বাসায় নগদ ৫০০ কোটি টাকা আছে। গৃহকর্তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দেওয়া এ তথ্য পেয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে দল গঠন করে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল বালু ব্যবসায়ী ওয়াজেদ রাকিব। ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় টাকা নিতে ২৫টি বস্তাও সঙ্গে নেয় তারা, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত শুক্রবার রাতে নগরের খুলশীতে যমুনা অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর বাসায় ডিজিএফআই সদস্য পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে ধরা পড়ে তারা। পরে পুলিশ গিয়ে রাকিবসহ ১২ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। 

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মৃত মাহবুব খানে ছেলে রাকিব। গত রোববার থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা নানা রকম তথ্য দিয়েছে। তবে ৫০০ কোটি টাকা থাকার তথ্যদাতা গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ঘনিষ্ঠজনকে খুঁজছে পুলিশ। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে।

ডাকাতির চেষ্টায় গিয়াস উদ্দিন শুক্রবার খুলশী থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তার ১২ জন হলো– ওয়াজেদ রাকিব, মো.

হোসেন, মো. রোকন, মো. ওসমান, মো. মহিউদ্দিন, আব্দুল সবুর, রুবেল হোসেন, ইয়াকুব আলী, মোজাহের আলম, হারুন অর রশিদ, আব্দুল মান্নান ও শওকত আকবর ইমন। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে বিদেশফেরত, সাবেক ব্যাংকার, বালু সরবরাহকারী ও দোকান কর্মচারী আছে।

জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, গত ৭ জানুয়ারি গৃহকর্তার এক ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজনের কাছ থেকে রাকিব জানতে পারে, গিয়াস উদ্দিনের বাসায় ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। সেই তথ্য পেয়ে ওয়াসিম ও মালিকের সঙ্গে পরামর্শ করে রাকিব। তারা হোসাইন নামে আরেকজনকে যুক্ত করে। হোসাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয় শওকত আকবর ও মোজাহের। তারা নগরের হালিশহরে কয়েক দফা বৈঠকও করে। সেখানে গোয়েন্দা পরিচয়ে ডাকাতির সিদ্ধান্ত হয়। পেশায় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মোজাহের ডিজিএফআইর নকল পরিচয়পত্র তৈরি, পিস্তল ও ওয়াকিটকিগুলো সংগ্রহ করে।  

পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুটি মাইক্রোবাসে খুলশী ৩ নম্বর সড়কের ভবনে যায় তারা। সেখানে গিয়ে নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয় দিয়ে ভবনে প্রবেশ করে। নিরাপত্তারক্ষীদের হাত-পা বেঁধে অষ্টম তলায় গিয়াস উদ্দিনের বাসায় যায়। তিনটি ফ্ল্যাট নিয়ে আনসারীর বাসাটি ডুপ্লেক্স। আটতলার মূল দরজা দিয়ে ঢোকে ডাকাতরা। এর পর ভেতরের সিঁড়ি ব্যবহার করে ৯ তলায় ওঠা যায়। তারা সেখানে উঠে দুটি কক্ষের ডিজিটাল ফিঙ্গার লক ভাঙার চেষ্টা করে। এ সময় বাসায় কেউ ছিল না। সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, অন্য মাইক্রোবাসে আরও কয়েকজন পালিয়ে গেছে। আসামিদের তথ্য অনুযায়ী রোববার বাসাটি থেকে দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি ওয়াকিটকি ও ডিজিএফআইর নকল দুটি পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। খেলনা পিস্তলের কাভারে পুলিশের লোগো ও বাংলাদেশ পুলিশ লেখা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়াকিটকিগুলো অত্যাধুনিক। সাত থেকে আট ঘণ্টা কথা বলা যায়। 

নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, পালিয়ে যাওয়া আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

বাসায় ৫০০ কোটি টাকা প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন আনসারীকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ৫০০ ক ট আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক

চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।

সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।

ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাউজানে দখলদারি ও নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সংঘাত থামছে না
  • ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক হত্যা: ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
  • ফরিদপুরে ইজিবাইকচালক শওকত হত্যার ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক