পর্যটকদের কাছে অপার বিষ্ময়ের নাম সুন্দরবন। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। জীববৈচিত্র্যের প্রাণ-প্রাচুর্যের কারণে সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র। এ বনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম। এছাড়া সুন্দরবনে আছে নানা ধরনের পাখি, চিত্রল হরিণ, বন্য শুকর, কুমির, ডলফিনসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি ঘটে। এখন সেই পর্যটকের সমাগম ঘটছে সুন্দরবনে। বলা যায়, পর্যটকে ভরপুর এখন সুন্দরবন।

নভেম্বর মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। শীত যত বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে সুন্দরবনেও বাড়তে থাকে পর্যটকের সংখ্যা। গত ২৭ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের শতাধিক সদস্যের একটি টিম সুন্দরবন ভ্রমণে যায়। তিন দিনের এই ভ্রমণে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচ এবং করমজল পর্যটন স্পটে প্রচুর পর্যটক দেখা যায়।

বনবিভাগের সূত্রমতে, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলারচরের চেয়ে এ বছর আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচে পর্যটকের আগমন বেশি। তবে এ বছর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কম। পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন ৭-৮টি ছোট-বড় ভেসেল জাহাজ নোঙন করতে দেখা গেছে।

পর্যটকদের কাছে সরাসরি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী দেখা রোমাঞ্চকর। আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচে যাওয়ার পথে দেখা মিলেছে, বানর ও হরিণের দলবদ্ধ ছোটাছুটি, বন্য শুকর, সুন্দরবনের বিলুপ্ত প্রায় বিশাল আকৃতির মদনটাক ও ঈগল পাখি। করমজলের খালের পাড়ে বিশাল আকৃতির কুমিরকে রোদ পোহাতে ও আরেকটি কুমিরকে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। যা সবাইকে রোমাঞ্চিত করে। এছাড়াও নদীতে ডলফিনের ডুব সাতার ছিল হৃদয়কাড়া। সুন্দরবনের নদী, খালে সাদা বক, মাছরাঙা, শঙ্খচিল, গাংচিলের মাছধরা ও উড়াউড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সুন্দরবনের লক্ষিপেঁচা, দোয়েল, মৌটুসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরবও মনোমুগ্ধকর।

সুন্দরবনে খুলনা প্রেস ক্লাব থেকে আসা পর্যটক কেএম জিয়াউস সাদাত জানান, সরাসরি সুন্দরবনের জীব-জন্তু দেখে অনেক আনন্দ উপভোগ করা যায়। যা অন্য কোনোভাবে সম্ভব না। 

অপর পর্যটক সোহেল মাহমুদ জানান, সরাসরি সুন্দরবনের হরিণ, কুমির, বানর এবং অন্যান্য পশুপাখির দেখা পাওয়া রোমাঞ্চকর। বনের জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখা দরকার। একইভাবে পর্যটক কাজী শামীম আহমেদ জানান, সুন্দরবনের অনেক জায়গার বন উজাড় করা হয়েছে। এ কারণে বন্যপ্রাণীও আগের মতো দেখা পাওয়া যায় না। তবে তারপরও যা দেখা যায়, তার অনুভূতি অন্যরকম। 

বনরক্ষী দিলীপ জানান, সুন্দরবনে হরহামেশা বানর, হরিণ, শুকর দেখা যায়। তবে খুব একটা বাঘ-কুমির দেখা যায় না। যে সব পর্যটকের চোখে বাঘ-কুমির পড়ে তারা ভাগ্যবান।

বনবিভাগ সূত্র জানায়, আগে সুন্দরবনের হারবাড়িয়া, কচিখালি, কটকা, হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, কলাগাছিয়া ও করমজল— এই সাতটি স্থানে পর্যটন স্পট ছিল। নতুন করে শরণখোলার আলীবান্ধা, চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জে আরো চারটি পর্যটন স্পট হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক এবং রূপান্তর ইকোট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান ডেভিড বলেন, লাক্সারি লঞ্চগুলোতে ভালো পর্যটক হচ্ছে। তবে ছোট ছোট লঞ্চে তেমন পর্যটক নেই। আন্ধারমানিক, কচিখালি ও কটকা পর্যটন কেন্দ্রে এ বছর পর্যটকদের আগ্রহ বেশি। এছাড়া সুন্দরবনের প্রবেশমুখ করমজল পর্যটন স্পটে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি যাচ্ছেন।
সুন্দরবন বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দে বলেন, ‘‘পর্যটনের জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে রাজস্ব টার্গেট থাকে না। আমরা চাই, সহনশীল মাত্রায় সুন্দরবনে পর্যটক আসুক। যাতে করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব না পড়ে।’’ 

ঢাকা/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা