কুমিল্লায় সড়কে ভাসমান দোকানের দাপট, যানজটে নাভিশ্বাস নগরবাসীর
Published: 24th, September 2025 GMT
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে রাণীরবাজার পর্যন্ত সড়কটি শহরের অন্যতম ব্যস্ত পথ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। এই সড়কের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল করে বসেছে ভাসমান দোকান। এতে যানজট আরো বেড়েছে।
ফুটপাত থেকে সড়কের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভ্যানগাড়ি, ফল-সবজির পসরা ও দোকানের মালপত্র রাখা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিকশার স্থায়ী ভিড়। ফলে পুরো এলাকা এখন অস্থায়ী রিকশা স্ট্যান্ডের মতো হয়ে গেছে।
সরেজমিনে রাণীরবাজার এলাকায় দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি সারি ভ্যানগাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। মাটিতে সবজি সাজানো এবং দোকানের মালপত্র ফুটপাতে ফেলে রাখা। এরই সঙ্গে যাত্রী ওঠানোর উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য রিকশা। সব মিলিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব। এটি যেন সড়ক নয়, কোনো কাঁচা বাজার। অথচ প্রতিদিন চলাচলের জন্য কয়েক হাজার মানুষ এই সড়কের ওপরই নির্ভরশীল।
এই পথের ওপর নির্ভরশীল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিসিক শিল্প এলাকার ট্রাক, অশোকতলা, বাগিচাগাঁও, তালপুকুরপাড় ও ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দারা। আশপাশের কয়েকটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
পথচারী ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে যাওয়ার সময় পাঁচ মিনিটের পথও কখনো কখনো আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লাগে। অনেকে হেঁটেই স্কুল বা অফিসে পৌঁছাতে বাধ্য হন। যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষদের অফিসে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ক্রেতা সঙ্কটে পড়েছেন তারা। যানজটের কারণে ক্রেতারা দোকানে প্রবেশ করতে চান না। ফলে ব্যবসায়ও ক্ষতি হচ্ছে।
সড়ক ব্যবস্থাপনায় আরো সমস্যা সৃষ্টি করছে ট্রাক চলাচল। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিসিক শিল্প এলাকার ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সারাদিনই বড় ট্রাক চলাচল করছে এই সড়ক দিয়ে। একবার ট্রাক উঠলেই পুরো সড়ক কার্যত অচল হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে গাড়িচালক পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন।
নগরবাসী অভিযোগ করছেন, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়েছে। নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান ও আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না হলে কান্দিরপাড় থেকে রাণীরবাজার পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক শাহ আলম বলেন, “সড়ক দখল করে কোনো ভাসমান দোকান বসানো হবে না। শিগগিরই সরেজমিন পরিদর্শন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
ঢাকা/রুবেল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই সড়ক সড়ক র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে অবিরাম বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী
রাজধানী ঢাকায় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে হাজারীবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও মোহাম্মদপুরে সড়কজুড়ে হাঁটুপানি জমে আছে। যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।
সকালবেলা অফিস ও স্কুলগামীদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। অনেক জায়গায় সিএনজি, বাস এমনকি রিকশাও চলেনি। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন অনেকে।
পুরান ঢাকার সুরিটোলা থেকে গুলিস্তান অভিমুখে হাঁটতে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুমন হোসেন বলেন, সকাল ৮টায় বের হয়েছিলাম। ৯টা বাজলেও রাস্তায় কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। সুরিটোলা গলিতে হাঁটুপানি, আশপাশে থেমে থাকা গাড়ির লাইন। শেষমেশ জুতা হাতে নিয়ে পানি মাড়িয়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করি। ভিজেই অফিসে পৌঁছাতে হলো।
ধানমন্ডি থেকে মতিঝিলগামী ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ বলেন, আমাদের এই রাস্তা দিয়ে একটিমাত্র বাস মতিঝিল যায়। কিন্তু আজকে বাসা থেকে ঠিক সময়ে বের হতে পারিনি। যার জন্য বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিএনজি নিয়েছি। টানা বৃষ্টিপাতে সবারই সমস্যা হচ্ছে। তবে একটি বিষয় ঢাকার বায়ু মান ভালো হয়েছে।
এদিকে স্কুলগামী শিশু ও তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন ভোগান্তিতে। রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব আহসান বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি ক্লাসে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির জন্য একেবারে ভিজে গিয়েছি। তারপরও ক্লাসে যেতে হচ্ছে কারণ আজকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা আছে। এই বৃষ্টিতে ছাতা কাজ করে না। আর রাস্তা জলাবদ্ধতায় কারণে যানজট বেশি।
ধানমন্ডি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম আক্তার এর অভিভাবক আয়েশা আক্তার বলেন, আজকে বৃষ্টির জন্য আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। আমরা মা মেয়ে দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছি। বৃষ্টি হলে তো আর পড়ালেখা বন্ধ থাকবে না। তাই সামান্য ভোগান্তি হলেও সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে।
এদিকে, রাস্তায় বাস কম থাকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। মোহাম্মদপুর থেকে আজিমপুরগামী যাত্রী সোহরাব হোসেন বলেন, আজিমপুর যাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থেকে আগে একটি বাস ছিল কিন্তু সেটিও পাইনি। সাইন্সল্যাব নেমে তারপর আজিমপুর যেতে হয়েছে। আর বাস চালকরা এখন বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
সিটি কলেজ থেকে সচিবালয়গামী যাত্রী সুমন সিকদার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, আজকে রাস্তায় বাস কম। তাই বাসে ঠাসাঠাসি ভিড়। অনেক সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পরও বাস পাইনি। যাদের টাকা আছে এবং জরুরি তারা অনেকেই বাধ্য হয়ে রিকশা বা সিএনজিতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গন্তব্যে যাচ্ছে।
জলবদ্ধতায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের কাজেও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে। রাজধানীর হাজারীবাগের ভাসমান সবজি বিক্রেতা শামীম মিয়া বলেন, আমাদের বিক্রি হয় সাধারণত সকালের সময়। কিন্তু আজকে রাস্তায় পানি থাকার কারণে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি। যার জন্য স্বাভাবিক দিনে তুলনায় আজকে আমাদের বিক্রি অনেক কম হয়েছে। তাই আজ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।
জিগাতলার রাস্তায় আরেক ভাসমান সবজি বিক্রেতা হাসিব মোল্লা বলেন, বৃষ্টির জন্য আজকে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ এই সময়ে আমার ভ্যানের অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আজকে সেভাবে বিক্রি করতে পারিনি। আর এখন বিক্রি করার সময়ও শেষ। এছাড়া কিছু কিছু সবজি আছে বৃষ্টি জন্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই কম দামে ছেড়ে দিয়েছি।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকায় জলাবদ্ধতা এখন মৌসুমি দুর্যোগ নয়, বরং একটি নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা।
নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি তাহসিন রহমান বলেন, ঢাকায় প্রতি বছর একই চিত্র আমরা দেখি। কারণ, আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল, অপরিকল্পিত এবং রক্ষণাবেক্ষণহীন। পুরনো নালা-নর্দমাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন আবাসন গড়ে উঠছে জলাধার ভরাট করে। ফলে সামান্য ভারি বৃষ্টি হলেই পানি নামার পথ থাকে না।
তিনি বলেন, এখনই প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও আধুনিক পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনা, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং জলাধার রক্ষার সুনির্দিষ্ট নীতি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের দিকে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঢাকা/এএএম/রায়হান/ফিরোজ