‘বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে আমরা পিছিয়ে আছি’
Published: 30th, January 2025 GMT
প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক আলম খোরশোদের জন্ম ১৯৬০ সালে কুমিল্লায়। সম্পাদনা, অনুবাদ ও মৌলিক রচনা মিলিয়ে ২০টির অধিক বইয়ের রচয়িতা তিনি। নোবেল বিজয়ী কবি ভিস্লাভা শিম্বর্স্কার ‘ত্রিশটি কবিতার অনুবাদ’, মূল স্প্যানিশ থেকে অনূদিত বোর্হেস ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আলাপচারিতা ‘ভাষা, নারী, সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, ছোটগল্প সংকলন ‘যাদুবাস্তবতার গাথা’, নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গোর নাট্যানুবাদ ‘গির্জাবিয়ে’, ভার্জিনিয়া উল্ফের A Room of One’s Own-এর অনুবাদ ‘নিজের একটি কামরা’ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে আলম খোরশেদ লেখালেখির পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে তার নিজের গড়া সংস্কৃতি কেন্দ্র বিস্তার পরিচালনা করেন। অনুবাদ সাহিত্যে অবদান রাখায় ‘বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন’ প্রবর্তিত ‘অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করেছেন আলম খোরশেদ। ২০২৫ বইমেলায় তার অনুদিত একাধিক গ্রন্থ পুনর্মুদন হচ্ছে এবং একাধিক নতুন বই প্রকাশ হচ্ছে। প্রকাশিতব্য বই নিয়ে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনুবাদসাহিত্য ও সাহিত্যিকের বাস্তব অবস্থা কেমন; এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: ২০২৫ বইমেলায় আপনার অনুবাদসমগ্র প্রথম খন্ড, বোর্হেস, বোর্হেস, নৈঃশব্দ্যের নামগান: লাতিন আমেরিকার কবিতা এবং অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক: ফিফটি বাংলাদেশী উইমেন পোয়েটস ইন ইংলিশ (দ্বিভাষিক সংস্করণ)আসছে। এতগুলো বইয়ের কাজ একযোগে কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন?
আলম খোরশেদ: এগুলোর মধ্যে দুয়েকটির পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে। আর বাকিগুলোর কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলাম বলে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রকাশকের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করতে হয় বৈকি।
রাইজিংবিডি: বাংলাদেশের অনুবাদকদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠন বা খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রকাশকদের যোগাযোগ স্থাপনের বাস্তব চিত্র কী? আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
আলম খোরশেদ: বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সত্যি বলতে কি আমরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের হাতে গোনা কয়েকজন অনুবাদকের সঙ্গে হয়তো দুয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ, তৎপরতা কিংবা কর্মকাণ্ডের কথা আমার জানা নেই। আমি নিজেও যে এ-বিষয়ে খুব একটা পারঙ্গম, সেটা বলতে পারি না।
আরো পড়ুন:
‘আত্মার আওয়াজ’ সুফি ঘরানার কবিতা দিয়ে সাজানো: জব্বার আল নাঈম
‘উপন্যাসটির বিষয়বস্তু বিহারিদের ক্যাম্পজীবনের মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি’
রাইজিংবিডি: কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক নাকি ভাবানুবাদকে বেশি প্রাধান্য দেন? কেন?
আলম খোরশেদ: কবিতার অনুবাদ খুব জটিল ও দুরূহ কাজ। এটা খোদ কবিরা, নিদেনপক্ষে কবিতার নিবিড় পাঠকেরা, করলেই সবচেয়ে ভালো হয়। সাহিত্যে আমার শুরুটা যেহেতু কবিতা দিয়েই হয়েছিল, এবং কবিতার ভাষা, ব্যাকরণ, ছন্দ, শৈলী ইত্যাদির ওপর আমার একধরনের সহজাত দখল থাকাতে আমি এই কাজটাতে খুব সচ্ছন্দ বোধ করি। আক্ষরিক কিংবা ভাবানুবাদ নয়, কবিতার অনুবাদের সময় আমি মূল কবির মন ও তার কবিতার আত্মাটির প্রতিই সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকতে চেষ্টা করি।
রাইজিংবিডি: আমাদের নিজেদের সাহিত্যকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে প্রকাশনা সংস্থা, বাংলা একাডেমি, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভূমিকা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? এই সব প্রতিষ্ঠান অনুবাদ সাহিত্য সম্প্রসারণে কেমন উদ্যোগ নিতে পারে?
আলম খোরশেদ: না, একেবারেই নয়। কিন্তু এটি খুব দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিদেশি প্রকাশক, লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে আমাদের একটা কার্যকর ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন সাহিত্য উৎসব, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন; বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি-বিদেশি সাহিত্যিকদের জন্য আবাসন তথা রেসিডেন্সি কর্মসূচি চালু করা; বিদেশি বইমেলা ও এজাতীয় অনুষ্ঠানসমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ; বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে এই কাজের জন্য বিশেষ সেল গঠন করে সাংস্কৃতিক কূটনীতিকে আরও শক্তিশালী করা; নিয়মিত নানাবিধ প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
রাইজিংবিডি: ‘বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন’ প্রবর্তিত ‘অনুবাদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পেয়েছেন। পুরস্কার প্রাপ্তিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন।
আলম খোরশেদ: পুরস্কার প্রাপ্তি একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে তেমনি দায়িত্বেরও বটে। এটি নিজের কাজের স্বীকৃতি শুধু নয়, তার একপ্রকার আনুষ্ঠানিক সনদও বটে। এটা তাই প্রকারান্তরে লেখককে আরেকটু বেশি দায়িত্বশীল এবং তার নিজের কাজের প্রতি আরও যত্নশীল করে তোলে।
রাইজিংবিডি: অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক: ফিফটি বাংলাদেশী উইমেন পোয়েটস ইন ইংলিশ- সম্পর্কে জানতে চাই।
আলম খোরশেদ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর আমার অনুবাদক বন্ধু, কলকাতার মানুষ, ভেঙ্কটেশ্বর রামস্বামী আমাকে এই কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। মূলত তার এবং হায়দ্রাবাদনিবাসী বাঙালি অনুবাদিকা নবীনা দাশের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার ফসল এই ‘অ্যারাইজ আউট অভ দ্য লক’ গ্রন্থটি। এটি বাংলাদেশের সাহিত্যকে, বিশেষ করে আমাদের নারীদের সৃষ্টিশীলতাকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে বলে আমার বিশ্বাস।
রাইজিংবিডি: কেমন বইমেলা চান?
আলম খোরশেদ: আমাদের একুশে বইমেলাটি এখন একটি বারোয়ারি, বাণিজ্যিক মেলাতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে একটি প্রকৃত লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা ও কর্মপাটাতন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের। এর জন্য একটি সুচিন্তিত ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি পেশাদার, দায়িত্বশীল ও অগ্রসর চিন্তার প্রকাশকদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান; গ্রন্থের মানোন্নয়ন; সমাজে লেখকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা; মেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহের মানবৃদ্ধি ও তাতে শ্রোতা, দর্শকদের পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ; এবং সর্বোপরি মেলার সামগ্রিক বিন্যাস, পরিসর, পরিকল্পনা, পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। এর জন্য মেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির পরিবর্তে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও প্রকাশক সমিতির ওপর ন্যস্ত করাটাই সমীচীন হবে মনে করি।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়
ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।
এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।
ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।
টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।
গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।
এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে।