‘আমাক চিনো না, মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি’
Published: 5th, February 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খানের কণ্ঠসদৃশ কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের অডিওতে ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত উপজেলা শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা যায়। আজ বুধবার সকালে অডিওটি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ব্যবসায়ীর নাম মো.
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথোপকথনে চাঁদা দাবির বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অডিওটি যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।
ছড়িয়ে পড়া অডিওতে ছাত্রদল নেতার কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যদি মেল হও, তাহলে তুমি মদ্দা মানুষের মতো বুক ফুলিয়ে চলবা। যেদিক মন চাই, সেই দিক যাবা। তুমাক নিয়ে থানাত যামু, এসপি অফিস যামু, ডিবি অফিস যামু। ব্যাক (সব) মিলতাল করমু। তুমি সম্ভবত আমাক চিনো না। হয়তো আমার সম্পর্কে আইডিয়া নাই। মাদারগঞ্জের আন্ডারগ্রাউন্ডটা আমিই নিয়ন্ত্রণ করি।’
এ সময় ব্যবসায়ী ওই নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম? সাক্ষাতে কথা হবে। আর দুই (দুই লাখ টাকা) কালকে সকালবেলায় দিয়ে দিবা। শুনো, এখানে কোনো কথা হবে না, কোনো প্যাঁচাল হবে না, সাক্ষাতে এসে ডাইরেক্ট দিয়ে দিবা। তুমি তোমার সুবিধামতো জায়গায় থাকবা, আমাক ফোন দিবা। আমি যামু, সাক্ষাতে চা খামু, কথা কমু।’
এ সময় ব্যবসায়ী কথা বলতে উদ্যত হলে থামিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘শুনো, আর কোনো কথা বলবা না। তুমি তো বুঝছ, তোমাকে আমি কোনডা থেকে কী করবার পারছি? ৫০০ পোলাপানের মধ্য থেকে তোমাকে আমি কিন্তু ছোঁ মেরে নিয়ে এসে পড়ছি। তখন কেউ কথা কইবার পারছে?’ এ সময় ব্যবসায়ী বলেন, ‘তা ঠিক আছে। সেটা আমি স্বীকার করি।’ ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তাহলে? উনতি (ওখানে) কত বড় বড় নেতারা আছিল। আমার কাছে ওল্লের (ওদের)...টাইম নাই। শুনো, সাক্ষাতে কথা হবো, পরে চিনবা। বিভিন্ন জায়গা থেকে খোঁজ নিবা। আমি কিন্তু কারোরে হিসাব করি না, ওল্লের টাইম নাই। আমি আমার মতো চলি আগে থেকেই।’
এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আরেকটা কথা মনে রাইখ, দু-এক দিনের মধ্যে আরও একজনকে ফুল টাইম বিছানায় ফালায়ে দিমু। এটা মনে রেখো, দেখবা এবং শুনবাই।’ এ সময় ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইজান, কালকে আল্লাহ যদি বাঁচায়ে না রাখে, তাহলে তো সমস্যা। আমার এক জায়গায় পিটুনি দিছে। ভাই, কিডনির সাইডে।’ এরপর ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘চিকিৎসা করাবাম। ঢাকাত বড় চিকিৎসক আছে। একদম ফ্রি চিকিৎসা করাই দিমু। সমস্যা নাই।’
কথোপকথনের শেষের দিকে ব্যবসায়ীর উদ্দেশে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে এক. কথা সাক্ষাতে হবে, দুই. কালকে (চাঁদা) রেডি কইরা দিয়া দিবা। এর আগে আওয়ামী লীগের আমলে যা করছ, তা-তো করছই। এখন থেকে বেশি করে করবা। ঠিক আছে না, দুই ভাই...ভরে সবকিছু করমু। তাহলে কালকে ১০টা–১১টার দিকে ফোন দিয়ো। তোমাদের ওখানে সাইট আছে, আমি যামু, ফোন দিয়ো।’ শেষে ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘তুমি, আমি, আল্লাহ—তিনজনের বাইরে চারজন যেন এসব না জানে। না হলে কিন্তু একদম কাউন্টার অ্যাটাক হবে।’
জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারগঞ্জে গ্রুপিং রাজনীতি চলে। অডিওটি আমিও শুনেছি। ওই কণ্ঠ আমার না। গ্রুপিংয়ের কারণে ফেসবুকে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশারফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিওটি আমি কিছুক্ষণ আগেই পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর যদি ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ সময় ব যবস য় ছ ত রদল ন ত ব যবস য় র ছ ত রদল র ম দ রগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সারজিস আলমের চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন রাশেদ খান
সম্প্রতি নানা ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল রোববার এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সারজিস আলম।
পোস্টে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকাও স্পর্শ করিনি, অনৈতিক কোনো সুপারিশকে প্রশ্রয় দিইনি। এটা আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সঙ্গে নিজের কমিটমেন্ট।
সারজিস বলেন, কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপপ্রচার, মনগড়া তথ্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ চোখে পড়েছে। শুধু একটি ক্ষেত্রে কমেন্টে রিপ্লাই করেছি। বাকিগুলো এড়িয়ে গিয়েছি। যে অভিযোগগুলোর সঙ্গে দূর-দূরান্তেও আমি আমার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাইনি সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা কীভাবে সম্ভব? বরং পেছনে লেগে থাকা শত শত প্রপাগান্ডা মেশিনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দেওয়া শ্রেয় মনে করি। সর্বশেষ ৮-৯ মাসের এই অল্প সময়ে এত প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি যে এমন প্রপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই এখন ফেস করতে হবে এবং সামনের দিনে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
পোস্টের একটি অংশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে সবচেয়ে বেশি নোংরা মানসিকতা এবং বিবেকবোধহীন আচরণের পরিচয় দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়েও শুধু টিআরপি আর ফুটেজের আশায় প্রপাগান্ডা মেশিন হিসেবে মনগড়া আর সাপ্লাই পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে তিনি আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে নিয়ে তার ফেসবুকে লেখা অভিযোগগুলো তিনি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আর যদি না পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। গাটস থাকলে এই চ্যালেঞ্জটুকু তিনি গ্রহণ করুক।
সারজিস আলমের এমন কড়া পোস্টের একদিন পর আজ সোমবার জবাব দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে সারজিস আলম আমাকে কল করেন। ১ ঘণ্টার অধিক সময় মোবাইলে তার সঙ্গে কথোপকথন হয়। তিনি আমার কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বিস্তারিত আলাপ তুলে ধরতে হলে অনেক লেখা লাগবে। কথোপকথনের সারসংক্ষেপ হলো, আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছি। তিনি ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করেন ও আমাকে বলেন, আমি যেন তাকে নিয়ে একটা পজিটিভ পোস্ট করি। কিন্তু আমি করিনি, কারণ আমি যেসব বক্তব্য দিয়েছি, তার যথেষ্ট আলামত ও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
রাশেদ বলেন, প্রথমত, যুগান্তর পত্রিকায় ছাত্র সমন্বয়ক নামধারী গাজী সালাহউদ্দীন তানভীর সচিবালয়ে নিজেকে সারজিস ও হাসনাতের পরামর্শে আসার কথা স্বীকার করেন। যমুনা টিভির একটি ভিডিও আমাকে দেখান সারজিসের খুব কাছের একজন। তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, সারজিসের প্রভাব খাটিয়ে ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন তানভীর। আনসার ক্যুর দিন সারজিসের সঙ্গে তানভীর কেন সচিবালয়ে প্রবেশ করলেন এবং একসঙ্গে বের হলেন?
তিনি আরও বলেন, ডিসি নিয়োগের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তানভীর যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হয়েছেন, সেই তথ্যও কেউ জানতেন না। সেটিও আমি সারজিস আলমের ঘনিষ্ঠজন থেকে পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন সারজিস এনসিপিতে পদ দিতে রেফারেন্স করলেন? এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি সারজিসকে প্রশ্ন করি। তিনি আমাকে উত্তর দেন, শুধু কি আমি একাই রেফারেন্স করেছি, আর কেউ করেনি? কথোপকথনের সময় হাসনাতের নাম আসে। তখন তিনি বলেন, তাহলে কেন আপনি শুধু আমার নাম নেন? এনসিপি সূত্রমতে, গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরের সঙ্গে সারজিস ও হাসনাত দুজনেরই ঘনিষ্ঠতা আছে। যেটা সারজিসও স্বীকার করেছেন এবং তাদের দুজনের রেফারেন্সই ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তি এনসিপির মতো তরুণদের দলে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছে!
দ্বিতীয়ত, যখন এনসিটিবির কেলেঙ্কারি সামনে আসে, তখন রাখাল রাহাকে নিয়ে সারজিস পোস্ট করলেও গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। কেন গাজী সালাহউদ্দীন তানভীরকে এড়িয়ে গেলেন সারজিস? তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এজন্য? ডিসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে অভিযুক্ত থাকা ব্যক্তি পুনরায় কাদের সহযোগিতায় এনসিটিবিতে কাজ করার সুযোগ পেলেন?
তৃতীয়ত, তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে যেতেন, কারা কারা তার গাড়ির অপেক্ষায় থাকতেন, সেটি ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা করুন। চতুর্থত, যখন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি ফারুক হাসানের ওপর শহীদ মিনারে আহত লীগের সদস্যরা হামলা করেন, এদের জামিন করাতে সহযোগিতা করেন সারজিস আলম ও জুলাই ফাউন্ডেশনের স্নিগ্ধ। গ্রেপ্তারের ১১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পান তারা। এই জামিনের নেপথ্যেও ছিলেন সারজিস আলম।
এ ছাড়া গণমাধ্যমে সারজিসের বিষয়ে সেসব তথ্য এসেছে, আমি সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। এমনকি এনসিপির কয়েকজন নেতাও আমাকে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পুনর্বাসনের অভিযোগ (একজন সাংবাদিক প্রমাণসহ পোস্ট করেছেন) এবং বিভিন্ন সময় ডা. জারাসহ তাদের নেতাদের পোস্টের আলোকে মন্তব্য করেছি। সারজিসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব তার দল ও সরকারের। তার যদি চ্যালেঞ্জ করতে এতই মন চাইত, তবে সংবাদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। কিন্তু ৭ মাসেও তিনি সেই চ্যালেঞ্জ করেননি! অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন তিনি এত আশ্রয়-প্রশয় দেন? কার সহযোগিতায় তানভীর সচিবালয়ে ও এনসিটিবিতে ঢুকলেন? এসবের তদন্তে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন তদন্ত কমিটি গঠন করছে না? তাহলেই তো জানা যাবে, সারজিস আলম দোষী না নির্দোষ?