অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “বাংলাদেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নেই। আমরা কোনো রাষ্ট্রের মদদে হাসিনাকে উৎখাত করিনি। আমরা ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে হাসিনাকে উৎখাত করেছি। আমাদের কারো তাঁবেদারি করার আর দরকার নেই।”

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ সরকারি কলেজে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

হাসিনার তাঁবেদারি করার যে প্রক্রিয়া সেটিকে নস্যাৎ করে দিয়ে নিজেদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা কারো কাছে আর মাথা নত করবো না। আমরা ৩ আগস্টেই বলেছিলাম ওয়ান ইলেভেন চাই না। ওয়ান ইলেভেন নিয়ে মিছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, আসুন আমরা যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি আছি ঐক্যবদ্ধ হই, সরকারকে সহযোগিতা করি সংস্কারগুলো করার জন্য।”

আরো পড়ুন:

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট’ হলেন সেনাপ্রধান

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

মাহফুজ আলম বলেন, “আওয়ামী লীগ আবারও যদি দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে আমাদের দিকে চোখ রাঙাতে চায়, আমরা বসে থাকবো না। শহীদদের পথ অনুসরণ করে আমরা শাহাদাতের পথ বেছে নেব। আমরা আবার লড়াই করব। আমরা শুধু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট নই। বরং আওয়ামী লীগ ফ্যাসিজমের যত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রান্তে, প্রশাসনে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়ে গেছে, তাদেরকেও আমরা বিচারের আওতায় আনব। তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে শহীদদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাব।”

উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, “অনেকগুলো কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছেন। খুব শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কার না করলেই নয়, নির্বাচনের আগে সেসব সংস্কার করতে চাই। এই সংস্কারগুলো মুখের ‍বুলি নয়। শেখ হাসিনা যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই রকম রেখে আমরা নির্বাচন করতে পারি না। নির্বাচন করার আগে অবশ্যই হাসিনার ওই প্রতিষ্ঠান ও তার দালালদেরকে উৎখাত করে এবং খুনিদের বিচার করে আমাদের নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।” 

রামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দিদারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন রামগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির নাজমুল হাসান পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সহ-সভাপতি জাকির হোসেন ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন রামগঞ্জ মডেল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ও চাঁদপুর গৃদকালন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আব্দুল বাতেন।

ঢাকা/লিটন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মগঞ জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ