‘বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যে ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, সেটার জন্যেও শোকেসে একটি ট্রফি দরকার’
Published: 18th, January 2025 GMT
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, নিজেদের যে ব্র্যান্ড তৈরি করেছে তাতে একটি আইসিসি শিরোপা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ মিকি আর্থার।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ী আর্থার চলমান বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। তার অধীনে আট ম্যাচে আটটি জিতে রংপুর অনায়েসে চলে গেছে প্লে অফে। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ হিসেবে এসেছিলেন।
৫৬ বছর বয়সী এই হাই প্রোফাইল কোচ এর আগে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথ চলা, পরিবর্তন এবং বর্তমান অবস্থান সবটাই তার ভালোভাবে জানা। তাইতো পারফরম্যান্সের স্বীকৃতির জন্য একটি আইসিসি ইভেন্টের শিরোপা জেতার তাগিদ দিলেন।
আরো পড়ুন:
‘বিদেশীরা সাপোর্ট না করলে ১৫০ রানও চেজ করতে পারব না’
খালেদের মায়ের প্রতি শোক প্রকাশ করে লড়াইয়ে চিটাগং-রংপুর
রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়ে নিজের কোচিং, বাংলাদেশ ক্রিকেট, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন আর্থার।
শুরুতে আপনার কোচিংয়ের দর্শন সম্পর্কে জানতে চাইবো?
মিকি আর্থারঃ অনেককিছু ঘিরেই আমার কোচিং ক্যারিয়ার। প্রথমত, আপনাকে অবশ্যই একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরী করতে হবে যেখানে একজন খেলোয়াড় যতটা সম্ভব সেরা হতে পারে, সম্ভাব্য সবদিকেই যাতে সে সেরা হয়ে ওঠে। একজন খেলোয়াড় সেরা হয়ে উঠে মানসিক, শারীরিক এবং টেকনিক্যাল এই তিনের সমন্বয়ে।
বিস্তারিত বলতে পারবেন?
মিকি আর্থারঃ টেকনিক্যালি একজন খেলোয়াড়কে হাতে-কলমে সেরা করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শারীরিক দিকটা হলো, তাদের টিকে থাকার দক্ষতা যা তাদের ক্যারিয়ারকে দীর্ঘস্থায়ী করে। মানসিকভাবে তাদেরকে আত্মবিশ্বাস দেওয়া হয় যে, টেকনিক্যাল দক্ষতা পেয়েও যেটা তারা করতে পারেনি সেটা করার। এই দিকটা ক্যারিয়ারে চাপ সামলাতে ভালো কাজ করে। আমি বলি, পথ ধরে আগাও, টেকনিক্যাল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ডানা মেলে ওড়ো; যা তাদেরকে আরো দক্ষ করে তুলবে এবং সেরা হতে সহায়তা করবে। ডানা মেলে ওড়ার অর্থ তাদের চরিত্রের সবটা মেলে ধরা।
খেলোয়াড়দের নিয়ে খোলামনে থাকা কোচদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মিকি আর্থারঃ একেক ক্রিকেটার একেকরকম। কিন্তু তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দরকার। এটার ফলে একটি দলের ভালো ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ব্র্যান্ড তৈরী করা যায়। এর ফলে দল বাছাই করা থেকে শুরু করে মানানসই খেলোয়াড় পাওয়া যায়। একজন খেলোয়াড়কে তার নির্দিষ্ট ভূমিকায় খেলানোর ক্ষেত্রেও এই (মত প্রকাশের স্বাধীনতা) স্বচ্ছতা বেশ ভূমিকা রাখে।
আমি প্রায়ই (খেলোয়াড়দের) বলতাম আমি হেডমাস্টার হবো না, তোমার পিতা হবো না, না হবো আমি তোমার সেরা বন্ধু কিংবা চাচা। আমি টাস্কমাস্টার হতে চাই কারণ এটি তোমাকে আরও ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলবে।
বিপিএলে এর আগেও এসেছেন। এবারও এলেন। এতোদিন যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, যে মান ধরে রাখার কথা ছিল সেটা কী পেরেছে?
মিকি আর্থারঃ আমি মনে করি এটা সত্যিই খুব ভালো প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক তরুণ ক্রিকেটার তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্যই প্রতিযোগিতা এমন হওয়া উচিত যেখানে তরুণ খেলোয়াড়রা গড়ে উঠতে পারে। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমার ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর অবিশ্বাস্য রকমের ভালো একটি দল। তারা খুবই পেশাদারভাবে পরিচালিত।
কিন্তু আমি যা ভাবছি তা হলো, এই চমৎকার প্রতিযোগিতাটি (বিপিএল) উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। সকল দলগুলোকে ভালোভাবে পরিচালনা থেকে শুরু করে আরো পেশাদার হতে হবে। তবে আমি নিশ্চিত নই প্রত্যেকেই সেই প্রক্রিয়ায় আছে কিনা!
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অসাধারণত্ব দেখে আমি যে অবাক হয়েছি সেটা বলবো না। তারা অনেক মেধাবী খেলোয়াড় পেয়েছে, আরো অনেক মেধাবী আছে যারা এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য মানানসই। আমি যখন ঢাকা ডায়নামাইটের কোচ হয়ে আসি, তখনও মেধাবীদের সংখ্যাটা প্রায় এমনই ছিল। এখন আরো অনেকে আসছে।
আপনার দলের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান সম্পর্কে জানতে চাইবো। মাঠে তার উপস্থিতি ভিন্ন একটা আবহ তৈরি করে দেয়…
মিকি আর্থারঃ সোহান অসাধারণ। আমি মনে করি সে অসাধারণ অধিনায়ক, চমৎকার নেতা; আমি তাকে দেখে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছি। মাঠে সে টেকনিক্যালি খুব ভালো, মাঠের বাইরেও সে দলের ভেতর খুব ভালোভাবে গতিশীলতা সঞ্চার করে। সে অবিশ্বাস্য একজন উইকেট-রক্ষক, তার কিপিং দক্ষতা খুবই ভালো। সেই সঙ্গে এও যোগ করি, তার ব্যাটিংও যথেষ্ট ভালো। সে সামনেও বেশ ভালো করবে। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, সোহান একজন ব্যতিক্রমী নেতা।
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফেব্রুয়ারিতে। এই প্রতিযোগিতাকে নিয়ে কী বলবেন?
মিকি আর্থারঃ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খুবই ভালো প্রতিযোগিতা, তবে খুবই ছোট পরিসর। সেখানে আপনাকে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। এখানে সেরা আট দল আছে এবং এখানে কোনো ভুলের সুযোগ নেই বলেই মনে করি। এটা চমৎকার আসর। আসন্ন এই আসরে যারা শিরোপা দখলে রেখেছে, তারাই আবার জিততে পারে বলেই ধারণা।
তাহলে কি পাকিস্তানকেই আপনি এগিয়ে রাখছেন?
মিকি আর্থারঃ ভারত বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও রয়েছে এবং আমি আরেকটি নাম উল্লেখ করতে চাই। আফগানিস্তান এমন একটি দল, কন্ডিশনের কারণে যাদের সুযোগ রয়েছে (শিরোপা জেতার)। তারা এখানে (পাকিস্তানে) নিয়মিত খেলেছে এবং তাদের ব্যাটসম্যানরা কন্ডিশন খুব ভালো জানে।
শেষবার যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হয়েছিল, আপনি পাকিস্তানের হয়ে শিরোপা জিতেছিলেন? শিরোপা জেতার সফরটা নিয়ে জানতে চাই…
মিকি আর্থারঃ আমরা (পাকিস্তান) যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিলাম তখন আট নম্বরে (র্যাংকিংয়ে) ছিলাম। প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় পরের ম্যাচ জিততেই হতো। এরপরের সবকটি আমরা জিতেছি কারণ, সেরা ক্রিকেটটাই খেলেছি। সবাই একবিন্দুতে মিলে গিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় যার যার ভূমিকা পালন করেছে। আপনি একবার ছন্দ পেয়ে গেলে খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। তখন পরিস্থিতির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও পক্ষে চলে আসে।
এবার কে জিতবে? আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কী?
মিকি আর্থারঃ আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, যেকোনো দল এই আসরে গিয়ে শিরোপা জিততে পারে। তাই এটা খুবই উপভোগ্য হতে যাচ্ছে। খুব সাধারণ একটা কারণেই এটা চমৎকার আসর হতে যাচ্ছে, আপনাকে প্রতিটি খেলাই জিততে হবে। তাই হ্যাঁ, বাংলাদেশের সামনেও অন্য সব দলের মতো একই সুযোগ থাকছে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ কী হবে? যেহেতু তারা গ্রুপ পর্বে ভারত, পাকিস্তান এবং নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে?
মিকি আর্থারঃ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ খুবই ভালো খেলছে। কিন্তু আপনাকে আসলে বিচার করা হবে শিরোপা দিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দলের মতো তাদেরও এটা জেতা উচিত। কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ট্রফিটি জেতা প্রয়োজন। ক্রিকেটের মাধ্যমে যে ব্র্যান্ড (বাংলাদেশে) তৈরি করা হয়েছে, সেটার জন্যেও শোকেসে বাংলাদেশের একটি ট্রফি দরকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার কথাই ধরুন, সবসময় তিন ফরম্যাটে শীর্ষে থাকে কিন্তু আমরা কখনো আইসিসির কোনো শিরোপা জিততে পারিনি। যে দল আইসিসির কোনো শিরোপা জিততে পারেনি, মানুষ তাদেরকে মনে রাখে না। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভালো দল কিন্তু এটার স্বীকৃতির জন্যে হলেও তাদেরকে কিছু জিততে হবে।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল একজন খ ল য় ড় আর থ র র জন য আইস স আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত
দেশের পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক।
সোমবার (৩ নভেম্বর) ডিবিএ’র সেক্রেটারি মো. দিদারুল গনী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন
ডিএসইতে সূচক কমলেও সিএসইতে বেড়েছে
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে মোট ১৫ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ১২ জন পরিচালক।
নির্বাচিতরা আগামী ২ বছর (২০২৬ ও ২০২৭) ডিবিএ‘র নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচিত সদস্যরা ডিবিএ’র আসন্ন বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে মো. মনিরুজ্জামান, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মো. নাফিজ-আল-তারিক ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়া পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন–এবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাফিউজ্জামান বোখারী, এস সি এল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইফতেখার জোনায়েদ, আর এন ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাদিম, আজম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কবির মজুমদার, নিউ এরা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরওয়াই শমসের, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও আমিনুল ইসলাম, জি এম এফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ নাহিদ আহমেদ, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈম মো. কাইয়ুম, ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এক্সপো ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ওসমান গনি চৌধুরী, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার শফিকুর রহিম ও এসএআর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী