পীরগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি চাষের অভিযোগ
Published: 22nd, January 2025 GMT
রংপুরের পীরগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রায় এক একর ৫৪ শতক জমি জোর করে চাষের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ভোরে লোকজন নিয়ে উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের ঘোষপুর গ্রামের জমি চাষ করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশফিকুর রহমান মশফি।
এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী ধনেশ্বর চন্দ্র বর্মন জানান, সোমবার ভোরে হঠাৎ পুকুরে ঝুপঝাপ শব্দ ও বাড়ির টিনের চালে ঢিলের শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে। বাড়ির পূর্বদিকে পুকুরের ওপারে শতাধিক লোককে লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। অন্যরা ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন। তারা সাত দিনের মধ্যে গ্রাম না ছাড়লে যেখানে পাবেন, সেখানে মারধর করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা মশফিকুর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। আমার বড় ভাই মোশারফ হোসেন মকু ছিলেন। পৈতৃক জমি চাষ করা হয়েছে। দখলের অভিযোগ মিথ্যা।’
তাঁর ভাই মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংক রংপুরের ঋণখেলাপি হিসেবে পঞ্চানন চন্দ্র বর্মনের ৮ একর ৯২ শতক জমি নিলামে উঠলে আমার বাবা মকবুলার রহমান, চাচা আছব উদ্দিন ও ঘোষপুরের খেরাজ উদ্দিন কিনে নেন। মাঠ রেকর্ড, পিন, পর্চা সব আমাদের নামে। দখলে না থাকায় সিংহভাগ জমি হিন্দুরা বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করেছে। বর্তমানে ১ একর ৩৯ শতক অবশিষ্ট আছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘জমি হিন্দুদের বাড়ির সঙ্গে। আমাদের বাড়ি দেড় কিলোমিটার দূরে। অতীতে চাষ করতে গেলেই বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও মামলাসহ ভয়ভীতি দেখাতেন। এবার নিজেরা চাষ করেছি।’
পীরগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, পঞ্চানন চন্দ্র বর্মনের ৮ একর ৯২ শতক জমি ছিল। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ধনরি চন্দ্র বর্মন (ধনেশ্বর চন্দ্র বর্মনের বাবা) ১ একর ৬৮ শতক জমি পেলেও চাচা গিরিধর চন্দ্র বর্মন স্থানীয় মকবুলার রহমান ও আছব উদ্দিনের কাছে অংশ সূত্রের চেয়ে বেশি বিক্রি করেন। ১৯৮০ সালে বাটোয়ারা মামলায় ধনরি চন্দ্র বর্মন সাব জজ আদালতের রায়ে ৪ একর ৪৬ শতক জমির মালিক হন। সে সময় থেকে ধনরির সন্তানরা ভোগদখল করছেন।
পরে ১৯৯০ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেও হেরে যান মকবুলার। বিবাদী জেলা জজকোর্টে আপিল করলে ১৯৯১ সালে সেখানেও রায় বিপক্ষে যায়। ২০০৫ সালে হাইকোর্টের আপিলে রায় পক্ষে পান ধনরির উত্তরসূরিরা। তবে ১৯৯৫-৯৬ সালে মাঠ জরিপে জমি রেকর্ড হয় মকবুলার রহমানের নামে। বর্তমানে রেকর্ড সংশোধনের ল্যান্ড সার্ভে মামলা হাইকোর্টে চলমান।
এরই মধ্যে সোমবার ভোরে মকবুলার রহমানের দুই ছেলে মোশারফ হোসেন মকু ও বিএনপির সাবেক নেতা মশফিকুর রহমান, ভাতিজা মাইদুল ইসলাম, শরিফুল, রহিমসহ দেড় শতাধিক মানুষ বিরোধপূর্ণ জমি চাষ করলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রগঞ জ ব এনপ প রগঞ জ চ ষ কর ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ইসি সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে। তখন নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে—যখনই হোক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আগে বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়সীমা মাথায় রেখে ইসি প্রস্তুতি শুরু করেছিল। সেভাবে এগিয়েছিল। এখন আবার নতুন ‘ডাইমেনশন’ এসেছে। যৌথ বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যে ঘোষণাটা লন্ডনে বসে হয়েছে, এটা আপনারা যেটুকু জানেন, আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না। আপনারা যেটুকু দেখেছেন মিডিয়াতে, আমিও সেটুকু দেখেছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে যে ওনারা কী আলোচনা করেছেন, আমরা তো নিশ্চয় ওনাদের ভাব বুঝতে পারব, বুঝে তখন একটা তারিখ, তখন সেটা করব। এখন আমাদের চিন্তা–ভাবনা, ধ্যান–ধারণা, শয়নে–স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন—এটা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ছয় মাস–আট মাস আগে ভোটের তারিখ বলার বিধান আইনে নেই।
সিইসি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে তিনি যেটা দেখেছেন যে রমজানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সেখানে ‘যদি’ আছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অনেকটা শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার নিবন্ধন, এটি মোটামুটি শেষ।
চলতি বছরের হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত থাকতে হয়। সাধারণত ভোটের তারিখের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার আগে যাঁদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইসি চেষ্টা করবে। এ জন্য আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে ইসি। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে—এই ওয়াদা তিনি দিতে পারবেন না। তাঁরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের আস্থায় আনতে ইসি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও দেশের ভালো চায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। এগুলো তিনি রাজনৈতিকভাবে দেখেন।
সিইসি আরও বলেন, কেউ বিপক্ষে না থাকলে বুঝতে হবে কোনো ‘কোয়ালিটি’ নেই। বিপক্ষে কেউ বললে তখন শোধরানোর সুযোগ থাকে। এ জন্য কেউ বিরুদ্ধে বললে তিনি আহত হন না। তিনি এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান।