অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন বলিউড তারকা ধর্মেন্দ্র। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কবি–চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতারসহ বিভিন্নজন শোকবার্তাও দেন। এসবের ভিত্তিতে অন্য দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমেও খবর আসে। ৮৯ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবরে যখন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব, তখন তাঁর মেয়ে এষা দেওল জানান, তাঁর বাবা এখনো বেঁচে আছেন।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই খবরটি প্রথম আসে সোমবার দিবাগত রাত তিনটা দশ মিনিটে। ইন্ডিয়া টুডে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পোস্ট দেয়—‘বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মঙ্গলবার মারা গেছেন বলে তাঁর টিম নিশ্চিত করেছে।’

এখানে ইন্ডিয়া টুডে সূত্র হিসেবে ‘ধর্মেন্দ্রর টিম’কে ব্যবহার করলেও কারও নাম উল্লেখ করেনি।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘আজ তক’ মিডিয়া তাদের প্ল্যাটফর্মে একই সংবাদ প্রকাশ করে। তবে সেখানে কোনো সূত্র উল্লেখ ছিল না—সংবাদের শুরুতেই লেখা হয়, ‘বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আজ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা গেছেন।’

এই দুটি সংবাদই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে। এরপর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য ইকোনমিক টাইমস, দ্য ফাইন্যান্স টুডে, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ডেইলি জাগরণ, দ্য ওয়্যার, জি নিউজ, টাইমস নাও, হিন্দুস্তান টাইমস, ইটিভি ভারত, এবিপি লাইভ ইংলিশ, নিউজ ১৮, ইন্ডিয়া.

কমসহ ভারতের নানা গণমাধ্যম এই সংবাদটি প্রকাশ করে।

ভারতীয় সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়।

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরপরই ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে ‘রিপ ধর্মেন্দ্র’ হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে শুরু করে। ভক্তদের পাশাপাশি সাংবাদিক ও সাধারণ ব্যবহারকারীরাও শোকবার্তা দিতে থাকেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুজবটি পুরো উপমহাদেশে ভাইরাল হয়ে যায়।

তার মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও তাঁর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে শোকবার্তা দেন। বিজেপি থেকে একসময় লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। সে কথা স্মরণ করে রাজনাথ সিং লেখেন, ‘বর্ষীয়ান অভিনেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ধর্মেন্দ্র জির মৃত্যুসংবাদে গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন এক বহুমুখী শিল্পী, যিনি ভারতীয় সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন।’

ধর্মেন্দ্রর সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘শোলে’–এর চিত্রনাট্যকারদের একজন জাবেদ আখতারও এক্সে লেখেন, ‘ধরমজির সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক যুগের অবসান ঘটল। তিনি ছিলেন শক্তি ও কোমলতার নিখুঁত সমন্বয়। তাঁকে চিরকাল মিস করব।’

এই দুই হাইপ্রোফাইল পোস্ট মৃত্যুর খবরটি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতজুড়ে ধর্মেন্দ্রর মৃত্যু ‘অফিশিয়াল সংবাদ’ হিসেবে প্রচারিত হতে থাকে।

এরপর সকালে মুখ খোলেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে অভিনেত্রী এশা দেওল। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন—‘মিডিয়া অতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে ভুল সংবাদ ছড়াচ্ছে। আমার বাবার অবস্থা স্থিতিশীল, উন্নতির দিকে।’

ধর্মেন্দ্রর স্ত্রী অভিনেত্রী হেমা মালিনীও ক্ষোভ প্রকাশ করে এক্সে লেখেন, ‘দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম কীভাবে এমন মিথ্যা খবর প্রচার করতে পারে, যখন তিনি চিকিৎসার সাড়া দিচ্ছেন? এটি সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসম্মানজনক।’

ধর্মেন্দ্রর ছেলে সানি দেওলের টিম একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, ‘মি. ধর্মেন্দ্র স্থিতিশীল আছেন এবং তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে গুজবে কান দেবেন না এবং পরিবারের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন।’

ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর গুজবের এই ঘটনায় দেখা যায়, ভারতের গণমাধ্যমগুলো যাচাই একটি ‘ভাইরাল সূত্র’ অনুসরণ করেছে। কোনো সংবাদই প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক বা অফিসিয়াল প্রতিনিধির মন্তব্য সংগ্রহ করেনি।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর সম্পর্কিত প্রতিবেদন সংশোধন করেছে।

ধর্মেন্দ্র এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। শাহরুখ খান, সালমান খান, আমিশা প্যাটেলসহ বলিউডের বহু তারকা হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাকে দেখতে।

এর আগে গতকাল সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ায় যে ধর্মেন্দ্রকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। পরে তাও ভুয়া বলে জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম ত য র খবর প রক শ ইন ড য় ট ইমস

এছাড়াও পড়ুন:

একে একে সবাই উঠে দাঁড়ালেন, করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানালেন: আয়রনম‍্যান আরাফাত

সেই অষ্টম শ্রেণি থেকে প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক আমি। বাসার কাছেই ছিল একটি ওষুধের দোকান। সেখানে পত্রিকা রাখা হতো। স্কুলে যাওয়া–আসার পথে সেই দোকানে বসে পত্রিকা পড়তাম।

কলেজে ওঠার পর প্রথম আলোতে একদিন বাংলা চ‍্যানেল পাড়ি দেওয়ার খবর পড়ি। পড়ে রোমাঞ্চিত হই। চিন্তা করি, কীভাবে সম্ভব সাগরে সাঁতার কাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও সেটি মাথায় ছিল। ২০১৩ সালে সাঁতারু লিপটন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। বাংলা চ‍্যানেল সাঁতরে পার হওয়ার ইচ্ছার কথা তাঁকে জানালাম। তিনি উৎসাহ দিলেন। শুরু হলো অনুশীলন। ২০১৫ সালে সাঁতরে পাড়ি দিলাম ওই চ্যানেল। সেই খবর ছাপল প্রথম আলো। কাছের-দূরের, কম পরিচিত-বেশি পরিচিত—সবাই খবরটা জেনে শুভেচ্ছা জানালেন। অনেক উৎসাহ পেলাম।

আমার রোমাঞ্চকর যাত্রা অব্যাহত থাকল। ২০১৭ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার মিশনে নামলাম। উদ্দেশ্য ছিল ‘দৌড়ের মাধ্যমে সুস্থতা’র বার্তা ছড়ানো। ২০ দিনের সেই যাত্রার গল্প ছাপা হলো ‘ছুটির দিনে’তে। শিরোনাম আজও মনে আছে, ‘দৌড়ে দৌড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’। খবরটি দেখে সেই দিন এতটা নার্ভাস লাগছিল যে সারা দিন আর কোনো কাজ করতে পারিনি।

‘চ্যালেঞ্জ রথ’ ট্রায়াথলনে বাংলাদেশের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একে একে সবাই উঠে দাঁড়ালেন, করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানালেন: আয়রনম‍্যান আরাফাত