সুনামগঞ্জ জেলায় বিআরটিএ অফিস কাম মোটর ড্রাইভিং টেস্টিং অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (বিএমডিটিটিসি) কার্যক্রম থমকে আছে। শান্তিগঞ্জের পঞ্চাশহাল মৌজায় জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন না দেওয়ায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষই এই প্রকল্পটি ফাইলচাপা দিয়ে রেখেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। তারা বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের স্থান পরিবর্তন করে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, চার বছর আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ জেলায় বিআরটিএ অফিস কাম মোটর ড্রাইভিং টেস্টিং অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয়দের বিশেষ করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে জমি নির্ধারণ করা হয় জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পঞ্চাশহালে। জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পার হয়ে উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামমুখী সড়কের পাশে পঞ্চাশহালে ৪ দশমিক ০৮ একর জমি নির্ধারণ হয় এই প্রকল্পের জন্য।
ওই বছরের ৬ এপ্রিল বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের জমি নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠান। প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় জেলা শহরের আশপাশে না হয়ে শান্তিগঞ্জে হচ্ছে জেনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়। তারা বিষয়টি স্থানীয় বিশিষ্টজনদের জানান। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের স্থান সুনামগঞ্জ জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি জানান। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পঞ্চাশহাল মৌজার স্থান পরিবর্তন করে অন্য কোনো স্থানে 
জমি নির্ধারণ করেননি। এ কারণে এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
বিআরটিএ’র সুনামগঞ্জ অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, ওই সময় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর পছন্দের স্থান ছিল পঞ্চাশহাল মৌজায়। সেটি নির্ধারণ করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান 
সংশ্লিষ্ট সচিবকে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠান। পরে স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা এই বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোয় প্রকল্পটি ফাইলচাপা পড়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুনামগঞ্জের জেলা আহ্বায়ক ইমনদ্দোজা জানান, জেলা সদরের সঙ্গে সারা জেলার মানুষের যোগাযোগ রয়েছে। এখানেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ অফিস হওয়া উচিত, যারা আগে শান্তিগঞ্জে এই অফিস করার চিন্তা করছিলেন তারা একপেশে ভাবনা থেকে এটি করেছিলেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক পক্ষের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া জানান, জেলা সদরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়। আদালতের সব কার্যক্রম জেলা সদরে হয়। ব্যক্তিগত পরিবহন থেকে গণপরিবহনের সব অফিসও জেলা শহরে। পরিবহন শ্রমিকদের জেলা কার্যালয়ও সুনামগঞ্জ শহরে। এই অবস্থায় বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয় শান্তিগঞ্জে করার সিদ্ধান্ত আপত্তিকর। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এমন একটা সিদ্ধান্ত কেনই বা নিল, আবার এখন প্রকল্পটি ফাইলবন্দি করে রেখেছে।
জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন সুজন জানান, এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মানা যায় না। সুনামগঞ্জবাসী জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের স্থান পরিবর্তন করে জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসও জেলা সদরের কাছাকাছি করার দাবি জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নুরুল জানান, জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হবে বিএমডিটিটিসি বা বিআরটিএ’র কার্যালয়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত দ্রুত পরিবর্তন করে জেলা সদরের পাশে নতুন ভূমি নির্ধারণ করে, কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া জরুরি।
সে সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা আখতারুজ্জামান সেলিম জানান, বিআরটিএ অফিস জেলা সদর থেকে শান্তিগঞ্জ চলে যাচ্ছে শুনে বারের নেতারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। জমি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছিলেন তারা। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক বলেছিলেন, সিদ্ধান্তটি ওপর থেকে এসেছে, তার কিছু করার নেই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেরেনূর আলী জানান, প্রকল্পটি ফাইলচাপা দিয়ে রেখেও অন্যায় করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন এ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। না হয় সংশ্লিষ্টরা এজন্য দায়ী থাকবেন।
বিআরটিএ’র সিলেট বিভাগের উপপরিচালক (প্রকৌশল) মো.

ডালিম উদ্দীন জানান, সুনামগঞ্জ জেলার বিএমডিটিটিসি’র কার্যালয়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানেন না। এর কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানা নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ছাব্বির আহমদ আকুঞ্জি জানান, তিনি দায়িত্ব পালনের সময়ে এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। 
এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠিও তাদের কাছে আসেনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প স ন মগঞ জ জ ল ব এমড ট ট স ব আরট এ র কর র দ ব প রকল প র জন য সদর র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ