টাঙ্গাইলে বারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রথম আইনজীবী জন জেত্রা
Published: 12th, January 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম আইনজীবী হয়েছেন জন জেত্রা। তিনি শুধু মধুপুরের গারো জাতিগোষ্ঠীর প্রথম আইনজীবী নন, টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির প্রথম গারো জাতির সদস্য। ১৩৭ বছরের আগে প্রতিষ্ঠিত জেলা বারে জন জেত্রার আগে গারো জাতির কেউ আইনজীবী হিসেবে যোগ দেননি।
নিজ জাতিগোষ্ঠীর একজন আইনজীবী পেয়ে মধুপুরের গারোরা গর্বিত। আবার টাঙ্গাইলের আইনজীবীরাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই আইনজীবীকে গ্রহণ করেছেন ভালোবাসায়।
৩৪ বছর বয়সী জন জেত্রা টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর যোগদান করেন। তিনি এখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহজাহান কবিরের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি গারো জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও অংশ নিয়েছেন। ইকোপার্ক–বিরোধী আন্দোলন, গারোদের জমিতে বন বিভাগের লেক খননবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন–সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তিনি মধুপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
জন জেত্রা ১৯৯০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মধুপুর গড় এলাকার ভুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম জর্নেশ নকরেক, মা মির্জনী জেত্রা। চার ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় জন জেত্রা। তিনি ভুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ২০০৭ সালে পীরগাছা সেন্ট পৌলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। মধুপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। পরে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন।
আজ রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জন জেত্রা আদালত ভবন থেকে মামলার শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট বার সমিতির নিচতলায় তাঁর সেরেস্তায় আসছেন। সেখানে আসার পর সেবাপ্রার্থীদের আইনগত পরামর্শ ও নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কাজ করার পর তিনি বেলা দুইটার দিকে বের হয়ে আসেন। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, বারে যোগদানের পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধুপুর অঞ্চলের গারো জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বন মামলাসহ অনেক মামলায় জর্জরিত। তাঁরা আইনগত পরামর্শের জন্য, আইনগত সহায়তার জন্য তাঁর কাছে আসেন। তিনি গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম আইনজীবী। তাই গারোরা এবং মধুপুর অঞ্চলের বাঙালিরাও তাঁর প্রতি আস্থাশীল। টাঙ্গাইলের আইনজীবীদেরও স্নেহ–ভালোবাসা তিনি পাচ্ছেন।
জন জেত্রা বলেন, ‘আমি আইন পেশায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পাশাপাশি আমার জাতির মানুষের আইনগত অধিকার আদায়ে কাজ করে যেতে চাই। আমি আমার জাতির মধ্যে টাঙ্গাইলে প্রথম আইনজীবী হয়েছি। আমার কাছে অনেক আশা আমার জাতির মানুষের। আমি তাঁদের পাশে থাকতে চাই। আমি টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান করে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। তবে প্রতি শুক্র, শনিবারসহ অনান্য বন্ধের দিন মধুপুরে নিজ এলাকায় অবস্থান করি। সেখানে অনেকেই আমার কাছে আসেন আইনগত পরামর্শের জন্য। আমি তাঁদের পরামর্শ দিই।’
মধুপুরের জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, মধুপুরের গারো জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু জন জেত্রাই প্রথম এই জাতি থেকে বার কাউন্সিলের সনদ লাভ করে আইন পেশায় যোগদান করেছেন। তিনি আমাদের গর্ব। তাঁকে দেখে আরও অনেকেই আইন পেশায় যোগদান করতে উৎসাহিত হবেন।
টাঙ্গাইলের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো জাতিগোষ্ঠীর অনেক লোকের বসবাস। কিন্তু জন জেত্রার আগে এই জাতির কেউ টাঙ্গাইল আদালতে আইন পেশায় আসেননি। জন জেত্রা ক্ষুদ্র একটি জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রথম আইনজীবী হয়েছেন। এটা আনন্দের বিষয়।
টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহান শাহ সিদ্দিকী ওরফে মিন্টু বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বারে বর্তমানে ৮৩০ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে জন জেত্রা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একমাত্র সদস্য। ওকালতনামায় তাঁর ক্রমিক নম্বর ৭৯৪। তিনি টাঙ্গাইল বারে গারো জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা প্রথম আইনজীবী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অপর চার আসামি হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।
দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন১০ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর০৪ মার্চ ২০২১এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুনআজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত লেখক মুশতাক২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১