ঢোলের বোলে সুর-ছন্দে ফুলকির সুবর্ণজয়ন্তী
Published: 1st, February 2025 GMT
১৯৭৬ সাল থেকে ফুলকির পথচলা। শিশুকিশোরদের মানসবিকাশে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল কাজকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে ফুলকি পরিবারের সকল কর্মী। ২০২৫-এ ফুলকি পঞ্চাশে পদার্পণ করেছে। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে সারাবছর নানা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব ফুলকির দ্বিবার্ষিক আয়োজন। এ বছর চতুর্থবারের মতো এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের সমাগমে তাদের প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে। এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘মোরা ঝরনার মতো চঞ্চল, মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল’। ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসব উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এভারেস্টজয়ী অভিযাত্রী বাবর আলী, ফুলকি ট্রাস্টের সভাপতি আবুল মোমেন, সম্পাদক ওমর কায়সার ও ফুলকির সর্বধ্যক্ষ শীলা মোমেন।
শীলা মোমেন বলেন, ‘ফুলকি শিশু-কিশোরদের মানস-জগৎ উন্মোচনের কাজটি গত ৫০ বছর ধরে করে যাচ্ছে।’ উদ্বোধক বাবর আলী বলেন, ‘‘কিশোর বয়সে ‘চাঁদের পাহাড়’ বই পড়ে আমি পর্বত আরোহণের স্বপ্ন দেখি। ফুলকির কিশোররা সবাই যার যার স্বপ্নচূড়ায় একদিন আরোহণ করবে।” ওমর কায়সার বলেন, ‘ফুলকির নানা রঙে, নানা আয়োজনে শিশু-কিশোরদের সবসময় রাঙিয়ে রাখে।’ আবুল মোমেন বলেন, ‘স্বপ্নকে লালন করে শিশু-কিশোররা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে আর এই যাত্রায় তাদের সহযোগিতা করবে অভিভাবক ও ফুলকির মতো প্রতিষ্ঠান।’
গ্যালারিতে বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকলা, শিশুদের আঁকা ছবি ও বাবার আলীর এভারেস্ট আরোহণের ছবি প্রদর্শনী ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন অতিথি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল ব্রতচারী, কারাতে, বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সোনারতরীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নৃত্যাঞ্জলীর শাস্ত্রীয় নৃত্যানুষ্ঠান।
শেষ দু’দিন সকালে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য মাটির কাজ, পাপেট তৈরি, ছাপচিত্র ও তাঁত বুননের কর্মশালা। যেখানে ৯-১৬ বছর বয়সী যে কোনো শিশু-কিশোরের জন্য নিবন্ধন করে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। শেষদিন সন্ধ্যায় ছোটদের জন্য গান পরিবেশন করে সংগীত সংগঠন ‘রক্তকরবী’। উৎসবের সমাপ্তি হয় ঢোলকবাদক শিবু দাস ও তার দলের ঢোল বাদনের মধ্য দিয়ে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’