জামায়াতের লড়াই চালু থাকবে: ডা. শফিকুর
Published: 17th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘দেশ দুর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে। এ লড়াইয়ে দেশের মানুষকে আমরা পাশে চাই। এদেশ হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলের। কাজেই সুন্দর দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস চত্বরে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমন একটা দেশ গড়তে চাই, যেখানে ব্যবসায়ীদের কাছে কেউ চাঁদাবাজি করবে না, হুমকি দিবে না, কেউ দখলবাজি করবে না, ঘুষ খাবে না। আর এমন দেশ গড়তে গেলে কোরআনের আইন চালু করতে হবে। আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তারা এমন বৈষম্যমুক্ত দেশ চাই। আমাদের সন্তানেরা যে স্বপ্ন নিয়ে প্রাণ দিয়েছে, সে স্বপ্ন পূরণে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না। আমরা কখনো কোনো কারো সাথে আপস করব না।’’
এসময় জেলা জামায়াতের আমির ড.
এর আগে জামায়াতের আমির উপজেলার রাজাপুর বাজার ও ধানাইদহ বাজারে আলাদা পথসভায় বক্তব্য দেন। আগামীকাল শনিবার তিনি রাজশাহীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
ঢাকা/আরিফুল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন করে নিপীড়নের শিকার কাশ্মীরের মুসলমানরা
ভারত শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দা শাবির আহমেদ দার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশমিনা শাল বিক্রি করে আসছেন। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একটি পাহাড়ি শহর মুসৌরিতে, যেখানে তিনি কাজ করেন, সেখানে তার গ্রাহকদের কাছে জটিল সূচিকর্ম করা পালকের ওজনের স্কার্ফগুলো খুবই প্রিয়।
শাবিরের ক্রেতাদের কাছে শালগুলো বিলাসিতায় পরিপূর্ণ। এগুলো ঘরের রূপক; এর ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ইতিহাসের স্তরে স্তরে স্তরে মিশে আছে এবং এর কাশ্মীরি পরিচয়ের চিহ্ন।
কিন্তু সম্প্রতি, একই পরিচয় অভিশাপের মতো মনে হচ্ছে।
রবিবার শাবির ও আরেকজন বিক্রয়কর্মী একটি হিন্দু ডানপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে প্রকাশ্যে হয়রানি ও লাঞ্ছিত হন। গত সপ্তাহে কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে ২৬ জনকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এই হিন্দু গোষ্ঠীটি।
শাবিরের ওপর হামলর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যস্ততম বুলেভার্ডে অবস্থিত শাবির এবং তার বন্ধুর দোকান ভাঙচুর করা হচ্ছে। তাদের মারধর এবং গালিগালাজ করছে হিন্দুরা।
শাবির বলেন, “আক্রমণের জন্য তারা আমাদের দোষারোপ করেছে, আমাদের শহর ছেড়ে চলে যেতে এবং আর কখনো মুখ না দেখাতে বলেছে।”
তিনি জানান, রাস্তাঅয় তার হাজার হাজার রুপির জিনিসপত্র এখনো পড়ে আছে। কিন্তু তারা ফিরে যেতে খুব ভয় পাচ্ছেন।
হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় বুধবার পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু জরিমানা আদায়ের পরে দার এবং তার সহকর্মীর কাছে ‘ক্ষমা চাইতে’ বলার কয়েক ঘন্টা পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কিন্তু দার ততক্ষণে আরো কয়েক ডজন কাশ্মীরি শাল বিক্রেতার সাথে চলে গেছেন। কয়েক দশক ধরে মুসৌরিতে থাকার পর সেখানে আর তারা নিরাপদ বোধ করছেন না।
ভারতীয় শহরগুলোতে কাশ্মীরি বিক্রেতা এবং শিক্ষার্থীরা ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে হয়রানি, অপমান এবং হুমকির সম্মুখীন হওয়ার এক ডজনেরও বেশি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি তারা তাদের নিজস্ব সহপাঠী, গ্রাহক এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার এবং রাস্তায় মারধর করার ভিডিওগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে শাবির দারের মতো অনেক কাশ্মীরি বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
পাঞ্জাব রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং ছাত্রী উম্মত শাবির জানান, গত সপ্তাহে তার পাড়ার কিছু মহিলা তাকে ‘সন্ত্রাসীকে বের করে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
শাবির বলেন, “একই দিন, আমার সহপাঠীকে তার ড্রাইভার জোর করে ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে দেয় যখন সে জানতে পারে যে সে একজন কাশ্মীরি। কাশ্মীরে ফিরে যেতে আমাদের তিন দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমাদের যেতেই হয়েছিল।”
মিসেস শাবির তার নিজের শহরে ফিরে এসেছেন কিন্তু অনেকে তাদের বাড়িও আর নিরাপদ বোধ করছে না।
গত সপ্তাহের হামলার অপরাধীদের খোঁজে অভিযান অব্যাহত থাকায় কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী হাজার হাজার মানুষকে আটক করেছে, ৫০টিরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে, অতিরিক্ত সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে।
এই দমন-পীড়নের ফলে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে, যাদের অনেকেই এই পদক্ষেপকে তাদের বিরুদ্ধে ‘সম্মিলিত শাস্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, “যখনই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তখনই আমরাই প্রথম এর প্রভাব ভোগ করি। কিন্তু আমাদের এখনো সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং আমাদের জীবনযাপন স্থগিত রাখার কথা বলা হয়।”
কাশ্মীর টাইমস পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অনুরাধা ভাসি বলেন, “গত দেড় দশকে জঙ্গিবাদ হ্রাস পেলেও, সন্দেহের সূঁচ সবসময় স্থানীয়দের উপরই থাকে। তাদের সর্বদা তাদের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে হবে।”
ঢাকা/শাহেদ