বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। এক যুগের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। নিজেকে ভেঙে বার বার প্রমাণ করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। এক সন্তানের জননী আলিয়াতে মুগ্ধ তার বাবা পরিচালক মহেশ ভাট।
কন্যা আলিয়াকে নিয়ে গর্বিত মহেশ ভাট। হিউম্যানস অব বম্বেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহেশ ভাট বলেন, “মা হওয়ার পরও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ এতটুকুও কমেনি আলিয়ার। আলিয়া আমাকে চমকে দিয়েছে; আমি ভাবিনি ও এতটা সক্ষম। ‘হাইওয়ে’, ‘উড়তা পাঞ্জাব’ সিনেমা দিয়েও আলিয়া আমাকে অবাক করেছিল। আমি মেরিল স্ট্রিপের একজন বড় অনুরাগী। আমি আলিয়াকে বলেছিলাম, ‘তুমি ওর কাজ দেখো, তখন বুঝবে তুমি এখনো এই শিল্পের খুব সামান্য অংশই ছুঁয়েছ।”
মা হিসেবে দায়িত্ব সামলে অভিনয়জীবনেও সমান মনোযোগী আলিয়া। তা স্মরণ করে মহেশ ভাট বলেন, “আলিয়া রণবীরকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে, এরপরও ওর সিনেমা আরো বড় হয়েছে, ও মা হয়েছে, তবু কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি কন্যাকে সঙ্গে নিয়েই মিলানে গুচির একটি ইভেন্টে গিয়েছিল আলিয়া। সম্প্রতি আলিয়া ও মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। সেখানে রাহার (আলিয়ার কন্যা) জন্য আলাদা একটি ভ্যানিটি ভ্যান ছিল।”
পরের ঘটনা বর্ণনা করে মহেশ ভাট বলেন, “আলিয়া আমাকে বলল, ‘তুমি রাহার ঘরে গিয়ে কেন বসো না, বাবা?’ আমি বললাম, ‘না না, আমি ওটা কলুষিত করতে চাই না।’ ঘরটি অনেকটা নার্সারি স্কুলের মতো, যেন একটা মন্দির। আমি বললাম, ‘না না, বুড়ো মানুষের ওখানে বসার জায়গা না।’ এটাই হলো নতুন প্রজন্মের নায়িকারা—ওরা কাজ করে, সন্তান লালন-পালন করে, আবার বাচ্চাকে নিয়ে গুচির ইভেন্টেও যায়।”
২০১৮ সালে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান আলিয়া ভাট ও রণবীর কাপুর। তারপর দীর্ঘ দিন চুটিয়ে প্রেম করেন। তাদের প্রেম-বিয়ে নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল মুম্বাইয়ের পালি হিলসের রণবীরের ‘বাস্তু’ বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তারা। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর কন্যাসন্তান জন্ম দেন আলিয়া।
আলিয়া ভাটের পরবর্তী সিনেমা ‘লাভ অ্যান্ড ওয়ার’। সঞ্জয় লীলা বানসালির এ সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করছেন স্বামী রণবীর কাপুর।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও
ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।
অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।
বাধা পেরিয়েতারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।
গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন