সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
Published: 12th, July 2025 GMT
জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে গেছে খণ্ডকালীন মেয়াদে। তাদের কাছ থেকে এখন পারফরম্যান্স বুঝে নেওয়ার পালা। এ কাজটি করতে গিয়ে হিসাব মেলাতে পারছেন না বিসিবি কর্তারা। ফিল সিমন্স ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের অধীনে জাতীয় দলের এতটা বাজে ক্রিকেট খেলার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না পরিচালকরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচে চারজন ওপেনার খেলানোর সিদ্ধান্তের রহস্যের জট খুলতে পারছেন না তারা। বিসিবি কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন না কার সিদ্ধান্তে পরিচালিত হচ্ছে দল। এসব উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে গোলকধাঁধায় পড়ে গেছেন তারা।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ জমা পড়েছে। একাদশ নির্বাচন ও ক্রিকেটারদের রোল ঠিক করে দেওয়ায় তাঁর ভূমিকা বেশি থাকে বলে গুঞ্জন। ঢাকা থেকে একজন পরিচালক জানান, সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের মতো গুরুতর অভিযোগও ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পেয়েছেন তারা। যদিও ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম কোচিং স্টাফের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। বিসিবির বাইরে জোর গুঞ্জন আছে, সালাউদ্দিনের কথায় জাতীয় দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রধান কোচ ফিল সিমন্স অনেকটা উপদেষ্টা কোচের ভূমিকা পালন করছেন।
অনুশীলন ও ম্যাচ চলাকালে সালাউদ্দিনের তৎপরতা দেখে অনেকে বিষয়টি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। নির্বাচক প্যানেলের দেওয়া ১৬ জন এবংএকাদশ নির্বাচনে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন বলেও বোর্ডের কাছে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সালাউদ্দিনকে গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সফরে জাতীয় দলের ব্যর্থতায় সালাউদ্দিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিষয়টি মানতে নারাজ নাজমুল আবেদীন। তিনি গতকাল ঢাকা থেকে ফোনে সমকালকে বলেন, ‘প্রধান কোচের ভূমিকা কম থাকার কারণ নেই। একাদশ নির্বাচন করেন প্রধান কোচ এবং অধিনায়ক। নির্বাচকের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, আমি মনে করি না তা সঠিক। তেমন কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। প্রধান কোচই দল পরিচালনার সব সিদ্ধান্ত নেন। বাকি কোচিং স্টাফরা সমন্বয় করে প্রধান কোচকে সহযোগিতা করেন।’
ফাহিম জানান, টিম ম্যানেজমেন্টকে বোর্ড থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচকরাও তাদের কাজ করেন স্বাধীনভাবে। জাতীয় দলে পছন্দের ক্রিকেটার নেওয়ার ক্ষেত্রে সহকারী কোচের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। একাদশ নির্বাচনে কোচ এবং অধিনায়কের সিদ্ধান্তই শেষ কথা বলে জানান তিনি।
টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে চারজন ওপেনার খেলানোর সিদ্ধান্তে সালাউদ্দিনের ভূমিকা ছিল না। শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে থাকা প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘আমার পর্যবেক্ষণ হলো- প্রধান কোচ প্রথম দিকে সালাউদ্দিনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালো জানতেন না বলে। আস্তে আস্তে সেটা কমে এসেছে।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে নিক পোথাস যে রোল পালন করতেন সালাউদ্দিনের সেই রোল। কোচের নির্দেশনা নিয়ে কে কখন ব্যাট করবে, বল করবে, সেগুলো দেখেন। বিদেশে দলের সঙ্গে থাকার ফলে আমি দেখেছি- কাজের ক্ষেত্রে কোচ সালাউদ্দিনের ওপর নির্ভর করলেও একাদশ নির্বাচনে ভূমিকা নেই। বরং সিমন্স সব কোচের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন। একাদশ নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই হয়।’
দলের ভেতরে সালাউদ্দিনের প্রভাব না থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার কারণ কী? বাস্তবতা যেটাই হোক সহকারী কোচের পায়ের নিচের মাটি নরম হচ্ছে বলে মনে করেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্ত হলে সালাউদ্দিনের চুক্তি বাতিল করা হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চেনাব বাঁধ দিতে ৩ হাজার কোটি রুপি ঋণ চায় ভারত
নদীর পানিবণ্টনের লড়াই তীব্রতর করে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে সিন্ধু উপত্যকার চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর ওপর বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত। সে জন্য ৩ হাজার ১১৯ কোটি রুপি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে তারা।
এই বাঁধ ও সে জন্য জলাধার নির্মাণ হবে একেবারে নতুন (গ্রিনফিল্ড স্টোরেজ)। এই বাঁধ ও জলাধার তৈরি হয়ে গেলে সেখান থেকে ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন–নিউজ ১৮ এই খবর জানিয়ে বলেছে, নির্মীয়মান এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৪ হাজার ৫২৬ কোটি রুপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন।
সূত্রের বরাতে এই খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থার কাছে এই ঋণের বিষয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। যদিও একাংশ বিশ্বব্যাংক থেকে এই ঋণসহায়তা পেতে আগ্রহী। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতাতেই ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
জম্মু–কাশ্মীরের কিসতোয়ার জেলায় চন্দ্রভাগা নদীর ওপর এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে তা পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এত দিন ধরে এই প্রকল্প রূপায়ণে তেমন একটা উদ্যোগ দেখা যায়নি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বার্থে চন্দ্রভাগার গতিপথ পরিবর্তনের কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালে। এ জন্য ৬০৯ মিটার দীর্ঘ টানেল বা সুড়ঙ্গ তৈরি হবে। বাঁধের উচ্চতা হবে ১০৯ মিটার।
সরকার এখন চাইছে ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতে। কিসতোয়ার জেলার এই বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে জম্মু–কাশ্মীরের শিল্প সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের ঘাটতিও মিটবে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর পাকিস্তানের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি হয়ে আসছে। চুক্তি স্থগিত রেখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে ‘পানি যুদ্ধ’ শুরু করেছে, নতুন এই বাঁধ প্রকল্প তা ত্বরান্বিত করবে।
উজানে বৃহৎ জলাধার তৈরি না হলে ভাটি এলাকায় পানিপ্রবাহ কমানো সম্ভবপর নয়। মনে করা হচ্ছে, চন্দ্রভাগায় এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, ভারত সিন্ধু অববাহিকায় উন্নয়নমূলক যা কিছু করতে পারে, এত দিন ধরে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। পেহেলগাম–কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার পর চুক্তির আওতায় থেকে সেই কাজগুলো করার আগ্রহ ভারত দেখাতে শুরু করেছে। এই প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান কী, তা এখনো অজানা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াও এখনো জানা যায়নি।
সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু অববাহিকার মোট ছয়টি নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছিল। পূর্ব দিকের তিন নদী বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রবি) ও শতদ্রুর (সতলেজ) পানির ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ ভারতের। পশ্চিম দিকের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম (বিতস্তা) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) সিংহভাগ পানি পাওয়ার কথা পাকিস্তানের। মোট পানির ২০ শতাংশের ওপর রয়েছে ভারতের অধিকার ও ৮০ শতাংশের ওপর পাকিস্তানের অধিকার।
পশ্চিমের তিন নদীর পানির ওপর ভারতের অধিকার না থাকলেও চুক্তিতে বলা হয়েছিল, তা থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকার থাকবে। সেচের কাজেও ওই নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারবে ভারত। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন না করে ভারত চন্দ্রভাগায় এই বাঁধ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক অনুমোদন পায় কি না।