‘এই তুমি সামনে যাও, বেশি লাফাচ্ছ’, পুলিশ সদস্যকে কামরুল ইসলাম
Published: 11th, November 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বারের আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার শুনানি শেষে হাজতে নেওয়ার সময় পুলিশের এক সদস্যের ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। এ সময় সাবেক মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘এই তুমি সামনে যাও, তুমি বেশি লাফাচ্ছ’।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানার সামনে আজ মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
সকালে কামরুল ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে ঢাকার সিএমএম আদালতে নেওয়া হয়। পৌনে ১১টার দিকে আদালতে তোলার জন্য বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরানো হয় তাঁকে। এ সময় তিনি ডান হাতে থাকা লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছিলেন।
চারপাশে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ নিয়ে যায় কামরুল ইসলামকে। বেলা ১১টার দিকে কামরুল ইসলামকে অষ্টম তলায় আদালতে তোলা হয়।
কিছুক্ষণ পর তিনি বিচারক এজলাসে ওঠেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলামকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তিনি এ ঘটনার ইন্ধনদাতা। তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।
এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী আফতাব মাহমুদ চৌধুরী ও নসিম চৌধুরী আদালতে ওকালতনামা জমা দেন। জামিন শুনানি পরবর্তীতে করবেন বলেও জানান এই আইনজীবীরা।
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কামরুল ইসলাম বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘ আমিতো আগেই গ্রেপ্তার হয়ে ছিলাম। আবার কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে?’
তখন কামরুল ইসলামের আইনজীবীরা বলেন, এটা গত ৪ আগস্টের মামলা। অনেক পুরোনো মামলা। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো ওই সময় কারাগারে আটক ছিলাম। আচ্ছা ঠিক আছে। দিলে দেন।’ শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল ইসলাম তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর কামরুল ইসলামকে আদালতের লিফটে নামানো হয়। লিফট থেকে নেমে হাজতের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্যরা জোরে হাঁটতে চাইলে রেগে যান সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী। লাঠিতে ভর দিয়ে আস্তে ধীরে হাঁটেন তিনি। মাঝে তাঁকে কয়েকবার দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা যায়। ওই সময় এক পুলিশ সদস্য বারবার বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন।
তখন কামরুল ইসলাম ওই পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘এই তুমি সামনে যাও, তুমি বেশি লাফাচ্ছ।’ ওই পুলিশ সদস্য তখন তাঁর সামনে থেকে সরে যান। পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় লাঠিতে ভর দিয়ে হাজতে ফেরেন কামরুল ইসলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে নিয়ে প্রিজন ভ্যান কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশ্য যাত্রা করে।
কামরুল ইসলামের আইনজীবী আফতার মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটাসহ এ পর্যন্ত উনাকে ৩০টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
আরও পড়ুনকামরুল ইসলামের আরও ১৬টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ১০ এপ্রিল ২০২৫মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে একদল লোক ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেন।
এ সময় ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে এলে আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ হেলমেট পরে হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল তাক করেন। তখন আসামি ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ভুক্তভোগীকে গুরুতর আহত করেন।
এ ছাড়া অন্য আসামিরা স্লোগান দিয়ে বাদীসহ অন্য আইনজীবীদের কিলঘুষি মারে এবং লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আসামিরা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর এবং লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনআদালতের হাজতখানার বাথরুমে পড়ে মাথা কেটেছে কামরুল ইসলামের২৬ মে ২০২৫এ ঘটনায় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামীপন্থী ১৪৪ জন আইনজীবীরবিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী।
এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুনআদালত প্রাঙ্গণে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের একবেলা১৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য র আইনজ ব মন ত র র স মন এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে জাতীয় যুবশক্তির কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পরই সদস্যসচিবের পদত্যাগ
জাতীয় যুবশক্তির শরীয়তপুর জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে সংগঠনটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির একটি তালিকা পোস্ট করা হয়। এরপরই ওই কমিটির সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ (জিতু) পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) ও জাতীয় যুবশক্তির নেতারা জানান, গতকাল শরীয়তপুরের কয়েকজন নেতা জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রাতে ৪১ সদস্যের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে কাওসার মৃধাকে আহ্বায়ক ও আমিন মোহাম্মদকে সদস্যসচিব করা হয়।
ওই কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পর রাত ৯টা ২০ মিনিটে সদস্যসচিবের পদ থেকে আমিন মোহাম্মদ পদত্যাগ করেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাঁর ফেসবুক পেজে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
জানতে চাইলে আমিন মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিয়ে সামাজিক আন্দোলন করছি। এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গতকাল রাতে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছি। আজ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের কাছে লিখিত পৌঁছে দেব।’
জাতীয় যুবশক্তির শরীয়তপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক কাওসার মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শরীয়তপুরের বেশ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতারা বসেছিলেন। আমাদের নানা ধরনের প্রশ্ন করেছেন। তাঁরা আমাদের সম্পর্কে বুঝেছেন। ওই সভাগুলোতে আমাদের সঙ্গে আমিন মোহাম্মদ জিতুও ছিলেন। তাঁকে কমিটিতে রাখা হবে, এমন ইঙ্গিতও পেয়েছেন। এরপর রাতে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই দেখলাম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা বলতে পারছি না।’