মাদারীপুরের শিবচরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া হয়ে জমি দখল ও অংশীদার হয়ে জোরপূর্বক পুরো ব্যবসা দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মজিবুর রহমান শিশু মিয়া। তিনি উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে পরিচিত। 
জানা গেছে, বালু ব্যবসা পরিচালনার জন্য বালু রাখার কথা বলে কয়েকজনের কাছ থেকে জমি ইজারা নেন শিশু মিয়া। পরে জোরপূর্বক ওই জমি (ফসলি) থেকে মাটি তুলে বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বালু ব্যবসার অংশীদার হয়ে পুরো ব্যবসা দখলে নিয়েছেন তিনি। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মিলছে না। 
জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন দাগে প্রায় ২৬ বিঘা জমির ওপর বাজেহারচর বাবনাতলা এলাকার ১ নম্বর ডাইকে এর অবস্থান। প্রকল্পের কাজ চলাকালে ওই ডাইকের বালুমহালে স্তূপ করা বালু অপসারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিলাম হয়। ওই নিলামে সাইফুল আজম বাশার নামে এক ব্যবসায়ী ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় বালু অপসারণের কার্যাদেশ পান। পরে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিএনপি নেতা শিশু মিয়াকে অংশীদার করে তাঁকে ব্যবসার আমমোক্তার নিয়োগ করেন। ৬০ দিনের মধ্যে নিলামকৃত বালু অপসারণ এবং প্রচলিত আইন, বিধিমালা ও পরিপত্রের আলোকে সেটা করার শর্ত ছিল নিলাম চুক্তিতে। কিন্তু বালু ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক একর জমি ইজারা নেন শিশু মিয়া। পরে ওই বিএনটি নেতা তাঁর ভাড়া নেওয়া ১৪৬ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানা জমি থেকে ১৫ ফুট গভীরে খনন করে মাটি-বালু তুলে বিক্রি করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সেনাক্যাম্পে (মাদারীপুর) অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় শিশু মিয়ার বেআইনিভাবে বালু-মাটি কাটা বন্ধ হয় এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনের আদেশ ছাড়া মাটি না কাটার অঙ্গীকার করেন। পরবর্তী সময়ে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রাখেন শিশু মিয়া। 
এ বিষয়ে শিশু মিয়াকে ইজারা দেওয়া জমির মালিক শফিক শিকদারসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, বিএনপি সভাপতি তাদের জমিতে বালু রাখার অনুমতি চান। বালু রাখার জন্য একটি লভ্যাংশ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বালু নেওয়ার পর ভাড়া জমির ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মূল ফসলি জমির মাটি পর্যন্ত তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাধা দিতে গেলে লোকজন নিয়ে হামলা করেন। এক পর্যায়ে মাটি কাটা বন্ধ করতে গেলে জমির মালিকদের মেরে বালুচাপা দেবেন বলে হুমকি দেন। ফসলি জমি রক্ষা করতে তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। 
অপর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইফুল আজম বাশার বলেন, তিনি ব্যবসার অংশীদার হিসেবে শিশু মিয়াকে লিখিত ক্ষমতা দিয়েছিলেন। শিশু মিয়া পুরো ব্যবসা নিজের কবজায় নিয়ে নিয়েছেন। পরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তিনি শিশু মিয়াকে দেওয়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতা বাতিল করেছেন। ওই বিএনপি নেতা এখন তাঁর ইজারা নেওয়া বালুমহালের কাছে যেতে দেন না। প্রতিকার পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন তিনি। 
এ বিষয়ে দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির এক অংশের সভাপতি মহিউদ্দিন বেপারি বলেন, শিশু মিয়া ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে নানা জায়গায় সভাপতি পরিচয় দেন। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য, সেটা সত্য। তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য শিগগির সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মজিবুর রহমান শিশু মিয়া বলেন, তিনি দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। অন্য একটি কমিটি ছিল অনেক আগে। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তিনি বালু বিক্রি করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তাঁকে দেওয়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতা বালুমহালের মূল ইজারাদার ফিরিয়ে নিয়েছেন– এমন তথ্য তাঁর জানা নেই।
এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, শিশু মিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল র জন য উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ