কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের সাংবাদিক দম্পতি কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার। ৩১ বছরের সংসারের পাশাপাশি দু’জনেই পেশাগত কাজে ব্যস্ত। পাঁচ ছেলেমেয়ের একজন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, বাকিরা পড়ছেন। এর মধ্যে এ দম্পতির দারুণ এক সাফল্য আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে তাদের পরিবার, স্বজন ও পরিচিতজনদের। তারা দু’জনেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.
কাইসার হামিদের বয়স এখন ৫১ বছর এবং রোকেয়া আক্তারের ৪৪ বছর। হামিদ প্রায় ৩২ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকের উপজেলা প্রতিনিধি তিনি। রোকেয়াও কয়েক বছর ধরে আরেকটি দৈনিকের উপজেলা প্রতিনিধি।
তারা দু’জনেই এ বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন। দু’জনেরই ফল জিপিএ-৪.১১। তারা ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।
হামিদ-রোকেয়া দম্পতির ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে। বড় মেয়ে নাসরিন সুলতানা স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিন সুলতানা স্নাতক শেষবর্ষের ছাত্রী। তৃতীয় সন্তান মায়মুনা সুলতানা প্রীতি নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা পড়ছেন। ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন ইয়াসিন নবম এবং আব্দুল্লাহ ফাহিম তাসীন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
এত বছর পর কেন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করলেন– এমন প্রশ্নের জবাবে কাইসার হামিদ বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। কিন্তু লেখাপড়াটা করা হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া তিনি ৩২ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন, সম্মান পেলেও মাঝেমধ্যেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা শুনতে হয়। তাঁর স্ত্রীরও নেই কোনো শিক্ষাসনদ। এক ধরনের গ্লানিবোধ থেকে তারা লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসএসস
এছাড়াও পড়ুন:
মোবাইলে আসক্তি, বিয়ে, পড়াশোনায় অনীহা: পাস করেনি কেউ
২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলের নথি এবং শিক্ষা অফিস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
শতভাগ অকৃতকার্য এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ৪টি দাখিল মাদ্রাসা এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী দাখিল মাদরাসা, মুসলিমপুর দাখিল মাদরাসা, কুড়ালীপাড়া নাসরুল উলুম সিদ্দীকিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, ডাবরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া দাখিল মাদরাসা।
জানা গেছে, এবার এসএসসি এবং দাখিল পরীক্ষায় দুই উপজেলার শতভাগ অকৃতকার্য এই ৫ প্রতিষ্ঠানে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৪ জন। এর মধ্যে ময়দানদিঘী দাখিল মাদ্রাসায় ২৪ জন, মুসলিমপুর দাখিল মাদ্রাসায় ১০ জন, কুড়ালিপাড়া নাসরুল উলুম সিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসায় ৪ জন, ডাবরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ জন এবং তেঁতুলিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ১৬ জন।
এদিকে, এমন ফলাফলে জেলার শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও পাঠদানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন ভিন্ন কথা।
ময়দানদিঘী দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মুসলিমুর রহমান বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা নিয়মিত মাদরাসায় আসে নাই। তারা শুধু পরীক্ষার সময় আসে পরীক্ষা দিতে। আমি অভিভাবকদের বলেছি ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো মাদরাসায় পাঠাতে। তারা ফরম ফিলাপও করতে চায় না, আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে জোর করে ফরম ফিলাপ করিয়েছি।’’
ডাবর ভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের বক্তব্য, ‘‘এবারের ব্যাচটা একটু খারাপ ছিল। এজন্য এই অবস্থা।’’
‘‘ছাত্ররা ঠিকমতো বাড়িতে বই পড়ে না। সবসময় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর সাইকেল নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। পড়ালেখা ঠিকমত না করার কারণে সবাই ফেল করেছে,’’ বলেন মুসলিমপুর দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মকবুল হোসেন।
নাসরুল উলুম সিদ্দীকিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট নুরনবী বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিও ভুক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা কোনো রকম মাদরাসাটি ধরে আছি। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আসে না। অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে ফেল করেছে।’’
এ প্রসঙ্গে বোদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আইবুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে দেখব কী কারণে শিক্ষার্থীরা ফেল করলো। আমরা এটি উদঘাটন করে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ সকলকে বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করব।’’
এ দিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করে নাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী।
ঢাকা/নাঈম//