‘পাহাড়ের মানুষ এখন আতঙ্কে বসবাস করছে’
Published: 3rd, October 2025 GMT
শুধু পাহাড়ে নয়, সমতলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। পাহাড়ে এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হলো। একজন গ্রেপ্তার হলেও বিচার কতটুকু এগিয়েছে, কেউ জানে না। বিচার চাইতে যারা রাজপথে নামল, তাদের ওপর উল্টো হামলা হলো। আগুন দিল, প্রাণ গেল। পাহাড়ের মানুষ এখন আতঙ্কে বসবাস করছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী মোড়ে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন উপস্থিত বক্তারা। খাগড়াছড়ি গুইমারায় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে আগুন, হামলা ও তিনজনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ সমাবেশ করে ‘সচেতন ছাত্র-যুব-নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে যোগ দেন সহিংসতার সময় নিহত আথুই মারমার (২১) স্ত্রী নুনু মারমা। তিনি বলেন, ‘আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’ এইটুকু বলে কথা থেমে যায় তাঁর। ভেঙে পড়েন কান্নায়। পরে সমাবেশের অন্যরা তাঁকে সামলে নেন।
পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সেদিন গুইমারার রামেসু বাজারে গুলিতে তিনজন নিহত হয়। তাঁদের একজন গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের আথুই মারমা। বাকি দুজন হলেন হাফছড়ি ইউনিয়নের আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামেসু বাজার এলাকার থৈইচিং মারমা (২২)।
সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও নেতা-কর্মীরা বিচারের দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা নানা স্লোগান দেন—‘রামসু বাজারে আগুন কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’; ‘আমরা ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই; ‘পাহাড় নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, জবাব চাই’।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে মানুষ দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে নিপীড়ন সয়ে যাচ্ছে। তারা হাটে-বাজারে গেলে তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে। আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ধর্ষণের বিচার চাইতে যারা রাস্তায় নামল, তাদের ওপর গুলি চালানো হলো। তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, পুড়িয়ে দেওয়া হলো দোকানপাট। এ ঘটনাগুলো যারা তদন্ত করতে গেছে, তাদের চাপে রাখা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির বলেন, ‘এর আগে তনুর ঘটনাও (২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার) মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায়ও একই জিনিস দেখা গেল। ধর্ষকেরা প্রভাবশালী হলে, একটি নির্দিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হলে; তাদের বিচার আর হচ্ছে না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি উপামোহন ত্রিপুরা, সাবেক সহসভাপতি জয় রঞ্জন ত্রিপুরা, মারমা যুব সমাজের প্রতিনিধি থুইসাজাই মারমা, পার্বত্য জনতা মুক্তি মোর্চার সংগঠক তিতাস চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি রিপা মজুমদার প্রমুখ।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। পরদিন সে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। এদিকে ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে কিশোরীর বাবা।
অবরোধের মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে গুইমারা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। মামলা করা হয়েছে হত্যা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মচারীদের আহত করা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি হননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
নেত্রকোনায় সাংবাদিক লুৎফুজ্জামান আলিফের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা প্রেসক্লাবের সামনে নেত্রকোনা সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি জাহিদ হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, জেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক নাজমুস শাহাদৎ, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের জেলা কমিটির সভাপতি পারভেজ, হামলার শিকার লুৎফুজ্জামান আলিফ প্রমুখ।
লুৎফুজ্জামান আলিফ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রূপসী বাংলার নেত্রকোনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর দুপুরে লুৎফুজ্জামান আলিফ ও তাঁর সহকর্মী শাহজাহান শেখ জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে একটি ভাড়া মোটরসাইকেলে নদীর তেরিবাজার ঘাটে নামেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন ব্যক্তি সেখানে যান। তাঁদের মধ্যে দুজন চাপাতি হাতে লুৎফুজ্জামানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। সঙ্গে থাকা শাহজাহান শেখ বাধা দিতে গেলে তাঁকেও কোপানোর চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন লুৎফুজ্জামানকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি পরে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গতকাল বাড়ি ফেরেন।
এ ঘটনায় লুৎফুজ্জামান বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় মামলা করেছেন। এতে দুর্গাপুর পৌরশহরের পশ্চিম মোক্তারপাড়া এলাকার ইমরান ইসলাম ওরফে ইমন (২৩) ও পুলিশ মোড় এলাকার মো. সৌরভের (২৩) নামোল্লেখ করে এবং আরও চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।