ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ২ বাংলাদেশি
Published: 19th, January 2025 GMT
৪৫ বছর আগে ভারতে যান চটগ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া। সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাংলাদেশের বাড়িতে পাসপোর্টের মাধ্যমে যাওয়া-আসা করেছেন। দেড় বছর আগে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে অবৈধপথে বাংলাদেশে আসেন তিনি। ফেরার পথে ভারতের
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে।
ভারতে কারাভোগ শেষে ইদ্রিস মিয়া দেশে ফিরেছেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়েও। তিনিও সেখানে কারাগারে ছিলেন। এই দুইজন রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
দেশে ফেরত আসা ইদ্রিস মিয়ার (৭০) বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বকতারপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবেদুর রহমানের ছেলে। ১৬ বছর বয়সী মেয়েটির বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যান তিনি।
আরো পড়ুন:
বিএসএফের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন: বিজিবি
অনিশ্চিত বুমরাহকে রেখেই ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণা
চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসেন। ফেরার পথে ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের আগরতলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে সেখানকার আদালত তাকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার নরসিংগরস্থ ক্ষণস্থায়ী আটক কেন্দ্রে পাঠান।
ফেনীর সোনাগাজীর ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরী প্রায় নয় মাস আগে অবৈধভাবে ভারতের যান। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে আদালতে নিয়ে যান। আদালত তাকে ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলার উদয়পুরস্থ অবজারভেশন হোম ও স্পেশাল হোমে রাখার নির্দেশ দেন। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র হস্তান্তর শেষে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আজ সন্ধ্যায় তাদের আগরতলা-আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট ইমিগ্রিশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ পাঠানো হয়।
এসময় আখাউড়া সীমান্তে আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওমর শরীফ, স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মো.
কিশোরীর বাবা জানান, তার স্ত্রী বেঁচে নেই। সৎ মা কষ্ট দিতে পারে বলেই দ্বিতীয় বিয়ে করেননি তিনি। নয় মাস আগে কখন যে সে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কার সঙ্গে ভারতে গিয়েছে তা তিনি জানেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও মেয়ের কোনো সন্ধ্যান পাননি তিনি। মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সাতদিন পর তিনি জানতে পারেন যে, মেয়ে ভারতে আটক হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকি এবং পেশায় দিনমজুর। মেয়েকে নিতেই আখাউড়ায় এসেছি। আমার একটাই মেয়ে। মেয়েকে কাছে পেয়ে এখন অনেক খুশি আমি।”
আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওমর শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, “১৯৮০ সাল থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে ছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া। সেখানে চাকরিরত অবস্থায় তিনি ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র তিনি যোগাড় করেন।
ভারতের পাসপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এক পর্যায়ে তার পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। সেসময় তিনি অবৈধ পথে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরার পথে ত্রিপুরা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হন। আদালতে হাজির করা হলে তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করেন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার ভারতের নাগরিকত্বের সব নথিপত্র নিয়ে কারাগারে পাঠান “
তিনি আরো বলেন, “প্রেমের টানে বিয়ে করতে ভারতে চলে আসে ওই কিশোরী। ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটক করে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেল জারিমানা না করে উদয়পুর অবজারভেশন হোমে রাখার সিদ্ধা নেন। পরে কিশোরীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাকে দেশে পাঠানো হয়।”
ঢাকা/মাইনুদ্দীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সৌদিপ্রবাসীর অপহৃত শিশুসন্তান উদ্ধার
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়ন থেকে অপহৃত সাত বছরের একটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রুহুল আমিন (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্যে অপহরণকারীরা গতকাল শুক্রবার গহিন জঙ্গলে মায়ের কাছে শিশুটিকে দিয়ে পালিয়ে গেছে। তবে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) রাঙ্গাঝির এলাকার সদস্য মো. শাহাবুদ্দিনের দাবি, তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহরণকারীরা শিশুটিকে মায়ের কাছে দিয়ে গেছে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে সৌদি আরবপ্রবাসী সাইফুল ও শাহেদা বেগম দম্পতির সাত বছরের ছেলেকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের অভিযানে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মুক্তিপণ দিয়ে শিশুটিকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাইশারী ইউপির রাঙ্গাঝিরি এলাকার সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রাতে রাঙ্গাঝিরি পাড়ার শিশুটি অপহৃত হওয়ার পর পরিবার থেকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। অন্যদিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীও অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল শুক্রবার শিশুটির মা রাঙ্গাঝিরি থেকে আলেক্ষ্যং এলাকায় যান। সেখান থেকে তাঁর অপহৃত সন্তানসহ বিকেলে ফিরে আসেন। সন্ত্রাসীরা প্রথমে ১০ লাখ টাকা দাবি করলেও পরে তিন লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে তাঁরা জেনেছেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, অভিযানের মুখে অপহৃত শিশুটিকে মুক্তি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। অপহরণের ঘটনার পর থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। উদ্ধারের পর শিশুটির পরিবার মামলা করার জন্য থানায় গেছে।