ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থার বিষয়ে সিইসি: তথ্য পেতে তালিকা পত্রিকায় দিয়েছে ইসি
Published: 6th, October 2025 GMT
ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, কমিশন কর্তৃক পত্রিকায় প্রকাশিত সংস্থার তালিকা চূড়ান্ত নয়। তাঁরা এসব সংস্থা সম্পর্কে চূড়ান্ত তথ্য পেতে তালিকা পত্রিকায় দিয়েছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষে সিইসি এ কথা বলেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে ৭৩টি সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। এর মধ্যে ৪৩টির কার্যালয়ে গিয়েছেন প্রথম আলোর ঢাকার তিন প্রতিবেদক ও বিভিন্ন জেলার ১৯ প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি। সরেজমিনে উঠে এসেছে, প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ছোট ও সক্ষমতাহীন। কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে।
সংস্থাগুলো সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘আমরা তো সরাসরি রেজিস্ট্রেশন দিইনি। ইভেন পার্টি রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারেও। আমরা যখন পত্রিকায় দেব, তার মানে উই ডু ওয়ান্ট ইনফোর্স ফ্রম দ্য পিপল ইন জেনারেল। তখন এটার ওপরে আমাদের কাজ করতে সুবিধা। আমরা ভেরিফাই করে দেখব যে, এ তথ্যটা সত্যি কি না। কারণ, আমাদের কাছে ১৮ কোটি মানুষের তথ্য নেই।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ইসির কার্যক্রমকে সহজ করে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হলে কমিশন সেই তথ্যের আলোকে পদক্ষেপ নেয়।
সিইসি বলেন, ‘যখন দেখি, এই তথ্য সঠিক, তখন উই টেক অ্যাকশন জেনুইনলি। উই টেক অ্যাকশন অ্যাকোর্ডিংলি।’
আজ সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাত্মক স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করতে কাজ করছে তাঁর কমিশন। এ লক্ষ্যে তিনি গণমাধ্যমকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সিইসি বলেন, ‘আমরা চাই, সারা বিশ্ববাসী দেখুক, বাংলাদেশে লুকানো চাপানো যাতে কিছু না হয়। আই মিন ইট। আমরা একদম স্বচ্ছভাবে আয়নার মতো পরিষ্কার করে এই ইলেকশনটা করতে চাই। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতাটা খুবই দরকার হবে।’
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির কর্মকর্তা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
একাত্তর টিভির সিইও ও হেড অব নিউজ শফিক আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের নির্বাচনের আগে–পরে জয়ী ও হেরে যাওয়া সব পক্ষের রোষানলে পড়তে হয়। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসির ভূমিকা থাকা উচিত।
ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে শফিক আহমেদ বলেন, এর আগেও সাংবাদিকেরা নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এখনো সেই পরামর্শ তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। সাংবাদিকদের দেওয়া পরামর্শ বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনে গণমাধ্যম ভোটার ও প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে বলে উল্লেখ করেন যমুনা টিভির সিএনই তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার কথা বললেও নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু পরিবেশ রাখতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে, সেটা পরিষ্কার নয়। কারণ, নির্বাচনের পরে তারা আবার দলীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা দরকার যে, তাঁরা দায়িত্বের জন্য পরবর্তী সময়ে হেনস্তার শিকার হবেন না। ইসিকে এই গ্যারান্টি দিতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে–পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব মোকাবিলা, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ ও গণমাধ্যমকে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ বজায় রাখতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংলাপে অংশ নেন ইনডিপেনডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর মোস্তফা আকমল, গ্লোবাল টিভির চিফ নিউজ এডিটর ফেরদৌস মামুন, চ্যানেল আই–এর প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম, এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ শহিদুল আজম, গ্রিন টিভির হেড অব নিউজ মাহমুদ হাসান, জিটিভির হেড অব নিউজ গাউসুল আজম বিপু, দীপ্ত টিভির সিএনই এস এম আকাশ, সময় টিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক রুহুল ইসলাম, নিউজ ২৪–এর হেড অব নিউজ শরীফুল ইসলাম খান, মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিবেদক নিয়াজ মোর্শেদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলার কারণে নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা হচ্ছে: ইউনুস আহমাদ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেছেন, “পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, চলতি বছরের গত ১০ মাসে (অক্টোবর পর্যন্ত) সারা দেশে প্রায় তিন হাজার ২৩০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে ৩২৩টি খুন হয়েছে। রাজধানীতে গত ১০ মাসে ৩৭১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। তবে ডিএমপি থেকে দাবি করছে, প্রতি মাসে রাজধানীতে গড়ে ১৯-২০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের এই তথ্য জনমে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে।”
বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, “দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে। এমন বাস্তবতায় এতো হত্যাকাণ্ড সকল বিবেচনাতেই ভীতিকর এবং দেশে আইনের শাসনের বিদ্যমানতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। তাই জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে স্থতি ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি করতে হবে।”
অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রকাশ্য বিদালোকে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না সন্ত্রাসীরা। তাই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এবং অপরাধীদের দমন করতে সর্বব্যাপী অভিযান পরিচালনা করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি