ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা।

এবার গাজা ভূখণ্ডে বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তর গাজার ওই বালির ঢিবিটি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল। 

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্মিত বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করেছে বলে সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আনাদোলুকে বলেছেন, ইসরায়েলের বুলডোজিং অভিযানের কারণে গাজা শহর এবং উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা বালির ঢিবির নিচে ফিলিস্তিনিদের কবর দিয়েছিল তারা (ইসরায়েলি বাহিনী)।

গাজার এই বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ঝোড়ো আবহাওয়া গাজাজুড়ে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের কয়েক ডজন তাঁবু উড়িয়ে নিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি অন্যান্য আরও অনেক তাঁবুকে প্লাবিত করেছে।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের থাকার জন্য গাজায় জরুরিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন যাদের বাড়ি ইসরায়েলি অভিযানে ধ্বংস হয়ে গেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

নদী খননে বাসিন্দাদের কেউ দিয়েছেন ৫০০, কেউ ১০০ টাকা

কোথাও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদী। কোথাও অবৈধ বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ। এমন অবস্থা লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদীর। প্রায় ২০ বছর ধরে অনেকটা মৃতপ্রায় এ নদীর খনন চলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থায়নে। বাসিন্দাদের কেউ ১০০, কেউ আবার ৫০০ টাকা করে দিয়েছেন নদীটির খননে।

গত ২৪ জুলাই ভুলুয়া নদীর বাঁধ অপসারণ ও খনন শুরু হয়। রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদনগর স্টিল ব্রিজ এলাকা থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে সেখান থেকে কোডেক বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার নদী খননের কাজ চলছে। নদীর এ অংশে সবচেয়ে বেশি পলি জমে রয়েছে এবং বাঁধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত নদী খনন হয়েছে দুই কিলোমিটারের মতো। পর্যায়ক্রমে ৭৬ কিলোমিটার ভুলুয়া নদীর পুরোটা খননের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

খনন কাজের যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁদের একজন কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল্লাহ খালেদ। তিনি বলেন, ‘শুধু অভিযোগ করে বসে না থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজেরাই কাজ শুরু করব। এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ১০০, কেউ ৫০০, কেউ ১০০০ টাকা করে নদী খননের জন্য দিচ্ছেন। কেউ আবার নদী খননের কাজে শ্রম দিচ্ছেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে।

নুরুল্লাহ খালেদ আরও বলেন, ‘ভুলুয়াকে আমরা আবার জীবিত দেখতে চাই। প্রশাসনের সহায়তা পেলে আরও ভালোভাবে কাজটি এগিয়ে নিতে পারব। আমরা চাই, সরকার আমাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করুক। অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দিয়ে নদীর গতি ফিরিয়ে দিক।’

দিনমজুরের কাজ করেন কমলনগরের চর কাদিরা গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিন। নদী খননের কাজে তিনিও ১০০ টাকা দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী বাঁচলে এলাকার উপকার হবে, তিনিও উপকৃত হবেন। এতে জলাবদ্ধতা যেমন কমবে, চাষাবাদ করা যাবে, মাছও মিলবে। তাই যতটুকু পেরেছেন, সহযোগিতা করেছেন।

চর মার্টিন এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীটি খননের উদ্যোগ না নিয়ে বসে থাকলে হয়তো একসময় এটিকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। তাই আমরা নিজেরাই খনন শুরু করেছি। এলাকার সবাই মিলে যতটুকু পারি করব।’

শুধু অভিযোগ করে বসে না থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজেরাই কাজ শুরু করব। এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। কেউ ১০০, কেউ ৫০০, কেউ ১০০০ টাকা করে নদী খননের জন্য দিচ্ছেন। কেউ আবার নদী খননের কাজে শ্রম দিচ্ছেন।নুরুল্লাহ খালেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে।

নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়া ও বাঁধ দেওয়ার কারণে এলাকায় পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এতে গত বছরের আগস্ট মাসে লক্ষ্মীপুরে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেঘনা নদী অনেক বেশি পলি বহন করে, সে পলিতে ভুলুয়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া অসংখ্য স্থানে দখল, স্থাপনা নির্মাণ তো আছেই। যার কারণে আমরা গত বছর লক্ষ্মীপুরে জলাবদ্ধতা দেখেছি। ভুলুয়া নদীর দখল ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে কার্যক্রম শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নদী খননে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা চেষ্টা করব প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগটিকে আরও কার্যকর ও টেকসই করতে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ