ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, কমিশন কর্তৃক পত্রিকায় প্রকাশিত সংস্থার তালিকা চূড়ান্ত নয়। তাঁরা এসব সংস্থা সম্পর্কে চূড়ান্ত তথ্য পেতে তালিকা পত্রিকায় দিয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষে সিইসি এ কথা বলেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে ৭৩টি সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। এর মধ্যে ৪৩টির কার্যালয়ে গিয়েছেন প্রথম আলোর ঢাকার তিন প্রতিবেদক ও বিভিন্ন জেলার ১৯ প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি। সরেজমিনে উঠে এসেছে, প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ছোট ও সক্ষমতাহীন। কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে।

সংস্থাগুলো সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘আমরা তো সরাসরি রেজিস্ট্রেশন দিইনি। ইভেন পার্টি রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারেও। আমরা যখন পত্রিকায় দেব, তার মানে উই ডু ওয়ান্ট ইনফোর্স ফ্রম দ্য পিপল ইন জেনারেল। তখন এটার ওপরে আমাদের কাজ করতে সুবিধা। আমরা ভেরিফাই করে দেখব যে, এ তথ্যটা সত্যি কি না। কারণ, আমাদের কাছে ১৮ কোটি মানুষের তথ্য নেই।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ইসির কার্যক্রমকে সহজ করে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হলে কমিশন সেই তথ্যের আলোকে পদক্ষেপ নেয়।

সিইসি বলেন, ‘যখন দেখি, এই তথ্য সঠিক, তখন উই টেক অ্যাকশন জেনুইনলি। উই টেক অ্যাকশন অ্যাকোর্ডিংলি।’

আজ সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাত্মক স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করতে কাজ করছে তাঁর কমিশন। এ লক্ষ্যে তিনি গণমাধ্যমকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান।

সিইসি বলেন, ‘আমরা চাই, সারা বিশ্ববাসী দেখুক, বাংলাদেশে লুকানো চাপানো যাতে কিছু না হয়। আই মিন ইট। আমরা একদম স্বচ্ছভাবে আয়নার মতো পরিষ্কার করে এই ইলেকশনটা করতে চাই। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতাটা খুবই দরকার হবে।’
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির কর্মকর্তা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

একাত্তর টিভির সিইও ও হেড অব নিউজ শফিক আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের নির্বাচনের আগে–পরে জয়ী ও হেরে যাওয়া সব পক্ষের রোষানলে পড়তে হয়। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইসির ভূমিকা থাকা উচিত।

ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে শফিক আহমেদ বলেন, এর আগেও সাংবাদিকেরা নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এখনো সেই পরামর্শ তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। সাংবাদিকদের দেওয়া পরামর্শ বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনে গণমাধ্যম ভোটার ও প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে বলে উল্লেখ করেন যমুনা টিভির সিএনই তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার কথা বললেও নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু পরিবেশ রাখতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে, সেটা পরিষ্কার নয়। কারণ, নির্বাচনের পরে তারা আবার দলীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা দরকার যে, তাঁরা দায়িত্বের জন্য পরবর্তী সময়ে হেনস্তার শিকার হবেন না। ইসিকে এই গ্যারান্টি দিতে হবে।

গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে–পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব মোকাবিলা, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ ও গণমাধ্যমকে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ বজায় রাখতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংলাপে অংশ নেন ইনডিপেনডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর মোস্তফা আকমল, গ্লোবাল টিভির চিফ নিউজ এডিটর ফেরদৌস মামুন, চ্যানেল আই–এর প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম, এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ শহিদুল আজম, গ্রিন টিভির হেড অব নিউজ মাহমুদ হাসান, জিটিভির হেড অব নিউজ গাউসুল আজম বিপু, দীপ্ত টিভির সিএনই এস এম আকাশ, সময় টিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক রুহুল ইসলাম, নিউজ ২৪–এর হেড অব নিউজ শরীফুল ইসলাম খান, মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিবেদক নিয়াজ মোর্শেদ প্রমুখ।

আরও পড়ুনভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ ত ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস

খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকে দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ ঘটনায় জেএসএসের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।

‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। আজ রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগ। জেএসএসের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রতিবেদন প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। অবরোধের মধ্যেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ি তরুণ নিহত হন। আর আগুন দেওয়া হয় বাজারে। এতে ৪০টি দোকান ও ৫০টি বসতঘর পুড়ে যায়। এদিকে গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় মেডিকেল বোর্ড।

রোববার প্রকাশিত জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাঙালিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে পাহাড়ি বসতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাঙালি ও বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা একসঙ্গে হামলা চালায়। এতে ৩ পাহাড়ি নিহত হন। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। রামেসু বাজারে আগুনে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং পাহাড়ে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদরে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই সমাবেশে ইউপিডিএফের কতিপয় লোক প্রবেশ করে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং উসকানি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে গুইমারা ঘটনাও ইউপিডিএফের উসকানিতে সহিংস রূপ লাভ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের প্রতিবাদকারী বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যেনু মারমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁর নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অবরোধ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল সাংগঠনিকভাবে যুক্ত নয় বলে বিবৃতি দেয়। এ থেকে বোঝা যায় আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নানাভাবে উসকানি দিয়েছিল। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ইউপিডিএফের সমর্থক, পরামর্শক ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত দু-একজন ব্লগার ও ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভেদ, উসকানিমূলক এবং হঠকারী বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

পাহাড়ে নারী ও শিশুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ২৯ জন পাহাড়ি নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। এমনকি সঠিক তদন্তও হয় না।

প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তবে জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, এটি একটি ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জেএসএসের বিবৃতি বা প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যায়, জুম্ম ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে বিতর্কিত করে প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি
  • সেই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনায় কারা জড়িত, অনুসন্ধান চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ৮ দিন পর খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • আট দফার বাস্তবায়ন চায় জুম্ম ছাত্র-জনতা
  • এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া হতাশাজনক