স্কুল দখল করে স্ত্রী-সন্তান, গরু-ছাগল নিয়ে সংসার
Published: 1st, February 2025 GMT
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখলে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, পেলে-পুষে বছরের পর বছর বসবাস করছেন মাদারীপুরের কালকিনির এক ব্যক্তি।
কালকিনির ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির নাম মো. শহিদুল ইসলাম সরদার। ৫০ বছর বয়সি শহিদুল উপজেলার ১৫৪ নম্বর নতুন চরদৌলত খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ দখল করে দেড় দশক বসবাস করছেন বহাল তরিয়তে।
স্কুলটিতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা শহিদুল ইসলাম সরদারের স্কুল ভবন দখল করে বসবাসের বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে বিস্তারিত তথ্য দেন। ভবন খালি করতে প্রশাসন বারবার তাকে নোটিশ দিলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি; বরং জোর খাটিয়ে স্কুল ভবনেই রামরাজত্ব বাড়িয়ে চলেছেন তিনি।
শহিদুল ইসলামের পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়, তার বাড়ি উপজেলার চরদৌলত খান ইউনিয়নের নতুন চরদৌলত খান গ্রামে, তার বাবার নাম নেছার আলী সরদার। সহায়-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের মধ্যে গড়ে তুলেছেন তার সংসার।
২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ১৫৪ নম্বর নতুন চরদৌলত খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ দখল করে সংসার সাজিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি চরে বেড়াতে দেখা যায় সেখানে। জানতে চাইলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলে, এসব পশু-পাখি সব শহিদুল ইসলামের।
হাঁস-মুরগির জন্য খোপ খোপ ঘর বানিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। সেখানে যেতেই শোনা যায়, হাঁসের প্যাক প্যাক, শোনা যায় মুরগির ডাক। এরই মধ্যে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
স্কুল ভবনের গা ঘেঁষে শহিদুল ইসলাম গোসলখানা বানিয়েছেন। বাড়ির উঠানের মতোই দড়ি টাঙিয়ে কাপড় শোকাতে দেখা যায় সেখানে। স্কুলের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখের কাছে পানির ড্রাম বসিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
কিছু সময় পর দেখা যায়, বিড়ি টানতে টানতে টিউবওয়েল থেকে পানি তুলছেন এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলে উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকদের এখানে কে পাঠিয়েছেন।
ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায়, স্কুল ভবনের নিচতলায় লাকড়ি-খড়ি ও বিভিন্ন জিনিসপত্রের বস্তা রাখা। সিঁড়ির নিচে বসিয়েছেন টয়লেট, যেখান থেকে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। পুরো পরিবেশটা নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে করে রেখেছেন শহিদুল ইসলাম।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী তামান্না বলে, “শহিদুল কাকা আমাদের বিদ্যালয়ের নিচতলা দখল করে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তিনি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালেন। এতে আমাদের পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।”
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম শান্তা বলেন, “বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ প্রায় ১৫ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন শহিদুল ইসলাম সরদার। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে; কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।”
“স্কুল ভবন ভোগ-দখল করছেন শহিদুল ইসলাম। এখানে তার গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবই আছে। আমরা চাই, অতি দ্রুত তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান,” বলেন উম্মে কুলসুম।
তিনি আরো বলেন, স্কুল ভবনের নিচতলা দখল করে রাখায় দোতলায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
দখল করা স্কুল ভবনের মধ্যেই পাওয়া যায় শহিদুল ইসলামকে। কেন স্কুলের মধ্যে ঘর-সংসার পেতে বসেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি তিনি।
১৫ বছর ধরে স্কুল ভবন দখল করে রাখলেও শহিদুলের বিরুদ্ধে কেন শক্ত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন- সে বিষয়ে জানতে রাইজিংবিডি ডটকম যোগাযোগ করে কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “আমি কালকিনিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ওই ব্যক্তিকে কয়েকবার বিদ্যালয় ভবন ছেড়ে দিতে বলেছি। তিনি কর্ণপাত করছেন না। এ বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।”
প্রশাসনের কথায় কেন কর্ণপাত করছেন না শহিদুল ইসলাম- প্রশ্ন রেখে কথা হয় কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সরকারি স্কুল ভবন দখল করে রাখা ওই ব্যক্তিকে কক্ষগুলো ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় না ছাড়লে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ল ভবন র ভবন দখল ন দখল উপজ ল করছ ন সরদ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।