ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চান: যে চার ধারায় এই গাথা চলতে থাকতে পারে
Published: 13th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আবারও গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অনেকাংশে স্বায়ত্তশাসিত একটি অঞ্চল। একই সঙ্গে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে প্রথমবার গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক বা সামরিক বলপ্রয়োগের কথাও উড়িয়ে দেননি তিনি।
ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
এই ঘটনা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজের অবস্থানটি গুছিয়ে নেওয়া।সহযোগী অধ্যাপক মার্ক জ্যাকবসেন, দ্য রয়্যাল ড্যানিশ ডিফেন্স কলেজ।এখন প্রশ্ন উঠছে, ৮০ শতাংশ বরফ আর নিচে খনিজ সম্পদের সুপ্ত মজুত থাকা—এমন এক বিশাল একটি ভূখণ্ড নিয়ে দুই ন্যাটো মিত্রের মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামে? পাশাপাশি ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রিনল্যান্ডের ৫৬ হাজার মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এই পরিস্থিতির চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে?
সামনে গ্রিনল্যান্ডের জন্য সম্ভাব্য যে চারটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প নিছক ফাঁকা হুংকার ছেড়েছেন। এটা তিনি করেছেন ডেনমার্ককে দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য। অঞ্চলটিতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায় রাশিয়া ও চীন। সেই হুমকির মুখেই ট্রাম্পের এই তৎপরতা।
সুমেরু অঞ্চলের নিরাপত্তায় গত মাসে ১৫০ কোটি ডলারের নতুন একটি সামরিক তহবিল বরাদ্দ করেছে ডেনমার্ক। ট্রাম্পের মন্তব্যের আগেই এই তহবিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর ঘোষণাটি আসে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর। এ ঘটনাকে ‘ভাগ্যের পরিহাস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ড্যানিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পলিটিকেন পত্রিকার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক এলিসাবেথ ভেইন বলেন, ‘ট্রাম্পের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, ডেনমার্ককে আর্কটিকে তার বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে হবে, নয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে তা করতে দিতে হবে।’
কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প নিছক ফাঁকা হুংকার ছেড়েছেন। এটা তিনি করেছেন ডেনমার্ককে দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য।যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ চান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ