ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নিয়োগ শব্দটির সঙ্গে গত ১৫ বছর ‘বাণিজ্য’ শব্দটি যেন নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে এই ১৫ বছরে অসংখ্যবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণ্যিজ্যের অভিযোগ, অডিও ফাঁস, ভাঙচুর, আন্দোলন, সংঘর্ষ, হট্টগোলসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ, গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও পাল্টায়নি কিছু। দলীয় প্রভাবের কারণে শাস্তির আওতায় আসত না অভিযুক্তরা। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের ইতিহাস ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে চায় প্রশাসন। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। এর আগে হওয়া বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না কেউ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার দাবি, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে হোক শিক্ষক নিয়োগ।

গত ২০ জানুয়ারি পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়। ২২ জানুয়ারি আরও ছয়টি বিভাগে দেওয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরপরই নিয়োগ নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীর জন্য শুরু হয়েছে তোড়জোড়-লবিং। 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সূচনা হয় মূলত ২০০৪ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সময়ে। এ সময় নিয়োগ বাণিজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই বছর পর আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ ছাড়তে বাধ্য হন। নবম উপাচার্য অধ্যাপক ফয়েজ সিরাজুল হক তাঁর মেয়াদে কোনো নিয়োগই দেননি। এর পর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রত্যেকেই দায়িত্বের শুরুতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেও নিয়োগসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তাদের পিছু ছাড়েনি। দশম উপাচার্য ড.

এম আলাউদ্দিন ও একাদশতম উপাচার্য ড. আবদুল হাকিম সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় ইউজিসির দুর্নীতি তদন্ত এবং শিক্ষক সমিতির লাগাতার আন্দোলনের কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ড. হারুন-উর-রশীদ আসকারী দ্বাদশ উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর তিন দফায় ফাঁস হয় নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ক্লিপ। সর্বশেষ ১৩তম উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালামেরও নিয়োগ বাণিজ্য ও চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ১৪টি অডিও ফাঁস হয়েছিল। নিয়োগকে কেন্দ্র করে অফিস ভাঙচুর, উপাচার্যের কার্যালয়ে হট্টগোল, গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়াসহ শিক্ষকদের ওপর হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এ ছাড়া তৎকালীন প্রশাসনগুলোর আমলে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
অভিযোগ আছে, গত ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া মোট ১৮৪ জন শিক্ষকের সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সর্বশেষ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় তাদের সবার নাম পাওয়া গেছে।

সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে এর আগে যা ঘটেছে, সেগুলো কলঙ্কজনক অধ্যায়। এসবের যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের শপথ করেছেন। এবার প্রশাসনের নিজেদের প্রমাণের পালা। 
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, নিয়োগে দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে 
ভালো মনে করবে, সেভাবেই হবে। আমরা চাই, সততা, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।
একই কথা বলেছেন ইবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের অপসারণের দাবিতে ছাত্রসমাজ মাঠে থাকবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর ফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা কোনো দলের নই। তাই দলীয়করণের প্রশ্নই আসে না। কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হবে। কেউ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়নি প্রমাণ করতে পারলে এই পদে থাকব না।’
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’

নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ