সংগীত ও নৃত্য নিয়ে মুসলিম দার্শনিকদের ভাবনা
Published: 24th, September 2025 GMT
জালালউদ্দিন রুমি একদিন বাজার দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তাঁর কানে এল স্বর্ণকারের হাতুড়ি দিয়ে স্বর্ণ পেটানোর শব্দ। হাতুড়ির প্রতিটি আঘাত ছিল এক নিখুঁত ছন্দের মতো। রুমি শুনতে শুনতে গভীর ধ্যানে চলে যান। ধ্যানের মধ্যে আনন্দ ও প্রেমে আপ্লুত হয়ে বাজারেই ঘূর্ণন শুরু করেন। চারপাশের মানুষ অবাক হয়ে একজন মহান আলেম ও ফকিহকে বাজারের মাঝখানে নাচতে দেখছিলেন। আন্নেমারি শিমেলের ‘দ্য ট্রায়ামফল সান: আ স্টাডি অব ওয়ার্কস অব জালালুদ্দিন রুমি’সহ বেশ কয়েকটি বইয়ে ঘটনাটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এ ঘটনাটিকেই সুফিরা রুমির সামা বা মেভলেভি ঘূর্ণন নৃত্যের সূচনা বলে মনে করেন।
আরেক দিনের ঘটনা। রুমি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে বসা। হঠাৎ এক ব্যক্তি বাঁশি বাজাতে শুরু করল। রুমির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। তিনি ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলেন। হারিয়ে গেলেন সুরের ভেতর। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল তাঁর মুখ বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। এই গভীর অভিজ্ঞতার পরই তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘মসনভি-ই-মানাভি’ গ্রন্থের শুরুতে লিখলেন, ‘বাঁশির আর্তি শোনো, কেমন করে সে বিচ্ছেদের কাহিনি বলে।’
এখানে বাঁশি কেবল বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং আত্মার প্রতীক—যে তার আদি উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যাকুল। রুমির কাছে এই সুর ছিল আদি উৎস তথা ঈশ্বরের দিকে ফিরে যাওয়ার ডাক।
এ ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় শামস আল-দীন আহমদ আফলাকির ‘মানাকিব আল-আরিফিন’ গ্রন্থে। আন্নেমারি শিমেল তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘দ্য ট্রায়ামফল সান’-এ এই প্রতীকটিকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে রুমির কাছে সংগীত ছিল আত্মার গভীরতম আকাঙ্ক্ষার ভাষা।
গোটা দুনিয়ার সুফিরা মনে করেন, নৃত্য ও সংগীত হৃদয়কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনে। সংগীত ও নৃত্যের উৎপত্তি মানুষের প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি থেকে। শব্দ, ছন্দ, তাল—এগুলো ভাষার আগেই মানুষ ব্যবহার করত। প্রাচীন সভ্যতা মিসর, মেসোপটেমিয়া, গ্রিসে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অংশ হিসেবে সংগীত ও নৃত্যকে গ্রহণ করা হয়।সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র কতটা শক্তিশালী, তা রুমির মসনভির আরেকটা কবিতার উদ্ধৃতি দিলে পরিষ্কার হওয়া যাবে। মসনভিতে রুমি বলছেন:
আমরা এমন এক স্থানে এসে পড়েছি, যেখানে সবকিছুই সংগীত।
বাঁশির সুর ও তার বাদ-বাঁশির স্পর্শ আকাশে উঠে যায়,
যদি পুরো বিশ্ব জ্বালিয়ে দেওয়া হয়,
তবুও লুকানো বাদ্যযন্ত্র বাজতে থাকবে।
বাঁশি কয়েকবার ভাঙা হলেও,
তার মধ্যে লুকানো গল্প পুনরায় বলে চলে।
(মসনভি-ই-মানাভি)
সুফি নৃত্য ১.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোচ গার্দিওলার ১০০০তম ম্যাচের আগে যা জানতে পারেন
রোববার লিভারপুলের বিপক্ষে মাঠে নামছে ম্যানচেস্টার সিটি। আর এই ম্যাচেই কোচ হিসেবে এক অনন্য মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন পেপ গার্দিওলা—এটাই হবে তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের হাজারতম ম্যাচ।
২০০৭ সালে বার্সেলোনা ‘বি’ দলের দায়িত্ব নিয়ে কোচিং শুরু করেছিলেন গার্দিওলা। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি পরিচালনা করেছেন ৯৯৯টি ম্যাচ। এর মধ্যে জয় এসেছে ৭১৫টিতে, হার মাত্র ১২৮টিতে।
বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে কোচ হিসেবে গার্দিওলা জিতেছেন ১২টি লিগ শিরোপা ও ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। এ ছাড়া তাঁর গৌরবময় ক্যারিয়ারে আছে আরও ১৪টি ঘরোয়া কাপ শিরোপা।
আরও পড়ুনরেকর্ড গড়ার পর গার্দিওলা বললেন, ‘ফার্গুসন–ওয়েঙ্গারকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানাব’০৬ অক্টোবর ২০২৫বিবিসি স্পোর্ট তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কত ম্যাচ জিতেছেন, জানেন কি না। গার্দিওলা হেসে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই জানি, অনেক। সংখ্যাগুলো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি সংখ্যাগুলো নিয়ে ভাবি না। কিন্তু যখন এমন মাইলফলক আসে এবং আমি করেছি তা লেখা হয়, শুধু প্রিমিয়ার লিগ নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগেও—তখন বোঝা যায় বার্সেলোনা, বায়ার্ন আর এখানেও অসাধারণ কিছু অর্জন করেছি।’
গার্দিওলা আরও বলেন, ‘এমন স্তরে পৌঁছানো খুব কঠিন। যদি আবার শুরু করতাম, হয়তো কখনোই এত দূর যেতে পারতাম না। এটা অনেক বড় পথ। প্রায় ১০০০ ম্যাচের মধ্যে অল্প কিছু ম্যাচে হেরেছি। আশা করি, রোববারও আমরা জয়ের ধারাটা ধরে রাখতে পারব।’
গার্দিওলার এই মাইলফলককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ক্যারিয়ারে দুই হাজারের বেশি ম্যাচ পরিচালনা করা ফার্গুসন বলেছেন, ‘পেপ! আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনাকে লিগ ম্যানেজারস অ্যাসোসিয়েশনের (এলএমএ) হল অব ফেমের ১০০০ ক্লাবে স্বাগত জানানোর সুযোগ পাচ্ছি।
খেলার প্রতি আপনার ভালোবাসা ও আবেগ সব সময় স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আপনি যেভাবে বিশ্বের ফুটবলে অবিস্মরণীয় প্রভাব রেখে যাচ্ছেন, তা নিয়ে আপনার গর্বিত হওয়া উচিত। ১০০০টি ম্যাচে পৌঁছানো এবং ফুটবলে এমন দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জন করা এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’