নির্বাচন কমিশনের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষ বা কোনো শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের শাপলা প্রতীক না দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা দিতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারে না।”

যদি তারা এটা করে, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা আস্থা রাখতে পারব না। যদি এইটুকু চাপ সামলাতে না পারে, তাহলে কীভাবে এই নির্বাচন কমিশন আমাদের একটি ফেয়ার নির্বাচন দিতে পারবে? তাই শাপলা প্রতীক পেতে আইনগতভাবে ও প্রয়োজনে নৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।”

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত দশটার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের আর্টগ্যালারিতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আয়োজিত জেলার সকল উপজেলার সমন্বয়ক, যুগ্ম সমন্বয়ক ও সংগঠকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

জামায়াতের সাথে পিআর পদ্ধতিতে দ্বিমত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য উচ্চ কক্ষে পিআর প্রাসঙ্গিক কিন্তু নিম্নকক্ষে নয়। তাই তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নামছে না এনসিপি। তবে জামায়াতের অন্যান্য দাবি যেমন জুলাই সনদ, সংস্কার এবং বিচারের বিষয়ে ঐক্যমত বহাল থাকবে এবং সহযোগিতা থাকবে।”

গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি একীভূত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে যদি প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়, তাহলে তা সবার সামনে প্রকাশ করা হবে।’’

জামায়াতে ইসলামীর সাথে একমত প্রকাশ করে সারজিস বলেন, “আওয়ামী লীগ যেভাবে গেছে, জাতীয় পার্টিকেও একই পথ অনুসরণ করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী হতে সহযোগিতা এবং সরকারি দল হওয়ার বৈধতা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টির রাজনীতি দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির একমত থাকবে।”

এছাড়াও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন, তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সারজিস। তিনি বলেন, “ডিসি থেকে এসপি ও ইউএনও-সহ যারা নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ে থাকবেন, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তোষামোদ শুরু করেছেন। তারা পেশাদারিত্ব বজায় না রেখে এরইমধ্যে বিভিন্ন দলের ডিসি-এসপি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো নির্দিষ্ট দলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এখন শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যারা অন্যান্য দলের পরিচয় দিচ্ছে, তারাও সম্ভাব্য হুমকি।”

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচন চাওয়া হয়েছে মানে এটি সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন আলাদা হবে, এমন নয়। একটাই নির্বাচন হবে। সংসদের কিছু মানুষ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করবে এবং পরের ছয় মাস তারা সংবিধান প্রণয়ন করবে। তাদের উচ্চ পক্ষ থেকেও সহায়তা থাকবে। এটাই উত্তম পন্থা। এছাড়া যতো পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলোতে অনেক বড় ফাঁকফোকর আছে। তাই জুলাই সনদ ওই আইনি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হোক যেটা প্রকৃত কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টাকার জুয়াড়ি হিসেবে দেখতে চাই না উল্লেখ করে সারজিস বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ের মতো জেলায় যখন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, তখন এর দায় শুধু বর্ষীয়ান নেতা ফখরুল ইসলামের উপর নয়, আমাদের উপরেও পড়ে। তাই আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসনকে শোষক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে দেখতে চাই।”

এছাড়াও তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে বলেন, “পঞ্চগড়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি এনসিপি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। স্কুল পর্যায়ে বিএনপি-সহ সকল রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকা উচিত। কেউ যদি এ ধরনের প্রভাব বিস্তার করে, সবাইকে প্রতিবাদ জানাতে হবে।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ জেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা/হিমেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী এলাকায় গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার ঘোষণা করবে। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর প্রবেশ মুখ যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সরেজমিন যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ‌্য করা গেছে।

যাত্রাবাড়ী সায়েদবাদ এলাকায় আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মোড়ে মোড়ে তারা পাহাড়া দিচ্ছে, যাতে করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে। রাস্তায় অন্যান্য দিনের মতো মানুষের ভিড়। কোথাও কোথাও যানজট। গণপরিবহনে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার হাজারবার মৃত্যুদণ্ড দিলেও কম হবে: মীর স্নিগ্ধ

ঢাকায় বড় পর্দায় দেখা যাবে শেখ হাসিনার মামলার রায়

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় পরিবহন শ্রমিক আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, হাসিনার রায়কে ঘিরে সবার মধ্যে একটু আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

রজনীগন্ধা পরিবহনের চালক মিজানুর রহনান বলেন, সড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে, যাত্রীর চাপ বেশি। 

উল্লেখ‌্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে আজ সোমবার। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী)।  এ দিনই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইনের মাধ্যমে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে।

ঢাকা/নাজমুল/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীতে জনজীবন স্বাভাবিক
  • রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী এলাকায় গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক 
  • রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন
  • রাজধানীতে চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি, যান চলাচল স্বাভাবিক