ছয় বছর আগের কথা। এক তরুণীর বিয়ে হয় বেকার এক যুবকের সঙ্গে। স্বামীর সংসারে এসে দেখেন, চারদিকে শুধু অভাব। শাড়ি-চুরির শখ পূরণ করা তো দূরের কথা, দুবেলা মুখে খাবার তোলাও কষ্টকর। দারিদ্র্য দূর করতে কিছু করার পরিকল্পনা করেন। শুরু করেন গৃহশিক্ষকতা। ধীরে ধীরে রাত-দিন পরিশ্রম করে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। এখন সেই হাঁস তাঁর সংসারে হাসি ফিরিয়ে এনেছে।

অভাবজয়ী ওই গৃহবধূর নাম জয়শ্রী রায়। বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামে। ওই গ্রামের মিন্টু চন্দ্র রায়ের স্ত্রী তিনি। হাঁসের খামার থেকে এখন তিনি মাসে ৯০ হাজার টাকা আয় করছেন। মেধা ও শ্রম দিয়ে শুধু একার দিন বদলাননি। তাঁর দেখানো পথ ধরে আশপাশের গ্রামের অনেকের জীবন বদলে গেছে।

তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পলাশবাড়ি গ্রাম। কাঁচা-পাকা পথ ধরে জয়শ্রী রায়ের বাড়ি যাওয়ার সময় অসংখ্য খামার চোখে পড়ে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে সবজি চাষ করা হয়েছে। উঠানে ও খামারে হাঁস-মুরগি, গোয়ালে গরু-ছাগল-ভেড়া। জয়শ্রী রায়ের বাড়ি খুঁজতেই একজন দেখিয়ে দিলেন। বাড়ির পাশে খামারে ঢুকতেই দেখা গেল, জয়শ্রী রায় হাঁসের ডিম তুলতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর খামার থেকে ডিমভর্তি খাঁচা নিয়ে বেরিয়ে এলেন।

খামারের পাশে গাছের ছায়ায় বসতে দিয়ে তাঁর দিনবদলের গল্প শোনান। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ী গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর তারাগঞ্জের পলাশবাড়ি গ্রামের মিন্টু চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বেকার স্বামীর সংসারে এসে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হতো। প্রতিজ্ঞা করেন দারিদ্র্য দূর করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা থেকে আয়ের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। সেই ভাবনা থেকে গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু গৃহশিক্ষকতা করেও ভালো আয় হচ্ছিল না।

এই হাঁসের খামার থেকে প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা আয় করছেন তারাগঞ্জের জয়শ্রী রায়। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জয়শ র

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ (ধামইরহাট-পত্নীতলা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে দলটির একাংশের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার পৌর বাজার এলাকায় নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়কে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা থেকে বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

সারা দেশে ঘোষিত বিএনপির প্রাথমিক ২৩৭টি মনোনয়নের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খানকে প্রাথমিকভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন পরিবর্তন করে এই আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা।

আজ বেলা ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে থেকে আমইতাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের উভয় পাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, নওগাঁ-২ আসনে সামসুজ্জোহা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীদের চাঁদাবাজি ও মামলাবাজির কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীরাও সামসুজ্জোহার ওপর ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। নেতা–কর্মীরা মামলা-হামলার শিকার ও কারাবরণ করলেও তিনি কোনো খোঁজ নেননি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে নাজিবুল্লাহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাজিবুল্লাহকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আখরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নওগাঁ-২ আসন বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আসনটিতে যে প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছেন, তাতে আসনটি জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর যাঁরা রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি, বিগত সরকারের সময়ে মামলা খেয়েছি, ঘরছাড়া হয়েছি, তাঁদের কোনো খোঁজখবর রাখেননি সামসুজ্জোহা। আমাদের দুঃসময়ে নাজিবুল্লাহ চৌধুরী পাশে ছিলেন। এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে নওগাঁ-২ (ধামইরহাট-পত্নীতলা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। আশা করি, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিএনপির পক্ষে এক হয়ে কাজ করবেন।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ধামইরহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ার হোসেন, ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আখরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দেওয়ান ফেরদৌস, ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন, ধামইরহাট পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান হোসেন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ