কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে আজ সোমবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানিও বেড়েছে। তবে লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে সকালে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে গতকাল রোববার তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপরে উঠেছিল।

কুড়িগ্রাম

তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই তিন ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উজানের হঠাৎ বন্যার খবরে কেউ কেউ তিস্তার চর থেকে গৃহপালিত পশু ও শিশুদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।

ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানি বেড়ে চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আজ সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

রাকিবুল হাসান বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। তাই বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। দ্রুতই পানি নেমে যাবে বলে তিনি জানান।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা উকিল উদ্দিন বলেন, চরাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। ধানখেত তলিয়ে গিয়ে শিষ অবধি পানি হয়েছে। বন্যার পানি স্থায়ী হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান বলেন, গতকাল তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করলে চরাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে কয়েকটি পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছে।

নীলফামারী

লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে আজ সকাল ৯টায় তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল।

গতকাল তিস্তাতীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চলের ১০ সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়। আজ সেই পানি নেমে গেছে।

পাউবো বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় প্রবল বেগে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রাতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। দিবাগত রাত ১২টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর অবশ্য পানি কমতে শুরু করে।

ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে পানি নেমে গেলেও পরিবারগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিস্তা নদীর পানির সঙ্গে আসা বালু জমে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, আজ সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তা জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জে তিস্তা ডান তীর প্রধান বাঁধের ভাঙন ঠেকানো গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব পৎস ম র ওপর দ য় প রব হ ত নদ র প ন উপজ ল র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান নাম নিয়ে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বদদ্বীনি, কুফরি ও ভ্রান্ততার বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা মুসলমান নাম নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির এ কথা বলেন। জাতীয় উলামা কাউন্সিল বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘জাতীয় উলামা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

জাতীয় উলামা কাউন্সিলের সভাপতি ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক আলেম-উলামা অংশ নেবেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উলামায়ে কেরামের পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাম্য নয়।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ইসলামি রাজনীতিতে সব সময় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভূমিকা রাখতে হয়। আজ ইসলামি রাজনীতির সোনালি সময় চলছে। আমরা যদি সুযোগ কাজে না লাগাই, তাহলে সামনে বড় ধরনের ভোগান্তি তৈরি হবে।’

মুন্সিগঞ্জের জামি’আ ইসলামিয়া হালীমিয়া মাদ্রাসার প্রধান ও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাতিলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে লড়তে মরব, কিন্তু বিভক্ত হব না ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ১৬ নভেম্বরের কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়নি, শুরু হয়েছে মাত্র। সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পরেরবার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। যারা কাজ করতে চায়, তাদের বাধা দেব না। আমরা নিজেরা নিজেদের শত্রু হব না, ইনশা আল্লাহ।’

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, জাতীয় উলামা কাউন্সিলের মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা সালাহুদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুশতাক আহমদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ