীক্ষকেরা তার পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারেন এবং তেহরান ৪০০ কেজির (৮৮০ পাউন্ড) বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেয়, তবে শাস্তি থেকে অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব।শাস্তি এড়াতে ইউরোপীয় কূটনৈতিক দল ইরানের পক্ষ থেকে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়। ইইউ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেন, ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সুযোগ আছে। সময়সীমা চলছে, দেখা যাক। ইরানের পক্ষ থেকেও কিছু বাস্তব কর্মকাণ্ড দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ তীব্র না হয়ে থেমে গেল কেন২৬ জুন ২০২৫আরও পড়ুনইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী২৭ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন য ক তর ষ ট র ক টন ত ক পদক ষ প ইউর প য় পরর ষ ট ইউর ন য ফল ফল করল ন
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের আবারও বিক্ষোভ, হুঁশিয়ারি
প্রকৌশলীদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকারসংক্রান্ত তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আজ শনিবার তাঁরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে রুয়েট থেকে বের হয়ে তালাইমারী মোড়ে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন।
বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের তালাইমারী মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে সমাবেশ শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও সরকার বারবার আশ্বাস দিয়েও কোনো সমাধান দেয়নি। এর আগে রাজধানীমুখী লংমার্চে পুলিশি বাধার মুখেও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। তখন চাপের মুখে সরকার একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবির মুখে নতুন করে ছয় সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। নতুন এই কমিটির কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। আগের কমিটির সুপারিশ ৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশের সময়সীমা দেওয়া হলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
সমাবেশে পুরকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব হোসেন বলেন, ‘প্রকৌশলীদের দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে। পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং অযৌক্তিক বৈষম্য দূর করতে প্রণীত সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা তালাইমারী মোড়ে অবস্থান নিয়ে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী প্রকৌশলী (নবম গ্রেড) পদে নিয়োগ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে হতে হবে, কোনো প্রমোশন কোটা থাকবে না। উপসহকারী প্রকৌশলী (দশম গ্রেড) পদে শতভাগ ডিপ্লোমা কোটা পরিহার করে বিএসসি ডিগ্রিধারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবে না।