Samakal:
2025-08-01@08:55:15 GMT

সন্তানের বয়ঃসন্ধিকাল

Published: 25th, January 2025 GMT

সন্তানের বয়ঃসন্ধিকাল

রাজা তৈরি, রাজপাটও প্রস্তুত। দেখতে ফুটফুটে, কিন্তু সব হয়েও হলো না কিছু। অনেক সময় দেখেও বোঝার উপায় নেই সে অন্য ধরনের বিশেষ শিশু। তার চোখ ও হাত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কোথায় যেন দৃষ্টি! সে এ জগতে নেই। হাত কোনো না কোনোভাবে নড়ছে অথবা পড়ে আছে ভাষাহীন। কেউ কেউ একমুহূর্ত বসছে না। মা-বাবাকে একটুও বসতে দিচ্ছে না। এ ধরনের বাচ্চারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। কারও কারও শারীরিক সমস্যাও থাকে। এ বাচ্চাদের মনোজগৎ আলাদা। তাদের এ পৃথিবীর জন্য তৈরি করা বেশ কঠিন, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির মতো অস্থির সময়টা সামলানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। লিখেছেন বাসন্তি সাহা

ঢাকায় আসার পরই ‘অটিজম’ শব্দটি প্রথম শুনি। প্রথম যেখানে কাজ শুরু করেছিলাম, সেই অফিস পরে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ভাড়া নিয়েছিল। তখন অনেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম অটিজম কী? কেউ তখন ঠিকঠাক বলতে পারেনি আমাকে। কিছু কথা নিয়তির মতো ফলে যায়। তাই জীবন দিয়ে এখন বুঝতে শিখেছি অটিজম কী? দশটি শিশুর মতো অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদেরও বয়ঃসন্ধি আসে। বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স তাদেরও অতিক্রম করতে হয়। অন্যান্য শিশুর মতো তাদের দেহে-মনেও বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো আসতে থাকে। তাদের প্রজননতন্ত্রগুলো পরিবর্তন হতে থাকে, গলার স্বর বদলাতে থাকে, মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়। শরীর আর মনের দ্বন্দ্বে এ সময় তারা অস্থির হয়ে পড়ে। খুব কঠিন এই বাচ্চার জন্য; মা-বাবার জন্য এ পরিবর্তনগুলো সামলে তাকে বড় হওয়ার জীবনচর্চায় অভ্যস্ত করা। 
একজন অটিজম বাচ্চার মা হিসেবে সন্তানের বয়ঃসন্ধি নিয়ে পড়ে ফেলেছি অনেক নিবন্ধ। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে, যারা এই আর্টিকেল লিখেছেন তারা কেউ অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার মা-বাবা নন। ফলে বাইরে থেকে বোঝা একেবারেই অসম্ভব। কারণ, অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে একেকজনের বাস্তবতা একেক রকম। ফলে একজনের উপশম আরেকজনের কাজে নাও লাগতে পারে। তাই এসব প্রবন্ধ পড়ার চেয়ে বেশি কাজে লাগতে পারে এ ধরনের মা-বাবার কথা ও সেই বাচ্চার স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা। 
আমরা জানি, এ ধরনের বাচ্চাদের মানসিক জানা-বোঝার পরিধি কম। জীবনের জটিলতা তাদের স্পর্শ করে না। কেবল ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম ও পায়খানা-প্রস্রাব ছাড়া তেমন কিছু তাদের চাওয়া নেই। নিরাপত্তা বোধ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন থাকে। তারা চায় সবসময় তাকে কেউ আগলে রাখুক। বেশির ভাগ সময় সেটি হয় মা অথবা বাবা। সারাদিন তো বটেই, এমনকি রাতে ঘুমের মধ্যেও সে মা-বাবাকে ধরে ঘুমাতে চায়। সময় থেমে থাকে না। তাদেরও বয়ঃসন্ধি আসে। শরীর শরীরের মতো সাড়া দেয়। কিন্তু মনের দিক থেকে সে থাকে হয়তো ৪-৫ বছরের শিশুর মতো। শরীর ও মনের এই দ্বন্দ্ব ঘোচাতে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। অস্থিরতা শুরু হয়। ভাঙচুর, মারধরও শুরু করে কেউ কেউ। মা হিসেবে শুধু এটুকু বুঝতে পারি– এই সময়টা মা-বাবার খুবই কষ্টের সময়। বুঝতে পেরেও কিছু করার থাকে না। 
অটিজম আক্রান্ত মেয়ে বাচ্চার বয়ঃসন্ধি সামলানো আরও একটু আলাদা। মেয়েদের এ সময়ে শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন সামলানো আরও কঠিন। মেয়ে বাচ্চার বয়ঃসন্ধির শারীরিক পরিবর্তন, বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়টি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সময় এই বাচ্চারা প্যাড রাখতে চায় না। মাকে বারবার বদল করে দিতে হয়। মাকে সারাদিন এটি নিয়ে তটস্থ থাকতে হয়। অনেক বাচ্চা এ কারণে সেই কয়েকটা দিন স্কুলেও যেতে পারে না। 
অটিজম আক্রান্ত অনেক বাচ্চার অতি-সংবেদনশীলতা থাকে। এই সময়ে প্যাড ব্যবহার তো করতেই চায় না, কেউ কেউ গায়ে কাপড়ও রাখতে চায় না। পিরিয়ডজনিত অস্বস্তি, পেটব্যথা, হাত-পা কামড়ানো, ব্যথার কারণে সে আরও অস্থির হয়ে পড়ে। তারা শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে পারে না, যেখানে-সেখানে কাপড় পরিবর্তন করতে চায়। ফলে মা-বাবার জীবন কঠিন হয়ে ওঠে বাচ্চাদের সামলাতে। 
বর্তমানে কোনো কোনো মা-বাবা সন্তানকে বিশেষায়িত স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বাচ্চাদের দীর্ঘমেয়াদে তাদের জীবনচর্চা, নিরাপত্তা, ভবিষ্যতে তাদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সেটিও ঢাকাকেন্দ্রিক ও খুবই অপ্রতুল। এ ধরনের বাচ্চার পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বা এসডিজিকে মাথায় রেখে এ বিশেষ বাচ্চাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসডিজির মূল কথা হচ্ছে, লিভ নো ওয়াল বিহাইন্ড বা কাউকে পেছনে ফেলে নয়। বিশেষ শিশুদের ফেলে রেখেও আমাদের প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয়। v
লেখক: কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট, এশিয়ান দলিত রাইটস ফোরাম ও অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা

এ সময়ে করণীয়

ছেলের ক্ষেত্রে
 

lনিজে শান্ত থাকতে হবে, বাসার পরিবেশ শান্ত রাখতে হবে।
lবাচ্চা কোনোভাবে অস্থির হতে পারে– এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 
lঘুম যাতে ঠিকঠাক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধ দিতে হবে। 
lএকা ঘুমানোর অভ্যাস করাতে হবে। 
lবাচ্চার জামাকাপড়, বিছানা প্রতিদিন ধুয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে স্কুলে পাঠানোর আগে ছেলে বাচ্চাকে স্নান করিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। 
lযে পরিবেশে গেলে সে অস্থির হবে সেখানে নেওয়া যাবে না এবং ফাস্টফুড ও মাংস কম খাওয়াতে হবে। 
lসিম্পটম বুঝে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সামলাতে হবে। 

মেয়ের ক্ষেত্রে
lগরম ‍দুধ বা গরম পানি খেতে দেওয়া।
lব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
lকাপড় পরিবর্তনের জন্য ওয়াশরুমে ছোটবেলা থেকেই চর্চা করা।
lবয়ঃসন্ধির শুরুর দিকে মাঝে মধ্যে মেয়েকে প্যাড ব্যবহার করতে দেওয়া; যাতে সে মনে করতে পারে যে এটি পোশাকেরই অংশ।
lযে বাচ্চাদের লেভেল ভালো– কথা বললে বুঝতে পারে, তাকে একটু একটু করে বুঝিয়ে বলা।
lএ সময় আদর করা ও তার পছন্দের খাবার-খেলনা দেওয়া।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র ব এ ধরন র র জন য এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন