মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেলেন চন্দনাইশের অপহৃত পাঁচ শ্রমিক
Published: 12th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত এক কাঠুরিয়া ও চার শ্রমিক মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ও রাতে তাঁদের মুক্তি দেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা।
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া শ্রমিকেরা হলেন কাঠুরিয়ার আহমদ হোসেন (৫৫), কৃষিশ্রমিক মো. রহিম (৩৫), বদিউল আলম (৩০), মো. কামাল (৪০) ও মো. জুনায়েদ (৪৫)।
গতকাল সকালে কাঞ্চননগরের পাহাড় থেকে কাঠুরিয়া আহমদ হোসেনকে এবং দুপুরে হাশিমপুরের পাহাড়ি এলাকা থেকে অপর চার শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারী ব্যক্তিরা পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
কাঠুরিয়া আহমদ হোসেন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেন জোয়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী। অপহৃত বাকি ৪ কৃষক ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান বলে জানান উপজেলার হাসিমপুর ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও বাগানমালিক নুরুন্নবী সওদাগর।
জোয়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী বলেন, গতকাল সকালে আহমদ হোসেনসহ দুজন কাঠুরিয়া কাঞ্চননগরের পাহাড়ে কাঠ কাটতে যান। এ সময় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। সন্ত্রাসীরা আহমদ হোসেনকে নিয়ে গেলেও তাঁর সঙ্গী অপর কাঠুরিয়া মুন্সি মিয়া পালিয়ে আসেন। পরে সন্ত্রাসীরা আহমদ হোসেনকে মারধর করে মুঠোফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দিয়ে আহমদ হোসেনকে মুক্ত করে আনেন।
অপর চার শ্রমিকও মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেন সৈয়দাবাদ গ্রামের বাগানমালিক নুরুন্নবী সওদাগর। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ১০ জন শ্রমিক গতকাল বেলা ৩টার দিকে হাসিমপুর পাহাড়ি এলাকায় তাঁর পেয়ারা ও লেবুর বাগান পরিষ্কার করতে যান। এই সময় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাঁদের ধরতে গেলে ছয়জন শ্রমিক পালিয়ে আসেন। বাকি চার শ্রমিককে তাঁরা অপহরণ করে নিয়ে যান। পালিয়ে আসা শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, অপহরণকারী ব্যক্তিরা পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসী। তাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর হবে। শ্রমিকদের একজনের মুঠোফোন থেকে সন্ত্রাসীরা ফোন করে বাগানমালিক নুরুন্নবীর কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ সময় একজনের মাধ্যমে তিনি ৬০ হাজার টাকা পাঠানোর পর শ্রমিকদের রাত ১১টায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরান আল হোসাইন বলেন, ‘শুনেছি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা গতকাল সকালে এক কাঠুরিয়াকে অপহরণ নিয়ে গেছে। পরে আবার তাকে বিকেলে ছেড়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিকেলের দিকে আরও চারজন কৃষককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাদেরও রাত ১১টার দিকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জানি না। এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষক সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতা। এছাড়া গত ৮ বছর ধরে একই শিক্ষক বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা গত ৮ বছর ধরে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যা ২০০৫ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৪(২) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইন অনুযায়ী, বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে পালাক্রমে ৩ বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করায় এর কার্যক্রম ও জবাবদিহিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া বিভাগটিতে বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে প্রায় ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন মাত্র নয়জন, এর মধ্যে তিনজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ফলে মাত্র ছয়জন শিক্ষককে এই পুরো বিভাগ সামলাতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের বারবার শিক্ষা ছুটিতে যাওয়া পাঠদানের ধারাবাহিকতা ভেঙে দিচ্ছে এবং একাডেমিক সহায়তায় তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগে নেই সুনির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন বা একাডেমিক গাইডলাইন। ফলে সেশনজট তীব্র হয়ে উঠেছে। যেখানে অন্যান্য বিভাগে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরের শেষপ্রান্তে, সেখানে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেনি। এমনকি ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এখনও চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিভাগের সবচেয়ে বড় সমস্যা নেতৃত্বের অভাব। চেয়ারম্যান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সময় দিতে পারেন না। পক্ষপাতমূলক আচরণও চোখে পড়ার মতো।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “আপনি আমাদের বিভাগের অফিসে কথা বলুন। সেখান থেকে সব জানতে পারবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সহ-সভাপতি এবং খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। তিনি ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক, আনন্দধ্বনীর সদস্য এবং জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (২০০৭) এবং বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (২০২৪) লাভ করেছেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী