জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তূপ। কোথাও আবার উপচে পড়ছে চলাচলের পথের ওপর। দেখে মনে হয়, ভাগাড় যেন দখলে নিয়েছে মহাসড়ক আর রেলপথ।
এমন পরিস্থিতিই নজরে পড়ে পটিয়া পৌর সদরের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কঘেঁষা শ্রীমাই ব্রিজ নামক এলাকায়। ময়লার স্তূপে ছোট ছোট টিলার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের এক পাশ পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। প্রতি মুহূর্তে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা এলাকায়। কাক আর কুকুর মুখে করে সেখানকার আবর্জনা ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র। শ্রীমাই ব্রিজ এলাকা হয়ে মহাসড়কে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কৃষিসহ স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি।
জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও এ এলাকায় আদর্শ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত এই পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে প্রতীয়মান এ বিষয়টি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। এতে করে অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পৌর সদরের শ্রীমাই এলাকায়। ব্যস্ততম এলাকার খোলা স্থানে ময়লার স্তূপ জমায় বাতাসে ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
রোববার শ্রীমাই ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এক পাশ দখল করে আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলরত লোকজন ওই স্থানে আসতেই দুর্গন্ধে অস্থির হয়ে পড়েন। রীতিমতো ভাগাড়ে পরিণত হওয়া এই এলাকার পাশেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। বর্তমানে কক্সবাজারে আসা-যাওয়া করা পর্যটকরা এই ভাগাড়ের দুর্গন্ধ সঙ্গী করেই চলাচল করছেন।
কয়েক বছর ধরে ময়লা ফেলায় পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রীমাই ব্রিজের পাশের জায়গাটি এমন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, কার্টন, ককশিট, কাগজ, পলিথিন, বস্তা, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট খাবার সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এলাকাজুড়ে। সড়কের পাশে ময়লা ফেলায় পথচারী ও রেলযাত্রীদের ভোগান্তি সীমাহীন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কয়েক বছর ধরে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় এভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধের জন্য চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। ভাগাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে মহাসড়কের পাশে।
স্থানীয় বাসিন্দা এস এম রিদোয়ান কবির জানান, মহাসড়ক দিয়ে পটিয়া পৌর সদর বা অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার জন্য ময়লার স্থানে আসার আগেই নাক-মুখ চেপে ধরতে হয়। অনেকদূর পর্যন্ত দুর্গন্ধে অস্থির এলাকার মানুষ। পৌরসভার এদিকে নজর দেওয়া খুব দরকার।
পথচারী তৌহিদুল ইসলাম জুয়েল জানান, এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ময়লার গন্ধে পথচারীদের চলাচলে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি গাড়ি চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান করা উচিত।
বাহুলী এলাকার বাসিন্দা শাহেদুল ইসলাম মুন্না বলেন, এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে ময়লার পরিমাণ বেড়েই চলছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক পুলক দাশ জানান, যাত্রী নিয়ে এ রাস্তা ধরে যাতায়াত করাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অনেকে এমন দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পৌরসভার সব বর্জ্য বা ময়লা ফাঁকা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা উচিত।
ময়লার স্তূপের অর্ধকিলোমিটার পরেই পটিয়া সরকারি কলেজ, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও এস আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিত্য দুর্ভোগের কারণ এই ময়লার স্তূপ। শিক্ষার্থী ফয়সাল, নিগারসহ অন্যরা জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসা করার পথে ময়লার গন্ধে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বে অনেকেই। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তৈয়ব জানান, মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন
রোগ-জীবাণু ছড়ায়। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে মানুষের মাঝে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, ময়লার স্তূপ থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান বৃষ্টির পানিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খালে গিয়ে মেশে। সেই পানি সেচকাজে ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে।
এই সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় ইউএনও ও পৌর প্রশাসক ফারহানুর রহমানের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি পৌর প্রশাসকের কার্য সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য সমন্বয় কমিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়ল র স ত প প রসভ র সড়ক র প এল ক য় র জন য এল ক র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫