ফরিদপুরে কর্মসূচি সফল করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকে টাকা দিয়েছেন নিক্সন, দাবি পুলিশের
Published: 11th, November 2025 GMT
ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি সফল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক হোসেনকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন—এমন দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল জলিল।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, ২০২১ সাল থেকে ফারুক হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের অনুপস্থিতিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি সফল করার জন্য ফারুককে পাঁচ লাখ টাকা দেন। এর মধ্যে চার লাখ টাকা তিনি ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তিকে দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মসূচির জন্য বিকাশে দলের নেতা-কর্মীদের অর্থ পাঠিয়েছেন। ফারুক যে ব্যক্তিকে চার লাখ টাকা দিয়েছেন, তাঁদের নাম পুলিশ জেনেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি সফল করা এবং সারা দেশে অচলাবস্থা তৈরির উদ্দেশ্যে ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফরিদপুর শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে আওয়ামী যুব মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা একত্র হন। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান, অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেন। এ ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা হলেন ফারুক হোসেন।
এ ঘটনার পর সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ শহরের ঝিলটুলী মহল্লার নূরজাহান টাওয়ারের ১০ তলায় অভিযান চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক হোসেন (৫৩) ও জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসরিন আক্তারকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার বলেন, ফারুক হোসেনের মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ছয়টি মামলা রয়েছে—এর মধ্যে চারটি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ও দুটি ঢাকায়।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিএনপি ২০২৩ সালের অসহযোগ আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেনি
বিএনপি ২০২৩ সালের অসহযোগ আন্দোলন কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেনি বলে দাবি করেছেন ‘জুলাই ঐক্য’ এর মুখ্য সংগঠক এবং ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, “সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। জুলাই সনদ ব্যর্থ করার কোনো ষড়যন্ত্র ছাত্রজনতা মেনে নেবে না।”
আরো পড়ুন:
সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, নৈতিক: প্রধান বিচারপতি
‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে গণভোটের মাধ্যমে। এখানে কোনো ধরনের কম্প্রমাইজের সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচনও জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ব্যর্থতা শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এখনো পর্যন্ত গণহত্যার বিচার হয়নি। আহত-পঙ্গু পরিবারগুলো আজও পথে পথে কান্নাকাটি করছে। আমাদের কথা বলার কথা ছিল দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার নিয়ে। কিন্তু আমাদের এখনো কথা বলতে হচ্ছে বিচার না হওয়ার বেদনা নিয়ে।”
মুসাদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, “অভ্যুত্থানের দেড় বছর পরও যে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পরিবর্তনের আশা করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। দায়িত্ব পাওয়ার পরই প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল- পুলিশ লীগ, র্যাব লীগ এবং সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের মাধ্যমে দায় নির্ধারণ করা। কিন্তু একজনেরও বিচার হয়নি। বরং অনেককে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দায়িত্ব পাওয়া অনেকেই এখন আর বিপ্লবের ভাষায় কথা বলেন না, বরং সুশীল আচরণের আড়ালে ফ্যাসিবাদী লীগের সুবিধাভোগী শ্রেণিকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যারা সংস্কারের কথা বলেছিলেন, তাদের মাঝেও শুধু ‘নজরুল ইসলাম থেকে আসিফ নজরুল’–এ রূপান্তর ঘটেছে, সংস্কার নয়।”
“নিষিদ্ধ ঘোষিত খুনি লীগ এবং জঙ্গি লীগ আবারো দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। তারা বিদেশে বসে ভিডিও বার্তা দিচ্ছে, দেশে নাশকতা ও ককটেল হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, আর প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি তাদের ছায়া দিচ্ছেন। যদি বিএনপি বা অন্য কোনো দল এমন কর্মকাণ্ড করত, তবে এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হতো। কিন্তু এদের ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব,” বলেন মুসাদ্দিক।
মুসাদ্দিক সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যারা সরকারের অভ্যন্তরে বসে নিষিদ্ধ লীগকে পুনর্বাসনে কাজ করছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাদের একটাই ঠিকানা জেল।”
খুনি হাসিনার ফাঁসি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিভাগীয় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া ১৩ নভেম্বর দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সামনে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন তিনি।
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনা ঘাঁটি স্থাপনের খবর প্রসঙ্গে মুসাদ্দিক সরকারের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “পররাষ্ট্র নীতিতে নরম ভাব দেখানোর দিন শেষ। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তে যেকোনো সামরিক প্রস্তুতির জবাবে বাংলাদেশকেও সমানভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।”
মুসাদ্দিক বলেন, “জুলাই সনদই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভিত্তি। এটি বাস্তবায়ন না হলে ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে আসবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী