আরও ৯০ থানা-উপজেলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি কমিটি
Published: 3rd, February 2025 GMT
দেশের আরও ৯০টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃতির অংশ হিসেবে এসব কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
গত ১১ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কমিটি অনুমোদনের কথা জানানো হয়। এসব কমিটির মধ্যে তিনটি ঢাকার চার থানায়। বাকি ৮৬টি ঢাকার বাইরের থানা ও উপজেলায়।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশের ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সর্বশেষ ঘোষিত এসব কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মোট প্রতিনিধি এখন ৪ হাজার ১৮৭ জন। ঢাকার বাইরে ৩০ হাজার ২৮৪ জন।
সর্বশেষ যেসব কমিটি
গত ২৩ জানুয়ারি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৫৫ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একই দিন ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানায় ১৬২, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫২, মাধবপুর উপজেলায় ১৪৫, মাদারীপুর সদর থানায় ৬১৪ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
২৫ জানুয়ারি নরসিংদীর মনোহরদী থানায় ৬৪, সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ৮০, রংপুরের পরশুরাম থানায় ১৪৪, ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় ২১১, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় ২৭৩, শরীয়তপুরের সখীপুর থানায় ১০১, বান্দরবানের আলীকদম থানায় ৭৬, নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় ১০২, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ৬১, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ৩০১, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৯২, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৪০, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ৩২০ ও যশোর সদর থানায় ৪৮১ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
২৮ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলায় ৪৮, নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ৭১, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ২৬৯, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ১৪৩, রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ৩৩৩, কাউনিয়া উপজেলায় ৫০১, খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ৯৭, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২০৯ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করা হয়েছে।
২৯ জানুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৬৫, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৪৪, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় ৭৫, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ৫৪ ও নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ৭৬ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করা হয়েছে।
৩০ জানুয়ারি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় ৩৯৫, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ২১০, লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় ১০১, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় ৯৫, পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৫৭, পাবনা সদর থানায় ১৩৫, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৬১, কালুখালী উপজেলায় ৭০, ৩১ জানুয়ারি পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১৩২ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করা হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় ৫৬, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ৯৩, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ৮৯, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানায় ৬১, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ১০০, পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলায় ৬৭, রংপুরের হারাগাছ থানায় ১৮৭ ও কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ৪৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে তারা।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ৭৬, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় ১৩৫, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় ১১৩, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৪৫, শেরপুরের নকলা উপজেলায় ৪০, শ্রীবরদী উপজেলায় ৩৯, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫১ ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ২০৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
২০ জানুয়ারি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় ৬১, নরসিংদীর শিবপুর থানায় ৯৪, রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ৮২, ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানায় ৮৫, আনোয়ারা থানায় ১৪৭, বাঁশখালী উপজেলায় ৩০৪, ১৮ জানুয়ারি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় ১১৩, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ১৪৩, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানায় ৫৪, ঢাকা মহানগরের শাহ আলী থানায় ৬৩, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ২১৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
১৭ জানুয়ারি বাগেরহাটের সদর উপজেলায় ১৫৪, রামপাল উপজেলায় ৯১, মোল্লাহাট উপজেলায় ৪৯, চিতলমারী উপজেলায় ৭৬, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ১৭৮, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১১৭ এবং ১৫ জানুয়ারি গাজীপুর সদর থানায় ৪৪৭ সদস্যের কমিটি করা হয়।
তারও আগে ১৩ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ৩৫, সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলায় ১১০, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় ১২৩, ঢাকা মহানগরের হাজারীবাগ থানায় ৯৮, সূত্রাপুর থানায় ৫১, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৩০ ও কুমিল্লার বাঙ্গরা বাজার থানায় ৩০০ সদস্যের কমিটি করা হয়।
১২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ৮৯, কক্সবাজারের রামু থানায় ১০৫, জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানায় ১৩৪ ও রংপুরের তাজহাট থানায় ২১০ সদস্যের এবং ১১ জানুয়ারি নরসিংদীর মাধবদী থানায় ৭৭, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২৯, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ১৮১ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ১২০ সদস্যের কমিটি করা হয়।
আগে ঘোষিত কয়েকটি কমিটিতেও নতুন সদস্য যুক্ত করা হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা কমিটি বর্ধিত করে আরও ৬৭ জন যুক্ত করা হয়। ২৭ জানুয়ারি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় কমিটি বর্ধিত করে আরও ১১৪ জনকে যুক্ত করা হয়। ২৮ জানুয়ারি কুমিল্লা সদর থানার প্রতিনিধি কমিটিতে আরও ২৯৬ জনকে যুক্ত করা হয়। ২৯ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কমিটিতে আরও ৪৪ জনকে যুক্ত করা হয়। ৩১ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কমিটিতে আরও ৮১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল য় প র উপজ ল য় সদর থ ন য় য ক ত কর কম ট ত র সদর
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’