উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের সুপারিশ
Published: 5th, February 2025 GMT
উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। উপজেলা পর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আজ বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে যেসব স্থানে চৌকি আদালত আছে, সেগুলো সচল রাখার প্রয়োজন আছে কি না বা সেগুলোর ভৌগোলিক এখতিয়ার পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, উপজেলা আদালতগুলোতে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে এবং তাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এখতিয়ার দিতে হবে। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, বিশেষত মধ্যস্থতা পদ্ধতি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে।
কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে আজ বুধবার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিতে একাধিকবার সময় বাড়ায়। অংশীজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে প্রায় চার মাস পর বিচার বিভাগের জন্য এ-সংক্রান্ত ‘৩০টি’ সংস্কার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সুপারিশে উপজেলা সদরে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ গঠনেরও কথা থাকছে তাদের প্রস্তাবে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিচার বিভাগ সংস্কারের খসড়া সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া হয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় ৩ অক্টোবর। এই কমিশন বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। এতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে হাই কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা, উপজেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের মতো সুপারিশ রয়েছে।
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে– প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ থাকবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন ও উপজেলা পর্যায়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি, চুক্তিতে বিচারক নিয়োগ, বাণিজ্যিক আদালত স্থাপন, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা বা জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব কিনা বলতে পারছি না।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমায় একে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।”
শুক্রবার (১ আগস্ট) এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শুল্ক হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্ক হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। এর মাধ্যমে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও সেটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, আলোচকরা এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিরলসভাবে কাজ করে জটিল আলোচনাকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে শুল্ক, অশুল্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তাবাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি ও আমাদের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ
কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, এ অর্জন কেবল বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না; বরং এটি বৃহত্তর সম্ভাবনা, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল, উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আজকের সাফল্য আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা ও আগামী দিনের আরো শক্তিশালী অর্থনীতির সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/রফিক