সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান
Published: 12th, January 2025 GMT
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন ব্যক্তি এবং নারী ও শিশুদের সুরক্ষা মাথায় রেখে আইন প্রণয়ন জরুরি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ও মতামত গ্রহণের পাশাপাশি আইনের অপব্যবহার রোধে সংজ্ঞাগুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে।
রোববার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি), সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন এবং সেফটি নেট এ সভার আয়োজন করে।
এতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া ইসলাম বলেন, অভিবাসী নারী শ্রমিক অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের শিকার হন। দৃষ্টি, বাক্প্রতিবন্ধী নারীরা আদালতে বৈষম্যের সম্মুখীন হন। আইনে তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টি স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, এই অধ্যাদেশের নামটি ভুল। এটা সাইবার সুরক্ষা না, নিরাপত্তা হবে। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
অধ্যাদেশটিতে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু নেই উল্লেখ করে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নারীদের প্রসঙ্গটিও স্পষ্ট নয়। ব্ল্যাকমেলের বা অশ্লীলতার দায়ে মামলা পর্নোগ্রাফি আইনে নাকি সাইবার আইনে বিচার হবে, তা স্পষ্ট করা জরুরি।
সভায় বিভিন্ন কমিউনিটির নারীরা নিজেদের চ্যালেঞ্জের কথাগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, সাইবার প্রক্রিয়া, তথ্যের ব্যবহার সহজীকরণের পাশাপাশি সব থানায় একজন সাইবার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী ব্লাস্টের পক্ষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের উদ্বেগ ও সুপারিশ তুলে ধরেন। অধ্যাদেশের প্রধান প্রিয়া আহসান চৌধুরী উদ্বেগ হিসেবে বলেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের অভাব, সংজ্ঞা ও অপরাধের অস্পষ্টতা, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রকে যুক্ত করে তা কার্যকর আরও জটিল করে তুলবে, বাক্স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জব্দ, তদন্ত, বিচারের বিষয়ে অস্পষ্টতা, শাস্তিসংক্রান্ত নির্দেশিকার অভাব। আইনের অপব্যবহার রোধে বিধানগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন।
আইআইডির প্রধান নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্লাস্টের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মনীষা বিশ্বাস ও লিগ্যাল স্পেশালিস্ট আয়শা আক্তার, অগ্নি ফাউন্ডেশনের সভাপ্রধান এবং মেয়ে নেটওয়ার্কের সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদের সদস্য শারমিন আকতার, দলিত নারী ফোরামের কমিউনিটি মবিলাইজার পূজা রানী, অ্যাকটিভিস্ট ও লেখক ম্যা মো খাইং প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।