বাংলাদেশ দর-কষাকষির দক্ষতা বাড়াতে পারেনি
Published: 24th, September 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, বাণিজ্য-সংক্রান্ত চুক্তির জন্য আলোচনা ও দর-কষাকষির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষতা বাড়াতে পারেনি; বরং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য-সুবিধা পেয়ে আসছে। এতে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে।
আজ বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। শুল্ক চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ কীভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারে, তা নিয়ে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো এলডিসিতে যোগ দেয়নি। এর পরিবর্তে তারা শুরু থেকেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও দক্ষ ট্রেড নেগোসিয়েশন টিম গড়ে তুলেছে। আমরা (বাংলাদেশ) সেটা করিনি। বাণিজ্য আলোচনায় আমাদের দক্ষতা কম। এ কাজে সরকারের ওপরই অত্যধিক নির্ভরশীল থাকতে হয়।’
এলডিসি উত্তরণ পেছানো সহজ কাজ হবে না বলে জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন অনেকেই এলডিসি উত্তরণ পেছানোর কথা বলছেন। কিন্তু বিষয়টি শুধু সরকারের হাতে নেই। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয়। সেখানে ১৯৩টি দেশের মধ্যে আমাদের অন্তত ৯৭টি দেশের সমর্থন (ভোট) লাগবে। এটা এত সহজ নয়। কারণ, অন্য দেশগুলো আমাদের সুবিধার জন্য কেন ভোট দেবে? আমরা এলডিসির সর্বাধিক সুবিধা ভোগ করি। এ নিয়ে অন্য দেশগুলো আমাদের ঈর্ষা করে। তাই আমাদের বাস্তবধর্মী হতে হবে।’
ডব্লিউটিওর নিয়ম না মেনে কোনো দেশের সঙ্গে একতরফা শুল্ক বা অশুল্ক বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। আমাদের কিছু এফটিএ, কিছু পিটিএ ও কিছু ইপিএ আলোচনা চলমান রয়েছে। বিশেষ করে এলডিসি উত্তরণের আগে বা পরে দেশের বাজার রক্ষা করতে আমাদের এসব চুক্তি করতে হবে।—মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্যসচিবআনিসুজ্জামান চৌধুরী জানান, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী পরিবর্তনের সময় অনেক শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের জন্য নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে হবে। সরবরাহ, জ্বালানি, বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ প্রভৃতি খাতে দ্রুত সংস্কার আনতে হবে। পাশাপাশি কর-জিডিপি অনুপাতও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমানো বা মজুরি বাড়ানোর মতো পদক্ষেপগুলো শুরুতে বাড়তি খরচ মনে হলেও তা পরে উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সার্বিক বিষয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা প্রায়ই সরকারকে সব দোষ দিই, কিন্তু নিজেরা সহযোগিতা করি না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো ঔপনিবেশিক মানসিকতায় আটকে আছে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার বসানো, জাতীয় সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালুসহ সংস্কারের সফল উদাহরণ আছে।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বহুপক্ষীয় বিশ্বে কাজ করছি। ফলে ডব্লিউটিওর নিয়ম না মেনে কোনো দেশের সঙ্গে একতরফা শুল্ক বা অশুল্ক বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের কিছু এফটিএ, কিছু পিটিএ ও কিছু ইপিএ আলোচনা চলমান রয়েছে। বিশেষ করে এলডিসি উত্তরণের আগে বা পরে দেশের বাজার রক্ষা করতে আমাদের এসব চুক্তি করতে হবে।’
উদাহরণ দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের মোটরযানকে আমরা শুল্কমুক্ত করি, তাহলে জাপানও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সুবিধা ভোগ করবে। এটাই নিয়ম। আমরা নিয়মভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাস করি। তাই নিয়মের বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়। এটাই আমরা বোঝাতে চেষ্টা করেছি এবং আংশিক সফল হয়েছি। এ ছাড়া যেকোনো পক্ষ চাইলে ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে শুল্ক চুক্তি থেকে বের হতে পারবে। এটি আমরা শুল্ক চুক্তির খসড়ায় যুক্ত করতে পেরেছি। এটিও বাংলাদেশের বড় সাফল্য।’
বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রসুল ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান।
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে অনেক ব্র্যান্ড চীন থেকে তাদের উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে। নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের সামনে এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এ নিয়ে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ইনামুল হক খান আরও বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতারা পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, ট্রেসেবিলিটি ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এসব বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশ এখনো তুলা থেকে তৈরি সুতার ওপর ৭০ শতাংশ নির্ভর করে। কিন্তু বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে হলে কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহারও বাড়াতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আম দ র এলড স
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাক্সিম গোর্কির আবাসস্থলে
মস্কোর আকাশে আজ মেঘ ঘনিয়েছে। সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। এমনিতে গরমকাল, তবে বৃষ্টি পড়ার কারণে ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসছে। মস্কোতে আমার দিনগুলো উড়ে উড়ে পার হয়ে যাচ্ছে। অল্প দিন হাতে আছে রাশিয়ায়। এর মাঝে কত কিছু যে দেখার বাকি!
আমি এসেছিলাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বাড়িতে। রাশিয়ার বিখ্যাত এই লেখক পাঁচবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েও পুরস্কার জেতেননি। এমন অসামান্য লেখকের প্রাসাদতুল্য বাড়ির সামনে এসে দেখি দুয়ার তালাবদ্ধ। আজ আর দুয়ার খুলবে না। দোতলা এই বাড়িটিতে লেখক জীবনের শেষ কয়েক বছর বসবাস করেছিলেন। বাড়ির সামনে প্রশস্ত আঙিনা। সেখানে উঁচু উঁচু গাছ অন্য পাশ থেকে বাড়িকে ঢেকে দিয়েছে। বাড়ির চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।
প্রাচীন এই বাড়ির আশপাশে ঘুরেফিরে আবার ফিরে গেলাম। আজ তিনি দুয়ার না খুললে কাল নিশ্চয়ই খুলবেন। রাশিয়ার অন্যান্য বিখ্যাত লেখকের বাড়ির মতো তাঁর বাড়িটিকেও মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ায় জনপ্রিয়তা পেলেও আমাদের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি আজ অবধি সবচেয়ে জনপ্রিয় রুশ লেখক।
আগের দিন লেখকের হাউস মিউজিয়াম বন্ধ ছিল। তাই দুয়ার থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমি হচ্ছি বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী ধরনের মানুষ। এত সহজে এ বাড়ি না দেখে আমি মস্কো ছাড়ব না।
আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বয়স যখন চব্বিশ তখন এক পত্রিকায় লেখা পাঠানোর সময় আলেক্সেই লেখকের নামে নিজের নাম লেখেন ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’। রুশ ভাষায় ম্যাক্সিম শব্দের অর্থ—তিক্ত। জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর তিক্ততার স্বাদ অল্প বয়সে গ্রহণ করায় তিক্ত নামেই পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন।আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ ১৮৬৮ সালে রাশিয়ার নিঝনি নভোগরদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এগারো বছর বয়সে অনাথ হয়ে যাওয়ার পর দিদিমা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাখেন। কিন্তু বারো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালান। এরপর বছর পাঁচেক রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। কখনো পেট চালানোর জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ করতে হয়েছে। পথেই থাকতে হয়েছে। এ সময়ে আলেক্সেই মুচির কাজও করেছিলেন।
ম্যাক্সিম গোর্কির বাড়ি