চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে ফের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এবার বাস বন্ধ করে দিয়েছেন খোদ মালিকরাই। শুধু একতা ট্রান্সপোর্টের বাস এবং লোকাল বাসগুলো চলাচল করছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান রতন। 

আরো পড়ুন:

খানা-খন্দে ভরা খুলনা নগরীর প্রবেশপথ, ১৮ জেলার সঙ্গে যোগাযোগে ভোগান্তি

খাগড়াছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধ

এর আগে, চলতি মাসেই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দুই দফা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন চালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা। 

মালিকপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা অযৌক্তিক দাবি সামনে আনছেন যা মেনে নেওয়া সম্ভব না। শ্রমিকদের সঙ্গে না পেরে তারা নিজেরাই এবার বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান রতন জানান, শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ঢাকায় তাদের সঙ্গে বসা হয়েছিল। তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সভা সুন্দরভাবেই শেষ হয়। এরপর বাস চলাচলও শুরু হয়।

রতন বলেন, ‍“এখন শ্রমিকরা দূরপাল্লার বাস যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তুলতে চাচ্ছে। খোরাকি ভাতা দাবি করছে। যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তুললে তো ব্যবসা করা যাবে না। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে নতুন করে বিরোধ। তারা বাস চালাবে না বলেছে। আমরাও বলেছি- ঠিক আছে, এভাবে বাস চালাতে চাই না। কয়দিন বসে থাকবে থাকুক।”

বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। দুইদিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তারা ফের বাস চালানো শুরু করেন। আশ্বাস অনুযায়ী বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা না হলে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত একতা ছাড়া বাকি সব বাস চলাচল বন্ধ ছিল।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন স প ট ম বর

এছাড়াও পড়ুন:

মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও

ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।

অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।

বাধা পেরিয়ে

তারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।

গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন

সম্পর্কিত নিবন্ধ