বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়, নতুন তথ্য দেয় এবং অনেক সময় শেখার সুযোগও তৈরি করে। কিন্তু সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ যে জরিপ প্রকাশ করেছে, তা দেখায় ডিজিটাল জগতের এক অন্ধ দিকও আছে।

জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন ২৯ হাজার তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ বলেছেন, ভুল তথ্য বা ভুয়া খবর তাদের মানসিক চাপের প্রধান কারণ। ১২.

৫ শতাংশ বলেছে, বুলিং বা হেয় করা মন্তব্য তাদের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা। ক্ষতিকর কনটেন্টের কারণে মানসিক চাপ বোধ করছেন ১৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী। শুধু তাই নয়, তরুণদের ৫২ শতাংশ মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর আচরণ রোধ করতে নিয়ম থাকা জরুরি।

আরো পড়ুন:

প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দিল নেপাল

ছাত্রলীগ-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে জবি হল প্রাধ্যক্ষের ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি সূক্ষ্ম মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, যা অনেকেই বুঝতে পারলেও এড়িয়ে যেতে পারেন না। অবিরাম স্ক্রল, তুলনামূলক জীবনযাপন, লাইক–কমেন্টের সংখ্যা দেখে আত্মমূল্যায়ন—সবমিলিয়ে তরুণদের মনে হীনম্মন্যতা ও অনিশ্চয়তা জন্ম নিচ্ছে।

দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে ডুবে থাকায় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে, সৃজনশীল চিন্তাশক্তি কমে আসে। ভার্চুয়াল সম্পর্ক যত বাড়ে, ততই বাস্তব সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কমতে থাকে। ফলে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ নিঃসঙ্গতাও তৈরি হয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয় সাইবার বুলিংয়ের ভয়। কটূক্তি, অপমান, উপহাস—এসব তরুণদের আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়। শারীরিক সুস্থতাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ঘুমের ব্যাঘাত, চোখের সমস্যা এবং অবসাদ দেখা দেয়। মানসিক চাপের পাশাপাশি সময়ের অপচয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ—খেয়াল না করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে যায়।

তরুণদের ৭৯ শতাংশ বলেছে, যদি নিয়ম শিথিল করা হয়, তাহলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, শিশুরা এবং নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে।

এর আগে, ২০১৭ সালের একটি গবেষণায়ও দেখা যায়, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হীনম্মন্যতা ও দুশ্চিন্তা বাড়ায়।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তরুণদের উপস্থিতি থামানো সম্ভব নয়, আবার থামানোও উচিত নয়। কারণ সঠিক ব্যবহার করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও বিশ্ব-যোগাযোগের পথ তৈরি করে। তাই প্রয়োজন ডিজিটাল সচেতনতা, তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস এবং অনলাইনে একে অন্যের প্রতি সম্মানবোধ।

তরুণদের মনে রাখতে হবে, স্ক্রিনের আড়ালে থাকা প্রতিটি মানুষই বাস্তব মানুষের মতো অনুভূতি, মর্যাদা ও শারীরিক-মানসিক অনুভবের অধিকারী।

শিক্ষক, পরিবার ও নীতি-নির্ধারকদেরও দায়িত্ব রয়েছে তরুণদের পাশে দাঁড়ানোর। কারণ নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যৎ শুধু প্রযুক্তির নয়, মানসিক সুস্থতা ও মানবিকতার বিষয়।

(লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়)

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রমজান উপলক্ষে ১০ পণ্যের আমদানিতে নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দে

পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১০টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক নিখোঁজ

বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারে: বাংলাদেশ ব্যাংক

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর-এই ১০টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে। এ নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই আমদানি সহজীকরণের মাধ্যমে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখা ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর আগে রমজান মৌসুমে কিছু ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। পরে আমদানি পরিস্থিতি ও বাজারের চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সেই হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়, যা সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সংশ্লিষ্ট আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ