ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সফল কোচ পেপ গার্দিওলা তার কোচিং ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটিকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে সংসার টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলেন তিনি। ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন গার্দিওলা ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিনা সেরা।  

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে তাদের। পারস্পরিক সম্মতিতে এবং সম্পূর্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে এই বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা আলাদা দেশে বসবাস করছিলেন। গার্দিওলা ছিলেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে এবং ক্রিস্টিনা স্পেনের বার্সেলোনায়। ডিসেম্বর মাসে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শুধু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা জানতেন।  

গার্দিওলা তার স্ত্রীকে নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক কিছুর ক্ষেত্রে সেরা, বিশেষ করে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে। তিনি আমাকে পরামর্শ দেন কী পরা উচিত আর কী নয়। আমি যথেষ্ট স্মার্ট যে বুঝতে পারি, তার পরামর্শগুলো আমার জন্য ভালো।’

ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ও লেখক ক্রিস্টিনার সঙ্গে ১৯৯৪ সাল থেকে যৌথযাত্রা শুরু হয় গার্দিওলার। এরপর বার্সেলোনায় তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১৪ সালে। কিন্তু বিয়ের ১০ বছরের মাথায় নিজেদের পথ আলাদা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই দুজন। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে- ২৪ বছর বয়সী মারিয়া, ২২ বছর বয়সী মারিয়াস এবং ১৭ বছর বয়সী ভ্যালেন্তিনা।

ক্রিস্টিনা সেরা পেপ গার্দিওলার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলিতে সবসময় পাশে ছিলেন। ২০২৩ সালের জুনে ইস্তানবুলে গার্দিওলা যখন ম্যানচেস্টার সিটিকে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়ে ট্রেবল জিতিয়েছিলেন, তখন ক্রিস্টিনাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একই বছর জুলাইয়ে উইম্বলডনে এই দম্পতিকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।

২০১৯ সালে সেরা তার পরিবারের ফ্যাশন কোম্পানি সেরা ক্লারেট পরিচালনার জন্য ম্যানচেস্টার ছেড়ে বার্সেলোনায় ফিরে যান। বিচ্ছেদের খবরের মাঝে গার্দিওলার দল ম্যানচেস্টার সিটি মাঠেও কিছুটা চাপে রয়েছে, কারণ চলতি মৌসুমে তারা শীর্ষ চারে নেই। গার্দিওলার অধীনে এমন বাজে পারফরম্যান্স কখনো দেয়নি ম্যানসিটি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ