রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ইউজিসি ও পিএসসিতে সদস্য নিয়োগ না দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা‌ সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ইউজিসিতে সর্বনিম্ন একজন এবং পিএসসিতে সর্বনিম্ন দুইজন সদস্য নিয়োগের দাবি জানান। আগামী রবিবারের মধ্যে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না এলে আন্দোলন আরো কঠোর হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তারা।

মানববন্ধনে রাবি স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজিব বলেন, “আমরা যে আন্দোলনে দাঁড়িয়েছি, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রিক বৈষম্য আমাদের সেই স্বপ্নে বাধা সৃষ্টি করছে। ইউজিসি ও পিএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি নেই— এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বৈষম্যমূলক।”

তিনি বলেন, “ইউজিসিতে অন্তত একজন এবং পিএসসিতে অন্তত দুইজন প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দিতে হবে। এই দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

আইসিটি সেন্টারের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক ড.

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাবি থেকে পূর্বে ইউজিসি ও পিএসসিতে নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু এই বছর ২৪-এর গণবিপ্লবের পর সরকার ইউজিসি ও পিএসসিতে একজনকেও নিয়োগ দেয়নি। ইউজিসির ভূমিকা শিক্ষার মান ও পরিবেশ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে একজনও রাবি থেকে নিয়োগ নেওয়া হয়নি।”

তিনি বলেন, “পিএসসিতেও বিসিএসসহ বিভিন্ন ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তারাও ঢাকা-কেন্দ্রিক। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়।”

ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, “আমরা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে চেয়েছি বাংলাদেশের সমস্ত বৈষম্য দূর হবে। এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে গবেষকদের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ।”

তিনি বলেন, “বিগত দিনগুলোর কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য হয়েছেন। কিন্তু এবার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৭/১৮ জন নিয়োগ পেলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “রাবি থেকে আজ পর্যন্ত একজনকেও ইউজিসি বা পিএসসিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এটা কি বৈষম্য নয়? এ কারণেই কি আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি? এ বৈষম্যকে দূর করতে আমাদের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করবে এবং যতোক্ষণ পর্যন্ত না এ বৈষম্য দূর করা করা হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা চাই দেশের সবখানে বৈষম্য দুর হোক।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও প এসস ত ইউজ স

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • আরো একজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র, আশঙ্কাজনক ৩
  • অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
  • সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • পাবনায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় প্রতিবাদ অব্যাহত, একজন গ্রেপ্তার
  • মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মিছিল-সমাবেশ
  • নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন