ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘সেমিফাইনালের’ অপেক্ষায় বাংলাদেশ
Published: 24th, September 2025 GMT
ভাগ্যটা তাহলে ঝুলেই থাকল বাংলাদেশের!
ভালো-মন্দ মিশিয়ে করা বোলিংয়ের পর হতাশার ব্যাটিংই লিখে দিল গল্পটা। ভারতের বিপক্ষে আগের ১৭ টি-টোয়েন্টির ১৬ ম্যাচে যা নিয়তি বাংলাদেশের—সেই হারই সঙ্গী হলো আবার। দুবাইয়ে এবার হার ৪১ রানের। হিসাব এখন সোজা—বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই ফাইনালে, না হলে ফেরার টিকিট। ভারত অবশ্য এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে বুধবার বাংলাদেশকে হারিয়েই।
ফাইনালের পথে বাংলাদেশও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত বুধবারই। ৬ ওভারে ভারত তুলে ফেলেছিল ৭২ রান। সেখান থেকে ২০ ওভার শেষে ১৬৮ রানে ওদের থামানোটা খারাপ ছিল না। তখনো মনে হচ্ছিল, সুযোগ আছে। কিন্তু ভারতের বোলারদের ধাঁধা মেলাতে পারলেন শুধু সাইফ হাসান। অন্যরা যেন কুলদীপ-বুমরার সামনে অসহায় হয়ে পড়লেন।
শুরুটা হয়েছিল ওপেনার তানজিদ হাসানকে দিয়ে। বুমরার গুড লেন্থে পড়া বল বুঝতেই পারেননি, মিড অনে সহজ ক্যাচ দিলেন শিবম দুবেকে। এরপর এলেন পারভেজ হোসেন। বুমরাকে এক দৃষ্টিনন্দন ছক্কা মারলেও প্রথম ৭ বলে করেছিলেন শূন্য রান। পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে ২১ রান করে কুলদীপ যাদবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন।
পারভেজ অন্তত কিছু রান করেছেন। বাকিদের অবস্থা আরও খারাপ। তাঁরা শুধু উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। স্কোরকার্ড দেখলেই বোঝা যাবে দুরবস্থাটা—সাইফ আর পারভেজ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি! তবু পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেটে ৪৪ রান ছিল। তখনো মনে হচ্ছিল অসম্ভব নয়। কিন্তু একে একে উইকেট পড়তে শুরু করলে ভেঙে পড়ে সব আশা।
বাংলাদেশের লড়াইটুকু আসলে টিকে ছিল সাইফ হাসানের ব্যাটে। দুবার জীবন পেয়েছেন—একবার হার্দিক পান্ডিয়ার হাত ফসকে, আরেকবার সাঞ্জু স্যামসনের সৌজন্যে। তবে খেলেছেন কিছু চোখধাঁধানো শটও। শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ৬৯ রান করেছেন ৩ চার আর ৫ ছক্কায়। বুমরার বলে অক্ষর প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগেই অবশ্য ম্যাচটা অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে অলআউট—৩ বল বাকি থাকতেই হারের আনুষ্ঠানিকতা সারল বাংলাদেশ।
অথচ বোলিংয়ে বাজে শুরুর পরও শেষটা ভালোই হয়েছিল। পাঁজরের চোটে না খেলা লিটন দাসের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাকের আলী নিয়েছিলেন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। একাদশে এসেছিল চারটি পরিবর্তনও। প্রথম ৩ ওভারে ভারত তুলেছিল ১৭ রান। পরের ৩ ওভারে করল ৬০! সেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ।
রিশাদ হোসেন শুধু বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও হয়ে উঠলেন দলের ত্রাতা। পাওয়ার প্লের পর তাঁর ২ উইকেট বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাল। জাকের আলী ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পর অভিষেক শর্মা মাত্র ২৫ বলে তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৭৫ রানে রানআউট হয়ে থামলেন রিশাদের দুর্দান্ত থ্রোতে।
শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলাররা সবাই ভালো করেছেন। দুই ওভারে সাইফ দিয়েছেন মাত্র ৭ রান। প্রথম দুই ওভারে ৩৩ রান দেওয়া সাইফউদ্দিন শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৪। কিন্তু তাতে আর কী লাভ!
ভারতের করা রান তাড়া করার কাছাকাছিও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে লেখা হলো হার। তবে সুযোগ এখনো আছে। আজ পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। আর রোববার শিরোপা লড়াইয়ে তাদের জন্য অপেক্ষায় থাকবে সেই ভারতই।
সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (অভিষেক ৭৫, পান্ডিয়া ৩৮, গিল ২৯, অক্ষর ১০; রিশাদ ২/২৭, তানজিম ১/২৯, মোস্তাফিজ ১/৩৩, সাইফউদ্দিন ১/৩৭)।
বাংলাদেশ: ১৯.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে ভারত
এশিয়া কাপে সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হার মেনেছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ভারত আগে ব্যাট করতে নেমে অভিষেক শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া ও শুভমান গিলের ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে ১৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৭ রানে থামে বাংলাদেশ। হার মানে ৪১ রানে।
এই জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। অন্যদিকে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ভারতের সঙ্গে ফাইনালেও দেখা হবে বাংলাদেশের।
আরো পড়ুন:
বিসিবি নির্বাচন: তামিমের কাউন্সিলরশিপসহ ৩০ আপত্তি জমা
সেই ১৬৮-তেই থামল ভারত, এবার বাংলাদেশের পালা
রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার পরিচয় দেন। বাংলাদেশের কেবল দুইজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটায় রান করতে পারেন। তার মধ্যে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান ৫১ বলে ৩টি চার ও ৫ ছক্কায় করেন ৬৯ রান। আর ওয়ান ডাউনে নামা পারভেজ হোসেন ইমন করেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান। বাকিদের কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা।
বল হাতে ভারতের কুলদীপ যাদব ৪ ওভারে ১৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। জাসপ্রিত বুমরাহ ৪ ওভারে ১৮ রানে ২টি ও বরুণ চক্রবর্তী ৪ ওভারে ২৯ রানেন নেন ২টি উইকেট।
তার আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রান তোলে ভারত। তানজিম হাসান সাকিব প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন। নাসুম আহমেদ দ্বিতীয় ওভারে দেন ৭ রান। পরের ওভারে তানজিম দেন ৭ রান। এই তিন ওভারে বেশ নড়বড়ে ও অস্বস্তিকর ব্যাটিং করেন অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিল।
এরপর অবশ্য খোলস ছেড়ে বের হন তারা। নাসুমের করা চতুর্থ ওভারে গিল-অভিষেক দুটি ছক্কা ও এক চারে তোলেন ২১ রান। পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজকে দুই ছক্কা মেরে অভিষেক তোলেন ১৭ রান। এরপর সাইফউদ্দিনের ওভারে চারটি চার মেরে অভিষেক তোলেন আরও ১৭ রান।
প্রথম তিন ওভারে ১৭ ও পরের তিন ওভারে ৫৫! তাতে পাওয়ার প্লে’তে ৭২ রান তুলে ফেলে ভারত বিনা উইকেটে।
সপ্তম ওভারে রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে এসে গিলকে ফিরিয়ে ভাঙেন বিপদজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি। গিল রিশাদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে তানজিমের হাতে ধরা পড়েন ১৯ বলে ২টি চার ও ১ ছক্কায় ২৯ রান করে।
এরপর অবশ্য নির্দিষ্ট বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ভারতের রানের চাকা কিছুটা থেমে যায়। তবে অভিষেক যতোক্ষণ ছিলেন ততোক্ষণ মেরে খেলে যান। নবম ওভারের প্রথম বলে রিশাদ আবারও উইকেট নেন। এবার ফেরান শিভম দুবেকে (৩)। তাতে ১০ ওভার শেষে ভারতের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৯৬। ১১তম ওভারে সাইফউদ্দিন আবার ওভার করতে আসেন। এবার এক ছক্কা ও এক চারে অভিষেক তোলেন ১৬ রান। তাতে মাত্র ৩৭ বলে ৬টি চার ও ৫ ছক্কায় তার রান হয়ে যায় ৭৫।
১২তম ওভারের প্রথম বলে ভয়ঙ্কর এই ব্যাটসম্যান রান আউট হলে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি নামে। এই ওভারের ষষ্ঠ বলে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে উইকেটের পেছনে জাকের আলীর হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মোস্তাফিজ। তিনি ৫ রানের বেশি করতে পারেননি।
গিল, দুবে, অভিষেক ও সূর্য ফিরলেও দাঁড়িয়ে যান হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি সুযোগ পেলেই মারতে থাকেন।
১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে তিলক ভার্মাকে ফেরান তানজিম সাকিব। তিলক আজ ৭ বলে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে পুষিয়ে দেন হার্দিক। তিনি ২৯ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলে ইনিংসের শেষ বলে আউট হন। তার উইকেটটি নেন সাইফউদ্দিন। তাতে ভারত ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানে গিয়ে থামে।
ঢাকা/আমিনুল