রাজা তৈরি, রাজপাটও প্রস্তুত। দেখতে ফুটফুটে, কিন্তু সব হয়েও হলো না কিছু। অনেক সময় দেখেও বোঝার উপায় নেই সে অন্য ধরনের বিশেষ শিশু। তার চোখ ও হাত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কোথায় যেন দৃষ্টি! সে এ জগতে নেই। হাত কোনো না কোনোভাবে নড়ছে অথবা পড়ে আছে ভাষাহীন। কেউ কেউ একমুহূর্ত বসছে না। মা-বাবাকে একটুও বসতে দিচ্ছে না। এ ধরনের বাচ্চারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। কারও কারও শারীরিক সমস্যাও থাকে। এ বাচ্চাদের মনোজগৎ আলাদা। তাদের এ পৃথিবীর জন্য তৈরি করা বেশ কঠিন, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির মতো অস্থির সময়টা সামলানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। লিখেছেন বাসন্তি সাহা
ঢাকায় আসার পরই ‘অটিজম’ শব্দটি প্রথম শুনি। প্রথম যেখানে কাজ শুরু করেছিলাম, সেই অফিস পরে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ভাড়া নিয়েছিল। তখন অনেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম অটিজম কী? কেউ তখন ঠিকঠাক বলতে পারেনি আমাকে। কিছু কথা নিয়তির মতো ফলে যায়। তাই জীবন দিয়ে এখন বুঝতে শিখেছি অটিজম কী? দশটি শিশুর মতো অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদেরও বয়ঃসন্ধি আসে। বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স তাদেরও অতিক্রম করতে হয়। অন্যান্য শিশুর মতো তাদের দেহে-মনেও বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো আসতে থাকে। তাদের প্রজননতন্ত্রগুলো পরিবর্তন হতে থাকে, গলার স্বর বদলাতে থাকে, মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়। শরীর আর মনের দ্বন্দ্বে এ সময় তারা অস্থির হয়ে পড়ে। খুব কঠিন এই বাচ্চার জন্য; মা-বাবার জন্য এ পরিবর্তনগুলো সামলে তাকে বড় হওয়ার জীবনচর্চায় অভ্যস্ত করা।
একজন অটিজম বাচ্চার মা হিসেবে সন্তানের বয়ঃসন্ধি নিয়ে পড়ে ফেলেছি অনেক নিবন্ধ। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে, যারা এই আর্টিকেল লিখেছেন তারা কেউ অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার মা-বাবা নন। ফলে বাইরে থেকে বোঝা একেবারেই অসম্ভব। কারণ, অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে একেকজনের বাস্তবতা একেক রকম। ফলে একজনের উপশম আরেকজনের কাজে নাও লাগতে পারে। তাই এসব প্রবন্ধ পড়ার চেয়ে বেশি কাজে লাগতে পারে এ ধরনের মা-বাবার কথা ও সেই বাচ্চার স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা।
আমরা জানি, এ ধরনের বাচ্চাদের মানসিক জানা-বোঝার পরিধি কম। জীবনের জটিলতা তাদের স্পর্শ করে না। কেবল ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম ও পায়খানা-প্রস্রাব ছাড়া তেমন কিছু তাদের চাওয়া নেই। নিরাপত্তা বোধ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন থাকে। তারা চায় সবসময় তাকে কেউ আগলে রাখুক। বেশির ভাগ সময় সেটি হয় মা অথবা বাবা। সারাদিন তো বটেই, এমনকি রাতে ঘুমের মধ্যেও সে মা-বাবাকে ধরে ঘুমাতে চায়। সময় থেমে থাকে না। তাদেরও বয়ঃসন্ধি আসে। শরীর শরীরের মতো সাড়া দেয়। কিন্তু মনের দিক থেকে সে থাকে হয়তো ৪-৫ বছরের শিশুর মতো। শরীর ও মনের এই দ্বন্দ্ব ঘোচাতে সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। অস্থিরতা শুরু হয়। ভাঙচুর, মারধরও শুরু করে কেউ কেউ। মা হিসেবে শুধু এটুকু বুঝতে পারি– এই সময়টা মা-বাবার খুবই কষ্টের সময়। বুঝতে পেরেও কিছু করার থাকে না।
অটিজম আক্রান্ত মেয়ে বাচ্চার বয়ঃসন্ধি সামলানো আরও একটু আলাদা। মেয়েদের এ সময়ে শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন সামলানো আরও কঠিন। মেয়ে বাচ্চার বয়ঃসন্ধির শারীরিক পরিবর্তন, বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়টি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সময় এই বাচ্চারা প্যাড রাখতে চায় না। মাকে বারবার বদল করে দিতে হয়। মাকে সারাদিন এটি নিয়ে তটস্থ থাকতে হয়। অনেক বাচ্চা এ কারণে সেই কয়েকটা দিন স্কুলেও যেতে পারে না।
অটিজম আক্রান্ত অনেক বাচ্চার অতি-সংবেদনশীলতা থাকে। এই সময়ে প্যাড ব্যবহার তো করতেই চায় না, কেউ কেউ গায়ে কাপড়ও রাখতে চায় না। পিরিয়ডজনিত অস্বস্তি, পেটব্যথা, হাত-পা কামড়ানো, ব্যথার কারণে সে আরও অস্থির হয়ে পড়ে। তারা শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে পারে না, যেখানে-সেখানে কাপড় পরিবর্তন করতে চায়। ফলে মা-বাবার জীবন কঠিন হয়ে ওঠে বাচ্চাদের সামলাতে।
বর্তমানে কোনো কোনো মা-বাবা সন্তানকে বিশেষায়িত স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বাচ্চাদের দীর্ঘমেয়াদে তাদের জীবনচর্চা, নিরাপত্তা, ভবিষ্যতে তাদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সেটিও ঢাকাকেন্দ্রিক ও খুবই অপ্রতুল। এ ধরনের বাচ্চার পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বা এসডিজিকে মাথায় রেখে এ বিশেষ বাচ্চাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসডিজির মূল কথা হচ্ছে, লিভ নো ওয়াল বিহাইন্ড বা কাউকে পেছনে ফেলে নয়। বিশেষ শিশুদের ফেলে রেখেও আমাদের প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয়। v
লেখক: কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট, এশিয়ান দলিত রাইটস ফোরাম ও অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা
এ সময়ে করণীয়
ছেলের ক্ষেত্রে
lনিজে শান্ত থাকতে হবে, বাসার পরিবেশ শান্ত রাখতে হবে।
lবাচ্চা কোনোভাবে অস্থির হতে পারে– এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
lঘুম যাতে ঠিকঠাক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমের ওষুধ দিতে হবে।
lএকা ঘুমানোর অভ্যাস করাতে হবে।
lবাচ্চার জামাকাপড়, বিছানা প্রতিদিন ধুয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে স্কুলে পাঠানোর আগে ছেলে বাচ্চাকে স্নান করিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
lযে পরিবেশে গেলে সে অস্থির হবে সেখানে নেওয়া যাবে না এবং ফাস্টফুড ও মাংস কম খাওয়াতে হবে।
lসিম্পটম বুঝে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সামলাতে হবে।
মেয়ের ক্ষেত্রে
lগরম দুধ বা গরম পানি খেতে দেওয়া।
lব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
lকাপড় পরিবর্তনের জন্য ওয়াশরুমে ছোটবেলা থেকেই চর্চা করা।
lবয়ঃসন্ধির শুরুর দিকে মাঝে মধ্যে মেয়েকে প্যাড ব্যবহার করতে দেওয়া; যাতে সে মনে করতে পারে যে এটি পোশাকেরই অংশ।
lযে বাচ্চাদের লেভেল ভালো– কথা বললে বুঝতে পারে, তাকে একটু একটু করে বুঝিয়ে বলা।
lএ সময় আদর করা ও তার পছন্দের খাবার-খেলনা দেওয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধরন র ব এ ধরন র র জন য এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’