ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ধংসস্তূপের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। আজ বুধবার সকাল থেকে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা গণপূর্ত বিভাগ।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, সারাদেশে অভিন্ন বাজেটে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। আগামী ৫ আগস্টের আগে এ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এ কাজের কত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তার জানা নেই দাবি করে  তিনি বলেন, ‘ডাইরেক্ট প্রক্রিউরমেন্ট মেথডে’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে শহরের হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কের উত্তর পাশে নির্মিত আওয়ামী লীগে কার্যালয়ের যে কাঠামোটুকু অবশিষ্ট ছিল; তা বড় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত আছেন সাতজন নির্মাণশ্রমিক। কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদার সোহান আল মামুন। তিনি জানান, গণপূর্তের এ কাজটি তারা পেয়েছেন। আজ থেকে তারা কাজ শুরু করেছেন।

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়টি যেখানে ছিল সেই জায়গাটির মালিকানা জেলা প্রশাসন। ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের নামে ২৬ শতাংশ জমি একশনা বন্দোবস্তের ভিত্তিতে ইজারা নেন শামীম হক। পরে ওই জায়গাটি শেখ রাসেল স্কয়ার নামে পরিচিতি পায়। শামীম হক পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পরে ওই জায়গায় শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। এ কার্যালয়টি ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের দুই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও আব্দুর রহমান।

জুলাই আন্দোলনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ৪ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরদিন ৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফার হামলায় বিক্ষুব্ধ জনতার রুদ্ররোশে কার্যালয়টি ধংসস্তূপে পরিণত হয়। গত ইদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় ওই জায়গাটি দুঃস্থ ব্যক্তিদের জন্য স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দেশব্যাপী ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে। গত সোমবার (৭ জুলাই) জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদপুর শহরে কোথায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যায় সে ব্যাপারে সরেজমিনে কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করেন।

তিনি জানান, এর মধ্যে বর্তমানে যে জায়গায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে সে জায়গাসহ পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে একাত্তরের শহীদের নাম সম্বলিত বেদির আশে পাশে ও রাজবাড়ি রাস্তার মোড় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জায়গাটি যেটি পরে ন্যায্যমূল্যের সামগ্রী বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল নিরাপত্তাসহ সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে জুতসই হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন আরও বলেন, এ নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হবে এবং আগামী ৫ আগস্ট সরকারি উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে নতুন করে নির্মিত জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের এই বেদীতেই পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন স ম ত স তম ভ ন র ম ণ ন র ম ণ কর গণপ র ত আওয় ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

সম্মাননা দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়

লেখকের সবচেয়ে বড় সম্মাননা পাঠকের কাছ থেকে পাওয়া, যখন তাদের কেউ তার বই পড়ে। পাঠকের প্রতিটি পাঠই এই সম্মাননা এনে দেয়, যার জন্য লেখক লিখতে উৎসাহ পায়। এই পাঠকপ্রিয়তা ছাড়া কোনো লেখক কেবল নিজের মনের আনন্দে লিখে যেতে পারে না।
পাঠকপ্রিয়তার পরে আসে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা। লেখকের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন সম্মাননা দেয় তার পেছনে থাকে লেখকের পাঠকপ্রিয়তা এবং তার কাজের সার্বিক মূল্যায়ন। পাঠকপ্রিয়তা ব্যক্তি-পাঠক থেকে একটা গোষ্ঠী হয়ে সমগ্র পাঠকশ্রেণির হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা নৈর্ব্যক্তিক, যদিও এর পেছনে বিশেষজ্ঞদের বিচার-বিশ্লেষণ কাজ করে।
আমি কয়েকটি সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার পেয়েছি (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাংলা একাডেমি, একুশে পদক)। বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা পেয়েছি ট্রাস্ট ব্যাংক-অন্যদিন-এর যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালে কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য। ২০২৫ সালের ৪ জুলাই ব্র‍্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের অংশ হিসেবে যে আজীবন সম্মাননা পেলাম তার আনন্দ অভূতপূর্ব। এই প্রথম এখন পর্যন্ত  সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় আমার অবদানের মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই স্বীকৃতি পাওয়ার কৃতিত্ব আমার একার না, অনেকের। তাদের মধ্যে নিকটজন, শুভার্থী, প্রকাশক যেমন আছেন, গুরুত্বপূর্ণভাবে আছেন আমার পাঠক।
পঞ্চাশের দশকে আমার লেখালেখির যখন শুরু, এর পেছনে শখই ছিল প্রধান। তারপর একসময় দায়বদ্ধতার জন্য লেখা শুরু হলো। ভেতর থেকে কেউ বলল :  মানুষের জন্য লেখো, সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লেখো, শান্তি ও প্রগতির জন্য লেখো, সাম্য ও  সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লেখো। সেই থেকে শখ নয়, দায়বদ্ধতার জন্য লিখছি। স্মরণ করছি কবির উক্তি: ‘অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়, আছে এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর।’ আমি সেই বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে লিখছি।
লেখা শুরু করার এই এত বছর পরও মনে হয় এখনও সব বলা হলো না। সেরা লেখাটা সামনে থেকে হাতছানি দিচ্ছে। এখনও কত বিষয়ের নিগূঢ় রহস্য জানা বাকি, কত বর্ণনাশৈলী নাগালের বাইরে রয়ে গিয়েছে। জানি সে সবের প্রাপ্তিতে যবনিকাপাত ঘটবে না লেখালেখির ওপর। লেখক হিসেবে আমার যাত্রা নিরন্তর, আমৃত্যু-আজীবন। কানের কাছে শুনি দূরদেশের কবি বলছেন:  I have promises to keep/ I have miles to go before I sleep.
দীর্ঘ যাত্রার পথিক আমি মাঝে মাঝে ক্লান্তি বোধ করি। তখন দায়বদ্ধতার কথা মনে পড়ে, যে বিষয়গুলো আমার লেখার অপেক্ষায় আছে তাদের হাতছানি দেখতে পাই। বিরতি না দিয়ে আমি লিখতে থাকি। লিখে যাব যতদিন হাতে কলম তুলে নিতে পারি। আমাকে উৎসাহ দেবে আমার অচেনা অদৃশ্য পাঠক। আমাকে উজ্জীবিত করবে সম্প্রতি পাওয়া ব্র‍্যাক ব্যাংক-সমকাল আজীবন সম্মাননা।
আজীবন সম্মাননা বলছে আমাকে আমৃত্যু লিখে যেতে হবে। নতুন কিছু দিতে হবে, আরও ভালো করে লিখতে হবে। পাঠকপ্রিয়তার মতো, সম্মাননাও দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি সম্মানিত বোধ করছি। সেই সঙ্গে উপলব্ধি করছি আমার দায়বদ্ধতার কথা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ