বাবার হত্যাকারীদের শেখ হাসিনা রক্ষা করেছেন: রেজা কিবরিয়া
Published: 28th, January 2025 GMT
হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন। এই হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে বিচারের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দল ক্ষমতায় থাকাকালীন তদন্তে অভিযুক্তের তালিকা বদল হয়েছে মাত্র।
গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে এক ভিডিও বার্তা দিয়ে ছয় জনকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি ড.
সদ্য ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বাবার খুনীদের রক্ষা করার জন্য দোষারোপ করেছেন। পাশাপাশি সালমান এফ রহমানকে হত্যাকাণ্ডে অর্থের যোগানদাতা হিসেবেও দাবি করেছেন রেজা কিবরিয়া।
ড. রেজা কিবরিয়ার সেই ভিডিও বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, “১৯ বছরে ঠিকমত তদন্ত করা হয়নি। আমি আশা করছিলাম এতদিন পুলিশ আমার সাথে যোগাযোগ করবে, পুনঃতদন্তের ব্যাপারে। কিন্তু তারা করেনি। এটা খুব দুঃখজনক।
“আমি জানি এমন কেস অনেক পড়ে আছে। যেমন সাগর-রুনি, মুনিয়া, তারপর বিডিআর হত্যা, অনেক কেস আছে। শত শত কেস আছে বাংলাদেশে। কিন্তু আমার বাবারটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
পিতার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়ে তিননি বলেন, “এর মধ্যে এক নাম্বার শেখ হাসিনা। উনি কতটুকু জানতেন, কতটুকু তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত, আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি যে, হত্যাকাণ্ড যারা করেছে, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য উনি ১৫/১৬ বছর সব কাজ করে গেছেন। ঠিকমতই কাজ করে গেছেন, ওই খুনীদের পক্ষে।
“দ্বিতীয় হলেন সালমান এফ রহমান। আমি যতদূর জানি, এই হত্যাকাণ্ডের আর্থিক যতটুকু সাহায্য প্রয়োজন ছিল, এটা সালমান এফ রহমান দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে এমপি আবু জাহির (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য) এবং বানিয়াচংয়ের এমপি (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান) সেও জড়িত ছিলেন। সে মামলার বাদী। হবিগঞ্জের এক নেতা, তার নাম ডা. মুশফিক চৌধুরী (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান), সেও জড়িত। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।”
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র আলহাজ্ব জিকে গউছকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে তিনি, “হবিগঞ্জের বিএনপি নেতা হলেন আওয়ামী লীগের এমপি আবু জাহিরের ব্যবসায়িক পার্টনার। তারা একসময় মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করত। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।”
এছাড়াও হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককেও উল্লিখিত রাজনীতিবিদদের সাথে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুব জরুরি বলে মনে করেন রেজা কিবরিয়া।
তিনি মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সম্পৃক্ততা নিয়ে বলেন, “সে ওই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ কোন ভূমিকায় ছিল না। যদিও সে জানত হয়তো কিন্তু সে প্ল্যানিংয়ে বা এক্সিকিউশনে, আমি যতদূর জানি, তার কোন ভূমিকা ছিল না। বিএনপি কিছু লোকজনকে ঢুকিয়েছে, যারা কিছুই জানত না। তাদেরকে জাস্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে কেইসে।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের সিস্টেম হলো- কোন ক্রাইম হলে, কোন অপরাধ হলে বিএনপির কাছাকাছি কোন শত্রুকে তারা ঢুকিয়ে দেয়। এটা তাদের সিস্টেম। আমরা সত্যটা চাই। যেই দলেরই হোক না কেন, কারা জড়িত ছিলো, ওই ছয়জনকে রিমাণ্ডে নিয়ে সিরিয়াস জিজ্ঞাসাবাদ করলে, আসল তথ্যটা আমরা পাব। আমরা ২০ বছর পরে আসল বিচারের যে একটা রেজাল্ট তা আমরা দেখতে পাব বাংলাদেশে।”
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট পাঁচ জন নিহত হন। এতে আহত হন অন্তত ৫০ জন।
ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় বেড়াজালে আটকে থাকে তদন্ত। যে কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রীতা পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে এই মামলা সিলেট বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
ঢাকা/আজহারুল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ জ ঞ স ব দ কর কর ছ ন তদন ত আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সাত কলেজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং জগন্নাথ বাস্তবতা
সাত কলেজকে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সাম্প্রতিক যে আলোচনা চলছে, তা একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত বিকেন্দ্রীকরণের ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে এটি সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অজানা আশঙ্কাও তৈরি করছে। উচ্চশিক্ষাকে কতটা সহজলভ্য রাখা যাবে, এ প্রশ্ন এখন সময়ের দাবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ। এসব কলেজ বর্তমানে হাজারো সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য স্বল্প খরচে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র ভরসা।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫এই সাতটি কলেজ যদি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়, তবে আগের মতো ভর্তি সিটের বিশাল সুযোগ আর থাকবে না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো সাধারণত সিলেকটিভ হয়, প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা হয় এবং আসনসংখ্যাও সীমিত থাকে। ফলে যাঁরা গড়পড়তা মেধার অধিকারী, যাঁরা শহরের বাইরে থেকে এসেছেন, যাঁরা প্রথম প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া, তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষা দুর্লভ হয়ে যাবে। তখন বিকল্প হিসেবে থাকবে ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকার বেসরকারি কলেজ, যা অনেক পরিবারের সাধ্যের বাইরে।
এখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতা। একসময় এটি সরকারি কলেজ হিসেবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর সেখানে অনার্সে ভর্তি আসনের সংখ্যা অনেক কমে যায়। টিউশন ফি বৃদ্ধি পায়, ব্যাচও সীমিত করা হয়। ফলে আগের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর অনায়াস সেখানে পড়ার সুযোগ পান না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট দেখলেই বোঝা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হওয়ার মানে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ নয়, বরং সেটি হয়ে ওঠে ‘নির্বাচিতদের জন্য কাঠামো’।
আরও পড়ুনআমেরিকার ফুলব্রাইট বৃত্তি: আবেদনের সময় বৃদ্ধি, প্রয়োজন টোয়েফলে ৮০ কিংবা আইইএলটিএসে ৭৩১ জুলাই ২০২৫জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়: রূপান্তরের ইতিহাস
১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রজসুন্দর বসু ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপত্তি। ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট সরকারি আদেশে প্রাদেশিককরণের নামে এই প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কলেজে রূপান্তর করা হয়। এটি ১৯৭৫ সাল থেকে সরকারি কলেজ হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করত।
পরবর্তীকালে, শিক্ষার বিস্তার ও উচ্চশিক্ষায় স্বকীয়তা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০০৫ (২০০৫ সালের ২৪ নম্বর আইন) প্রণয়ন করে। এই আইনের ভিত্তিতে ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জগন্নাথ কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ঘটে।
এর ফলে—
*কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়।
*অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে সিলেকটিভ ভর্তির ব্যবস্থা চালু হয়।
*সরকারি কলেজের চরিত্র বদলে গিয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না?—আইনগত বিধান
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর, অন্য বড় ও ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের দাবি উঠতে থাকে, বিশেষ করে কারমাইকেল কলেজ (রংপুর), রাজশাহী কলেজ, ব্রজমোহন কলেজ (বরিশাল), মুরারিচাঁদ কলেজ (সিলেট) ইত্যাদি। কিন্তু ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে আর কোনো সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যাবে না।
আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্দেশনা মাউশির, কে কত টাকা পাবেন২০ ঘণ্টা আগেএই সিদ্ধান্তের মূল যুক্তি ছিল—
একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করলে সেই অঞ্চলের স্বল্পবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার স্বল্প ব্যয় ও সহজলভ্যতা হারিয়ে যাবে। সরকারি কলেজের গঠনগত বৈশিষ্ট্য ও অবকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দুটি ধরনের সংকট তৈরি হয়। একদিকে শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হয়, অন্যদিকে অবকাঠামোগত সংকট চরমে ওঠে।
কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: দুটি ভিন্ন পথ
কারমাইকেল কলেজ, রংপুরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কলেজ, প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৬ সালে। এটি দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। এই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিও তীব্র ছিল, কিন্তু ‘সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় না করার নীতি’র কারণে সরকার সেই দাবি গ্রহণ করেনি। পরিবর্তে ২০০৯ সালে রংপুরে সম্পূর্ণ নতুনভাবে স্থাপিত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি জমিতে নতুন অবকাঠামোয় গড়ে তোলা হয়, যার ফলে কারমাইকেল কলেজ তার স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগ অব্যাহত রাখতে পারে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়নি বরং নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গবেষণা ও বিশেষায়িত শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই ইতিহাস আজকের সাত কলেজ প্রসঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যদি সাত কলেজকে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়, তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অবস্থা হতে পারে, যেখানে কলেজের সুযোগ হারিয়ে গেছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো এখনো পরিপূর্ণ নয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের ঘটনাগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে। কেননা, জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফলে সৃষ্ট আবাসন, অবকাঠামো, জনবলসহ নানাবিধ সংকটের সমাধান ২০ বছরেও সম্ভব হয়নি। সমাধানের পথ হিসেবে দফায় দফায় আন্দোলনকেই বেছে নিতে হয়েছে এবং সেখানে শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, শিক্ষকেরাও আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তেমন তিক্ত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করে, ঢাকায় বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে সাত কলেজের সাধ্যের মধ্যে থাকা উচ্চশিক্ষার সুযোগ রক্ষা পাবে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ও গবেষণা বাড়বে। শুধু তা–ই নয়, বিভাগীয় পর্যায়ের বড় কলেজগুলোয় আগের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সম্ভাবনাও উপেক্ষা করা যায় না। সেই সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র এবং কলেজ হিসেবে তাদের ঐতিহ্যকে আমলে নিতে হবে। তাঁদের মধ্যে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না, বিশেষ করে বিবিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
অতএব, সাত কলেজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়, তাহলে কাদের জন্য হবে এই পরিবর্তন? সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য, না উচ্চশিক্ষার অলিন্দে অভিজাত শ্রেণির জন্য?
শিক্ষাকে যদি উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করি, তবে প্রয়োজন এমন ব্যবস্থা, যেখানে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। প্রয়োজন এমন কাঠামো যা উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাস্তবসম্মত। সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়করণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাই শুধু উচ্চশিক্ষার মান নয়, বরং উচ্চশিক্ষার অধিকারের বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনা জরুরি। না হলে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নামক মানব–উন্নয়ন প্রকল্পের দরজাও একদিন দেয়াল হয়ে উঠবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য।
লেখক পরিচিতি: মনিরুজ্জামান ও অরিয়ন তালুকদার, সদস্য, দ্য ইডভাইজরস, থিঙ্কট্যাংক অব এডুকেশন ক্যাডার