বগুড়ায় তোজাম্মেল হত্যা: ৩ জনের ফাঁসি, ৩ জনের যাবজ্জীবন
Published: 11th, November 2025 GMT
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ব্যবসায়ী তোজাম্মেল হক হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শাহজাহান কবির এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় এক আসামি ছাড়া সবাই অনুপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলিতে নিহত কে এই সরোয়ার?
দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩
বগুড়া জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল বাছেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নে বৈঠাভাঙ্গা গ্রামে তোজাম্মেল হককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—দুর্গাহাটা ইউনিয়নের দুর্গাহাটা গ্রামের বাবুল হোসেন, মানিক মিয়া ও মিশু। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—বৈঠাভাঙ্গা গ্রামের পিন্টু প্রামানিক, দেলোয়ার হোসেন ও আশিক। তাদের মধ্যে শুধু পিন্টু প্রামানিক আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক।
বগুড়া জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল বাছেদ জানান, ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিয়েবাড়িতে দাওয়াত পালন শেষে তোজাম্মেল মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই নয়ন মোল্লা ও ভাতিজা আসাদ। আগে থেকে ওত পেতে ছিলেন বাবুল হোসেন, মানিক মিয়া, মিশু, পিন্টু, দেলোয়ার হোসেন ও আশিক। বৈঠাভাঙ্গা গ্রামের চারমাথা মোড়ে তোজাম্মেল হক আসামাত্র আসামিরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করেন। তোজাম্মেলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় নিহতের ছোট ভাই ও ভাতিজা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
পিপি আব্দুল বাছেদ জানান, হত্যাকাণ্ডের পরের দিন নিহতের ভাই মমিন মোল্লা বাদি হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার রায়ে নিহতের স্বজনরা সন্তুষ্ট হলেও সাজাপ্রাপ্তরা বাইরে থাকায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী মমিন মোল্লা।
ঢাকা/এনাম/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিটি পরিচালনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদনের শুনানি ১৩ নভেম্বর
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর ওই রিটটি করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। আগের ধারাবাহিকতায় সম্পূরক তথ্যাদি এবং চুক্তি সম্পর্কিত পুরো প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদন দাখিল করেন রিট আবেদনকারী।
আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, বিগত সরকারের সময় ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়। ৫ আগস্টের পরও ওই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জিটুজির ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রজেক্ট প্রোফাইলে অনুমিত বিনিয়োগ হিসেবে ২০০ কোটি টাকা দেখা যায়, যা জিটুজি গাইডলাইনের সংশ্লিষ্ট বিধিরও পরিপন্থী।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও জনগণও এর বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থ এখানে জড়িত। জাতীয় স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিন মাসের স্থিতাবস্থা চাচ্ছেন।
শুনানিতে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, বিগত সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কাজ দেওয়ার জন্য ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে। বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে (কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানি) না করছে। এই সরকার কেন এটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? এটি দুর্ভাগ্যজনক।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকেরা টার্মিনাল পরিচালনা করতে সক্ষম। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা এ দেশেরই আছে। দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাবে, এটি হতে পারে না।
শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, রিট আবেদনকারীর আইনজীবীরা বিষয়টি অ্যাডভান্সড স্টেজে (অগ্রবর্তী ধাপ) চলে গেছে বলছেন। এখনো প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে, মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এখানে কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়নি।
এর আগে দেওয়া রুলে দেশি অপারেটরদের (প্রতিষ্ঠান) অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।
আরও পড়ুননিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল৩০ জুলাই ২০২৫