অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কিছুটা চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ
Published: 7th, October 2025 GMT
নতুন এলাকায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ায় কিছুটা চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কেন রংপুরে বা গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স ছড়াল, তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপদ্রুত এলাকা ও এর আশপাশ এলাকার মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে উত্তরের জেলা রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় কয়েকজন মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর কয়েকজন অসুস্থ মানুষের নমুনা পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করে আইইডিসিআর। আইইডিসিআর বলছে, রংপুরে এই প্রথম অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলো।
কেন নতুন জায়গায় (রংপুর) অ্যানথ্রাক্স দেখা দিল, আমরা তা বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা নজরদারিও বাড়াচ্ছি। ওই সব এলাকায় গবাদিপশু কোথা থেকে আসে, তা–ও জানার চেষ্টা আমরা করব।অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন, আইইডিসিআরের পরিচালকগতকাল সোমবার সকালে সর্বশেষ অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় বিষয়ে আইইডিসিআরে একটি সভা হয়। সভায় আইইডিসিআর ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে ছড়াল, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে নিজ কার্যালয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন নতুন জায়গায় (রংপুর) অ্যানথ্রাক্স দেখা দিল, আমরা তা বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা নজরদারিও বাড়াচ্ছি। ওই সব এলাকায় গবাদিপশু কোথা থেকে আসে, তা–ও জানার চেষ্টা আমরা করব।’
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ১৪টি জেলায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এই তালিকায় আছে মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর।
আরও পড়ুনঅ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায়০৪ অক্টোবর ২০২৫জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটিতে ১০০ বছরের মতো টিকে থাকতে পারে। কচি বা ছোট ঘাস খাওয়ার সময় গরু, ছাগল, মহিষের মুখে মাটিও চলে যায়, সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু। এরপর ওই পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মাংস, রক্ত, হাড় বা পশমের সংস্পর্শে এলে মানুষের অ্যানথ্রাক্সের ঝুঁকি দেখা দেয়।
এ বছর রংপুরের পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অন্তত ৫০ জনের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১১ জনের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারীর প্রাণীর মাংসের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস ছিল। তাঁর শরীরে ঘায়ের চিহ্নও ছিল। তিনি অন্য রোগে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে অন্য রোগে, অ্যানথ্রাক্সে নয়।’
অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটিতে ১০০ বছরের মতো টিকে থাকতে পারে। কচি বা ছোট ঘাস খাওয়ার সময় গরু, ছাগল, মহিষের মুখে মাটিও চলে যায়, সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু। এরপর ওই পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মাংস, রক্ত, হাড় বা পশমের সংস্পর্শে এলে মানুষের অ্যানথ্রাক্সের ঝুঁকি দেখা দেয়।জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান সতর্কতা ও করণীয়অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত প্রাণীর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, শরীর কাঁপতে থাকে। প্রাণীর শরীর থেকে লোম খসে পড়তে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা করানো না হলে আক্রান্ত প্রাণী ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। মৃত প্রাণীর পেট দ্রুত ফেঁপে ওঠে। মৃত প্রাণীর নাক, মুখ, কান, মলদ্বার দিয়ে আলকাতরার মতো কালো রক্ত বের হয়।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। আক্রান্ত প্রাণীকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করতে হবে। আক্রান্ত প্রাণী জবাই যাবে না বা তার মাংস খাওয়া যাবে না।
অন্যদিকে মানুষের ত্বক কেটে গেলে বা ফেটে গেলে সেই ক্ষতস্থানে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ঢুকলে ত্বকে চুলকানি হয়, ফোসকা পড়ে এবং ঘা দ্রুত কালো আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে মাথাব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা ও বমির ভাব থাকলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুনদেশে আবার অ্যানথ্রাক্স, সুস্থ থাকতে যা জানা জরুরি০১ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেবি শার্ক গান বানিয়ে কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
যাদের বাসায় এখন ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁরা জানেন, গত এক দশকে সেই শিশুরা কোন কোন ছড়া/গান শুনেছে। এ প্রজন্ম ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। ফলে এই বয়সী শিশুদের জন্য কনটেন্ট বানিয়ে অনেকেই বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
বিষয়টি হলো ‘বেবি শার্ক’ নামের ৯০ সেকেন্ডের এক শিশুতোষ গানের ভিডিও এখন ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা কনটেন্ট, ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি। ২০২০ সালেই এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কনটেন্টের স্বীকৃতি পায়। এরপর তা থেমে থাকেনি—অগ্রগতি চলছেই।
ফলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে, অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের বাজার মূলধন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পিংকফংয়ের লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ যে এই বেবি শার্ক ডু ডু ডু, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবর বিবিসি।
এর জনপ্রিয়তা কেমন, সে বিষয়ক এক বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর পর বা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময় তাঁর কানে যেন এক শিশুতোষ ছড়াগান বাজতে থাকে। সেটি হলো, বেবি শার্ক ডু ডু ডু, বেবি শার্ক। যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট এবং ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি এই গান শোনেননি। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট আছে, সেই বাড়ির ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা এই গান শোনেনি, এমন নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই ভিডিও দুনিয়াজোড়া ঠিক কেমন আলোড়ন তুলবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই কেউ আগে ভাবেননি। ২০১৬ সালের জুনে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমতি দেন পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী কিম মিন-সিওক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এটি অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা কিছু হবে। পরে বুঝেছি, এটি আমাদের বৈশ্বিক যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
২০১০ সালে ‘স্মার্টস্টাডি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করত। মাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে পরবর্তীকালে ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ দিয়ে কনটেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একপর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। এরপর তারা সহজ, শিক্ষাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তখনই বেবি শার্কের বাজার মাত করে।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্লেষক কেভিন চিউর মতে, বেবি শার্ক গানটি ‘শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সম্ভবত বিরক্তিকর। তবে কিম মিন-সিওকও এই গানে আসক্তি ধরানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘এটি কে-পপ গানের মতো—খুব দ্রুতলয়ের ও ছন্দময়। ফলে আসক্তি তৈরি করতে পারে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশুদের মধে৵ এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বেবি শার্ক গানটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর স্বীকৃতি অর্জন করে। এমনও হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রথম দিকে এই কোম্পানি যত আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেক এসেছে এই গান থেকে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন কনটেন্ট তো তারা বানিয়েছে।
একটি গাননির্ভর নয়২০২২ সাল থেকে পিংকফং কোম্পানির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন বেবেফিন ও সিলুকেরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিন জাং কিম বলেন, কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে, এই সফলতা শুধু বেবি শার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।
কিম মিন-সিওকের জোর দাবি, বেবি শার্ক ছাড়া অন্যান্য কনটেন্ট থেকেও তাদের ব্যবসা বাড়ছে। বর্তমানে পিংকফংয়ের আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে বেবি শার্ক থেকে। বেবেফিন থেকে আসছে কোম্পানির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ।
স্টক মার্কেটে অভিষেক থেকে প্রায় ৫২ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে পিংকফং। কিম জানান, এই অর্থ কনটেন্ট ও চরিত্রের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা। মানুষের পছন্দ কী, সে বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট বানাতে চায় তারা। কিম বলেন, অনেক নির্মাতা সারা জীবন ধরে যে স্বপ্ন দেখেন, পিংকফং এরই মধ্যে তা অর্জন করে ফেলেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে, তারা কেবল একটি হিট গান–নির্ভর কোম্পানি নয়।
আইনি চ্যালেঞ্জপিংকফংয়ের যাত্রাপথ একেবারে কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ—এক মার্কিন সংগীতজ্ঞের সুর তারা নকল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, জনপরিসরে প্রচলিত লোকগান থেকে তারা সুর নিয়েছে।
আদালতের এই রায়ে তারা জোর পায়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলো।