ভাড়াটিয়া হয়ে জমি, অংশীদার হয়ে ব্যবসা দখল
Published: 28th, January 2025 GMT
মাদারীপুরের শিবচরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া হয়ে জমি দখল ও অংশীদার হয়ে জোরপূর্বক পুরো ব্যবসা দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মজিবুর রহমান শিশু মিয়া। তিনি উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, বালু ব্যবসা পরিচালনার জন্য বালু রাখার কথা বলে কয়েকজনের কাছ থেকে জমি ইজারা নেন শিশু মিয়া। পরে জোরপূর্বক ওই জমি (ফসলি) থেকে মাটি তুলে বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বালু ব্যবসার অংশীদার হয়ে পুরো ব্যবসা দখলে নিয়েছেন তিনি। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মিলছে না।
জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন দাগে প্রায় ২৬ বিঘা জমির ওপর বাজেহারচর বাবনাতলা এলাকার ১ নম্বর ডাইকে এর অবস্থান। প্রকল্পের কাজ চলাকালে ওই ডাইকের বালুমহালে স্তূপ করা বালু অপসারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিলাম হয়। ওই নিলামে সাইফুল আজম বাশার নামে এক ব্যবসায়ী ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় বালু অপসারণের কার্যাদেশ পান। পরে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিএনপি নেতা শিশু মিয়াকে অংশীদার করে তাঁকে ব্যবসার আমমোক্তার নিয়োগ করেন। ৬০ দিনের মধ্যে নিলামকৃত বালু অপসারণ এবং প্রচলিত আইন, বিধিমালা ও পরিপত্রের আলোকে সেটা করার শর্ত ছিল নিলাম চুক্তিতে। কিন্তু বালু ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে কয়েকজনের কাছ থেকে কয়েক একর জমি ইজারা নেন শিশু মিয়া। পরে ওই বিএনটি নেতা তাঁর ভাড়া নেওয়া ১৪৬ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানা জমি থেকে ১৫ ফুট গভীরে খনন করে মাটি-বালু তুলে বিক্রি করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সেনাক্যাম্পে (মাদারীপুর) অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় শিশু মিয়ার বেআইনিভাবে বালু-মাটি কাটা বন্ধ হয় এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনের আদেশ ছাড়া মাটি না কাটার অঙ্গীকার করেন। পরবর্তী সময়ে সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রাখেন শিশু মিয়া।
এ বিষয়ে শিশু মিয়াকে ইজারা দেওয়া জমির মালিক শফিক শিকদারসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, বিএনপি সভাপতি তাদের জমিতে বালু রাখার অনুমতি চান। বালু রাখার জন্য একটি লভ্যাংশ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বালু নেওয়ার পর ভাড়া জমির ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মূল ফসলি জমির মাটি পর্যন্ত তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাধা দিতে গেলে লোকজন নিয়ে হামলা করেন। এক পর্যায়ে মাটি কাটা বন্ধ করতে গেলে জমির মালিকদের মেরে বালুচাপা দেবেন বলে হুমকি দেন। ফসলি জমি রক্ষা করতে তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অপর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইফুল আজম বাশার বলেন, তিনি ব্যবসার অংশীদার হিসেবে শিশু মিয়াকে লিখিত ক্ষমতা দিয়েছিলেন। শিশু মিয়া পুরো ব্যবসা নিজের কবজায় নিয়ে নিয়েছেন। পরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তিনি শিশু মিয়াকে দেওয়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতা বাতিল করেছেন। ওই বিএনপি নেতা এখন তাঁর ইজারা নেওয়া বালুমহালের কাছে যেতে দেন না। প্রতিকার পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির এক অংশের সভাপতি মহিউদ্দিন বেপারি বলেন, শিশু মিয়া ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে নানা জায়গায় সভাপতি পরিচয় দেন। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য, সেটা সত্য। তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য শিগগির সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মজিবুর রহমান শিশু মিয়া বলেন, তিনি দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। অন্য একটি কমিটি ছিল অনেক আগে। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তিনি বালু বিক্রি করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তাঁকে দেওয়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতা বালুমহালের মূল ইজারাদার ফিরিয়ে নিয়েছেন– এমন তথ্য তাঁর জানা নেই।
এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, শিশু মিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল র জন য উপজ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।