পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী–সংকটে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চ কমানোর উদ্যোগ নেয় লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা। প্রতিদিন চারটি লঞ্চের স্থলে সিন্ডিকেট করে প্রথমে তিনটি ও পরে দুটি লঞ্চ চলাচলের উদ্যোগ নেয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে কেবিনের চাহিদা বাড়ে। এ সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে টিকিট কালোবাজারি চক্র। বর্তমানে চক্রের দৌরাত্ম্যে লঞ্চের কেবিন যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কালোবাজারি চক্র ঢাকা ও বরিশাল দুই প্রান্তে আগে-ভাগে সব টিকিট বুকিং করে রাখে। লঞ্চ ছাড়ার দিন কিংবা আগের দিন বুকিং অফিসে গিয়ে টিকিট পাওয়া যায় না। সরাসরি লঞ্চে গেলেও কর্মচারীরা টিকিট নেই বলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কালোবাজারে সেই টিকিট দ্বিগুণ বা তারও বেশি দামে পাওয়া যায়। শুধু কেবিন নয়; ডেকে তোশক বিছিয়ে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করছে চক্রটি।

যাত্রীদের ভাষ্য, কালোবাজারি সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্য শুরু হয় গত বছরের নভেম্বর থেকে। এখন চক্রটি আরও বেশি সক্রিয়।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে লঞ্চের কেবিন বুকিং দিতে যান বেসরকারি চাকরিজীবী আদিলুর রহমান। তাঁরা তিন বন্ধু কুয়াকাটায় যাওয়ার জন্য লঞ্চে বরিশাল আসতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ২ হাজার টাকা ভাড়ার একটি ডাবল এবং এক হাজারের একটি সিঙ্গেল কেবিন বুকিং দিতে যান। কিন্তু সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের কোনো টিকিট পাননি। পরে কালোবাজারি চক্রের এক সদস্য ডাবল কেবিন ৪ হাজার এবং সিঙ্গেল কেবিন ২ হাজার টাকা ভাড়া দিলে দেওয়া যাবে বলে জানান। আদিলুর প্রথম আলোকে বলেন, কালোবাজারে কেবিনের ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় তাঁরা পরে বাসে কুয়াকাটায় গিয়েছেন।

হারুন অর রশিদ নামের আরেক যাত্রী শুক্রবার ঢাকায় যেতে একই লঞ্চে একটি সিঙ্গেল কেবিনের জন্য ঘুরেও টিকিট পাননি বলে অভিযোগ করেন।

সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ঢাকা থেকে বরিশালের টিকিট দুদিন আগেই সব বুকিং হয়ে গিয়েছিল।’ কিন্তু কালোবাজারে টিকিট কীভাবে গেল—প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা বলতে পারব না।’

পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন ঢাকা থেকে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ লঞ্চে বরিশালসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যেতেন। সেতু চালুর এক বছর পর এ সংখ্যা ১৭ হাজার কমে ৩৩ হাজার হয়েছিল। এ হিসাবে ঢাকার লঞ্চযাত্রী কমেছিল ৩৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল।

এসসিআরএফ জানায়, আগে ঢাকা থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চের যাত্রী। পদ্মা সেতু চালুর পর এসব জেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করেন। এ জন্য নৌপথে যাত্রী ও লঞ্চ—দুটোই কমেছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল নদীবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন ১৫ ও ১৬ লঞ্চ বরিশাল বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেখা যায়, দুটি লঞ্চেই ডেকে তোশক বিছিয়ে রাখা। লঞ্চের কর্মচারীরা প্রতিজনের ৩০০ টাকা ভাড়াসহ তোশক ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বসার স্থান পাচ্ছিলেন না। অনেকের হাতে চাদর থাকলেও তা বিছানোর জায়গা পাচ্ছিলেন না।

আবদুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘টাকা ছাড়া এখন ডেকেও জায়গা পাওন যায় না। এ কেমন নিয়ম!’ তিনি বলেন, লঞ্চের ডেকে তোশক বিছিয়ে যাত্রীদের থেকে ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। তাই ডেকে বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জায়গা কিনছেন।

আল আমিন নামের আরেক যাত্রী জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর তিনি দুটি কেবিনের জন্য দুই দিন আগে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনো কেবিন পাননি। বাধ্য হয়ে তাঁদের ডেকে যেতে হয়েছে।

কেবিন ফাঁকা, তবু যাত্রীরা কেবিন চাইতে গেলে কেবিন ফাঁকা নেই বলে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন-১৬ লঞ্চে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ