আগামী শুক্রবার (১০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৯তম বিসিএসের (বিশেষ) এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষা। গতকাল (সোমবার) বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার আসনবিন্যাস, সময়সূচি ও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।

৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ২০২৫ হচ্ছে শিক্ষার বিশেষ বিসিএস। এ বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৬৮৩ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। ৪৯তম বিসিএসের (বিশেষ) ৬৮৩টি পদের জন্য মোট ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। প্রতিটি পদের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ৪৫৬ জনের বেশি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু০৫ অক্টোবর ২০২৫

সময়সূচি ও কেন্দ্র

১০ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকার ১৮৪টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষার্থীদের করণীয়

১.

পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটের পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।

২. পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র বিতরণ করা হবে। উত্তরপত্রের চারটি সেট থাকবে, যেমন সেট # ১, ২, ৩ ও ৪।

৩. প্রশ্নপত্র বিতরণের পর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত (দুপুর ১২টা) কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার কক্ষ ত্যাগ করতে পারবেন না।

৪. পরীক্ষাকেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড সদৃশ কোনো ডিভাইস, গয়না ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৫. পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুনঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি অনলাইন কোর্স, ঘরে বসেই শিখুন নতুন দক্ষতা০৫ অক্টোবর ২০২৫

৬. পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল পরিবর্তনের কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না।

৭. প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য শ্রুতলেখকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে এবং অন্য প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য পাঁচ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।

৮. পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল পরিবর্তনের কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না। এ পরীক্ষায় ২০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন। তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ (শূন্য দশমিক পাঁচ শূন্য) নম্বর করে কাটা হবে। পরীক্ষার জন্য পূর্ণ সময় দুই ঘণ্টা। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

*পরীক্ষাকেন্দ্র ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।

আরও পড়ুনধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ১০ম–সহ বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ, পদ ৪৯৮ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ দ র র পর ক ষ র দ র জন য প রব ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে

মিতা তখন খুবই ছোট। একদিন শুনলেন, তাঁর বাবা মাহাবুল ইসলাম হারিয়ে গেছেন। বাড়ির সবাই পাগলপ্রায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল মিতার বাবা ঢাকায় আছেন। রিকশা চালাচ্ছেন। বার্তাবাহকের মাধ্যমে মিতাদের চিন্তা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ঢাকায় গিয়ে কী করবেন, কোথায় উঠবেন, কিছুই ঠিক ছিল না। তাই কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম কাপড়চোপড়ের ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে এখানে-সেখানে ঘুমিয়েছেন। তারপর রিকশা চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।

মিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা একবারে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তাঁদের বাড়ি বাঘা উপজেলার চকনারায়ণপুর গ্রামে। এই গ্রামের বাজারেই পরে চায়ের দোকান দেন। সঙ্গে বিস্কুট-কলাও রাখেন। সেটি এখনো তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। তাতে কিছুতেই সংসার চলে না। বাবা তাই বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করেন। মাসে মাসে সেই ঋণের কিস্তি টানেন।

না পাওয়ার আঘাত নিয়ে বড় হওয়া

প্রতিটি ক্লাসেই কিছু সহযোগী বই কিনতে হয়। কোনো দিনই সেই বই একসঙ্গে কেনা হয়নি মিতার। সময় নিয়ে একটার পর একটা করে কিনতেন। এ জন্য ক্লাসের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো হতো না। শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর এই সংকটের বিষয়টা বুঝতে পারেন। তখন থেকে তাঁদের সৌজন্য সংখ্যাগুলো সব দিয়ে দিতেন। ওই দুই বছর আর বই নিয়ে সমস্যা হয়নি। মিতার ভাষায়, ‘জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছিলাম নবম শ্রেণিতে ওঠার পর।

আমি ফার্স্ট হয়েছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই জানে, আমি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হব। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবার মুখ ভারী। বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে অনেক খরচ। আমাদের অত সামর্থ্য নেই।’

এ কথা শুনে মিতার মতো তাঁর শিক্ষকদের মনেও বিষাদের ছায়া নেমে এল। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম। মানবিক বিভাগের বই নিতে গেলে মিতাকে পরপর তিন দিন তিনি ফিরিয়ে দিলেন, যেন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। শেষে মানবিকেই পড়তে হলো মিতাকে।

২০১৭ সালে বাঘার রহমতুল্লাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেন মিতা। নম্বর পেলেন ১১৯৪, মানবিক বিভাগ থেকে উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের যেকোনো কলেজে ভর্তি হতে পারতেন কিন্তু এবারও আর্থিক কারণে তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হলো স্থানীয় মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ (১১৪১ নম্বর) পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এবারও উপজেলার মধ্যে মানবিকে সর্বোচ্চ নম্বর মিতার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও বাধার মুখে পড়লেন মিতা। বললেন, ‘আমার মা (সেলিনা বেগম) অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাটা তিনি জানতেন। তাই আমার এসএসসির স্কলারশিপের ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছাগল কিনে রেখেছিলেন। আমি জীবনে অনেক ‘‘না’’ শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যেন আমাকে আরেকটা না শুনতে না হয়, সেই জন্য মা এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।’

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর মিতার বাবা রাজশাহীতেই মেয়েকে ভর্তি হতে বললেন। কিন্তু শিক্ষকদের চাপাচাপি আর পরামর্শে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মিতার শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করলেন।

মিতা বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখনকার ইউএনও শাহীন রেজাও সহযোগিতা করেছিলেন।’

শিক্ষকের শাড়ি পরে ভাইভা দিয়েছেন মিতা খাতুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে